ঢাকা বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মোসাদ অফিস ও বৃহত্তম তেল শোধনাগারে আঘাত

মোসাদ অফিস ও বৃহত্তম তেল শোধনাগারে আঘাত

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হামলার পর তেহরান জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলি মাটিতে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এবং তীব্র ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমন সময় ইরান এই হুঁশিয়ারি দিল, যখন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যা করলে শত্রুতা বাড়বে না, বরং সংঘাতের অবসান ঘটবে।’ ইসরায়েলের একনিষ্ঠ বন্ধু, যার নিঃশর্ত সমর্থনে ইসরায়েল ইরানে হামলা চালাচ্ছে বলে বারবার বলে আসছেন ইরানি কর্মকর্তারা, সেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিকমাধ্যমে এক স্ট্যাটাসে ইরানিদের তেহরান ছাড়ার হুমকি দিয়ে বলেছেন, ইরানের কাছে পরমাণু অস্ত্র থাকতে পারে না। এই অবস্থায় গত সোমবার দিবাগত রাতে তেলআবিব ও হাইফা শহরে আবার আঘাত হেনেছে ইরান। ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কাজ করছে জানিয়ে রয়টার্স এসময় জানায়, তেলআবিবের আকাশে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলে বিমান হামলার সাইরেন বাজছে। এই হামলায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা জানায়নি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোর ভাষ্য, সোমবার দিবাগত রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে দুই দফা মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান। নতুন হামলা সম্পর্কে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর মুখপাত্র রাতে জানান, ‘অপারেশন ট্রু প্রোমিজ-থ্রির নবম ধাপের হামলা কিছুক্ষণ আগে শুরু হয়েছে। এতে ব্যবহার করা হয়েছে মিসাইল ও ড্রোন। যা মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ইহুদিবাদীদের শান্তিতে ঘুমাতে দেব না।’ ইরানের মেহের নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের হাইফা ও তেলআবিব শহর লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এসময় লাখ লাখ ইহুদি বসতি স্থাপনকারী ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করছিলেন। এদিকে, ইসরায়েলের আরও একটি এফ-থার্টিফাইভ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে ইরান। ইরানের নুর নিউজ জানিয়েছে, ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী তাবরিজ শহরে এই যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করে।

পুরোপুরি বিধ্বস্ত ইসরায়েলের বৃহৎ তেল শোধনাগার : ইরানের মিসাইল হামলায় পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ইসরায়েলের বৃহৎ তেল শোধনাগার। সোমবার রাতে সেখানে মিসাইল ছোড়ে ইরান। এই তেল শোধনাগার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বাজান গ্রুপ গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইরানের মিসাইল হামলার কারণে তাদের সব অবকাঠামো বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া শোধনাগারে মিসাইলের আঘাতে তিনজন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে বাজান। বিবৃতিতে গ্রুপটি বলেছে, শোধনাগারের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শোধনাগার এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য কোম্পানিগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা এখন বিদ্যুৎ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। হাইফা উপকূলে অবস্থিত এ শোধনাগারে এর আগে লেবাননের প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ হামলার হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু তারা হামলা চালাননি। এছাড়া এটি কখনও এমন সরাসরি হামলার শিকার হয়নি। তবে এবার ইরানের মিসাইলে বিধ্বস্ত হয়েছে শোধনাগারটি।

ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দাকেন্দ্র ও মোসাদের পরিকল্পনাকেন্দ্রে হামলা : ইরানের অভিজাত ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর বা আইআরজিসি বলেছে, তারা ইসরায়েলে একটি সামরিক গোয়েন্দাকেন্দ্র ও মোসাদের একটি অপারেশন পরিকল্পনাকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। ইরানের আধা সরকারি তাসনিম নিউজ এজেন্সিতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে আইআরজিসি। এর আগে ইসরায়েলি গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলের শহর হার্জলিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। উপকূলীয় শহরটিতে অবস্থিত একটি ‘স্পর্শকাতর’ স্থান নিশানা করা এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। ‘স্পর্শকাতর’ স্থান বলতে সাধারণত কোনো সামরিক বা কৌশলগত স্থানের ইঙ্গিত দেওয়া হয়।

