আরবি শব্দ ‘মহররম’-এর আভিধানিক অর্থ হলো মর্যাদাপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ ইত্যাদি। যেহেতু অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য ও রহস্যময় তাৎপর্য নিহিত আছে এ মাসকে ঘিরে, তার সঙ্গে এ মাসে সুপ্রাচীনকাল থেকেই যুদ্ধ-বিগ্রহ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ছিল এসব কারণেই এ মাসটি ফজিলতপূর্ণ। অন্যদিকে মহান আল্লাহতায়ালা হিজরি সনের যে চারটি মাসকে সম্মানিত করেছেন তা হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও সফর। সম্মানিত এ চারটি মাসের মধ্যে মহররম অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও বরকতময় মাস; যে মাসকে আইয়্যামে জাহিলিয়াতের যুগের আরব্য বেদুইনরাও বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখত। আবার হিজরি সনের প্রথম মাসও মহররম। হাদিস শরিফে চন্দ্রবর্ষের বারো মাসের মধ্যে মহররমকে ‘শাহুল হারাম’ বা ‘শাহুল্লাহ’ (আল্লাহ মাস) বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সূত্রপাত হয় এ মাসকে ঘিরে। শুধু উম্মতে মোহাম্মদিই নয় বরং পূর্ববর্তী অনেক উম্মত ও নবীদের অবিস্মরণীয় ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল এই মাসে।
ইসলামের সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখার জন্য তার আত্মত্যাগ ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য ত্যাগের মহিমা মুসলিম উম্মাহ্র এক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। জুলুমণ্ডঅবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং অসত্য ও অন্যায় প্রতিরোধে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর এ ভূমিকায় মানবজীবনের জন্য বিরাট একটি শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।
ইসলামের ইতিহাসে কারবালার এই শোকাবহ ঘটনার আগেও এ দিনে নানা তাৎপর্যময় ঘটনা ঘটেছে। পাষ- ইয়াজিদ বাহিনীর সৈন্যদের হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পরিবার-পরিজন, সঙ্গী-সাথিসহ হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদতবরণের এ মর্মান্তিক ঘটনা ছাড়াও এই দিনে পৃথিবীতে অনেক ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে বলে হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে। ইসলামের ইতিহাসে ১০ মহররম তারিখটির নানা গুরুত্ব ও তাৎপর্য থাকলেও কারবালায় ঘটে যাওয়া সর্বশেষ মর্মান্তিক ঘটনার স্মরণেই বর্তমান দুনিয়ার মুসলমানরা দিনটি পালন করে থাকেন।
মহররমের শিক্ষা হলো অন্যায়-দুরাচারের বিরুদ্ধে আদর্শিক সংগ্রাম পরিচালনা করার শিক্ষা। জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের অকুতোভয় লড়াইয়ের সাহস সঞ্চার করার শিক্ষা।