তেহরান ও নাতানজে ইসরায়েলের হামলা : গেত সামবার রাতে হামলা হয়েছে ইরানের রাজধানীতেও। বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে তেহরানের পূর্ব পাশে। এছাড়া মধ্য ইরানের নাতানজেও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়। সেখানে দেশটির অন্যতম বড় পরমাণু কেন্দ্র অবস্থিত। গত শুক্রবার ইরান এখানে হামলা চালিয়েছিল। ইরানে এ পর্যন্ত ২২০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৭০ জন নারী ও শিশু। ইরানের হামলায় ২৪ জনের বেশি ইসরায়েলি নিহত হন বলে স্বীকার করেছে ইসরায়েল; আহত তিন শতাধিক। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বহু মানুষের। তবে, হতাহত ইসরায়েলিদের আসল সংখ্যা অনেক বেশি বলে জানিয়েছে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম। ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তেলআবিব, জেরুজালেম, হাইফাসহ বিভিন্ন স্থান ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে বহু রাজনৈতিক নেতা, সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীর বাসভবন। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাইফার তেল শোধনাগার ও বিদ্যুৎ স্থাপনা, রাফায়েলের অস্ত্র তৈরির কারখানা, কয়েকটি বিমানঘাঁটি ও ইসরায়েলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর। বস্তুত, মাটির নিচের আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে প্রাণ রক্ষা করার চেষ্টা করছেন কয়েক মিলিয়ন ইসরায়েলি। ইসরায়েলকে এখন চেনার উপায় নেই। আকাশছোঁয়া অহংকার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাসাদগুলো এখন যেন দুর্ভিক্ষের কাঙাল। হাড়গুলো পর্যন্ত গোনা যাচ্ছে। চোখের পলকে উড়ে গেছে ক’দিন আগের সেই ‘পাঁচতারা’ জৌলুশ। মুখ থুবড়ে পড়েছে সুরম্য ভবনগুলো। ঠিক যেন গাজার মতো- ধ্বংসাবশেষের উপত্যকা। চোখ খুললেই বিধ্বস্ত জনপদ।

ইসরায়েলি হামলার নিন্দায় ২১ মুসলিম দেশ : ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে মিসরসহ ২১টি মুসলিম দেশ। পাশাপাশি উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানিয়েছে দেশগুলো। সোমবার এক খোলা চিঠিতে এই আহ্বান জানানো হয়। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো হলো- মিসর, সৌদি আরব, পাকিস্তান, কাতার, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, আলজেরিয়া, বাহরাইন, ওমান, ব্রুনেই, শাদ, কোমরোস, জিবুতি, গাম্বিয়া, লিবিয়া, মৌরিতানিয়া, সুদান ও সোমালিয়া। চিঠিতে বলা হয়েছে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যে সংঘাত শুরু হয়েছে, তা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে এবং এখনই জরুরিভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। এতে বলা হয়েছে, তারা চান, মধ্যপ্রাচ্য যেন পরমাণু অস্ত্রমুক্ত থাকে এবং এই অঞ্চলের সব রাষ্ট্র যেন জাতিসংঘের পরমাণু প্রকল্পবিষয়ক চুক্তি এনপিটিতে স্বাক্ষর করে। সংঘাত শুরুর পর প্রথমবারের মতো ইসরায়েলি হামলার নিন্দা এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একসঙ্গে বিবৃতি দিল এসব মুসলিম দেশ।

মধ্যস্থতার আগ্রহ পুতিন-এরদোয়ানের : গত পাঁচ দিন ধরে যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে, তা বন্ধে মধ্যস্থতা করার আগ্রহ দেখিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। দুজনই আলাদাভাবে জানিয়েছেন, সংঘাত বন্ধের লক্ষ্যে তারা মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত রয়েছেন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, সংঘাত নিরসনের জন্য রাশিয়ার আগের প্রস্তাব এখনও বহাল রয়েছে। যদিও পরিস্থিতি এখন আরও জটিল হয়ে পড়েছে। সমস্যা সমাধানে রাশিয়া বিবাদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলেও জানিয়েছে ক্রেমলিন। এদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, এরদোয়ান সোমবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। সংঘাতের অবসান ঘটাতে তুরস্ক মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনে প্রস্তুত বলে ইরানকে জানিয়েছেন এরদোয়ান। সোমবার এক ফোনালাপেও পুতিন এবং এরদোয়ান এই সংঘাত তাৎক্ষণিকভাবে থামানোর আহ্বান জানান। বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতারাও সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে তেহরান ও তেলআবিবের মধ্যে চলমান সংঘাত অবসানের দৃঢ় আহ্বান জানিয়েছেন।

নাগরিকদের ইসরায়েল ছাড়তে বলল চীন : ইসরায়েলে অবস্থিত চীনা দূতাবাস তাদের নাগরিকদের ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ ইসরায়েল ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার চীনা দূতাবাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইচ্যাটে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসরায়েলে অবস্থিত চীনা মিশন চীনা নাগরিকদের তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার পূর্বশর্তের ভিত্তিতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্থল সীমান্ত দিয়ে দেশ ত্যাগ করার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নাগরিকদের জর্ডানের দিকে যাত্রা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’ বেইজিংয়ের দূতাবাস বলেছে, ‘সংঘাত ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক বেসামরিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়ে উঠছে।’ খবরে বলা হয়, এই সংঘাতে ইরানের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছে চীন ও রাশিয়া। ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত দেশ দুটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার নিন্দা জানিয়েছে। একইসঙ্গে অবিলম্বে উত্তেজনা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বেইজিং ও মস্কো সতর্ক করেছে, এর বৈশ্বিক পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।

তেহরানে মোসাদের ড্রোন কারখানা ধ্বংস : ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনা সোমবার জানিয়েছে, রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একটি ড্রোন তৈরির কারখানা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, তেহরান ও আলবোর্জ প্রদেশজুড়ে চালানো অভিযানে মোসাদের হয়ে কাজ করা সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে ইরানি নিরাপত্তা বাহিনী। এসময় আটককৃতদের কাছ থেকে ২০০ কেজিরও বেশি বিস্ফোরক, ২৩টি ড্রোনের যন্ত্রাংশ, লঞ্চার ও অন্যান্য কারিগরি সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। অভিযানে ব্যবহৃত একটি ট্রাকও জব্দ করা হয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। ইরানি কর্মকর্তারা বলছেন, মোসাদ দেশের অভ্যন্তরে নানা ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করছিল। এর মধ্যে ছোট আকারের বিস্ফোরকবাহী ড্রোন ব্যবহার করে কৌশলগত স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনাও ছিল।

ইরানে সরকার পরিবর্তনের বিপক্ষে ম্যাক্রোঁ : বলপ্রয়োগ করে তেহরানে সরকার পরিবর্তন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি বলেছেন, তেহরানে সরকার উৎখাতের চেষ্টা হবে একটি কৌশলগত ভুল। সোমবার কানাডায় জি-সেভেন সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, যারা মনে করেন, বাইরে থেকে বোমা ফেলে কোনো দেশকে জোর করে উদ্ধার করা যায়, তারা বরাবরই ভুল করে এসেছেন। ইরান ও ইসরায়েল উভয়কে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা বন্ধের আহ্বান জানান তিনি। সাংবাদিকদের সঙ্গে ম্যাক্রোঁর কথা বলার সময় খবর আসে, মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকট সামাল দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জি-সেভেন সম্মেলন থেকে আগেভাগে বেরিয়ে যাচ্ছেন। ট্রাম্পের আগেভাগে সম্মেলন ত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে ম্যাক্রোঁ বলেন, ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন এমন একটি পর্যায়ে আছে, যেখান থেকে আরও বিস্তৃত পরিসরের আলোচনা শুরু হতে পারে। তিনি মনে করেন, এটা ভালো একটি দিক। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থা করতে পারে, তবে সেটা খুব ভালো একটি বিষয়। ফ্রান্স তা সমর্থন করবে।

ইরানের বিরুদ্ধে অভিযান চান না অনেক মার্কিন আইনপ্রণেতা : ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে যাত্রা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস নিমিটজ। জাহাজের গতিপথ শনাক্তকারী ওয়েবসাইট মেরিন ট্রাফিকের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় সোমবার সকালে দক্ষিণ চীন সাগর ত্যাগ করে পশ্চিমদিকে যাত্রা করেছে মার্কিন এই রণতরী। তবে, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছেন ডেমোক্র্যাট দলীয় মার্কিন কংগ্রেস সদস্য রো খান্না। এর মধ্য দিয়ে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর ব্যাপারে সতর্কতা জানানো আইনপ্রণেতার তালিকায় যুক্ত হলেন তিনিও। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ক্যালিফোর্নিয়ার ১৭তম কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্টের সদস্য রো খান্না সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় জানান, ইসরায়েল-ইরান সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িত হওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবে সমর্থন দেবেন তিনি। এর আগে ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধি আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ এবং স্বাধীন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সসহ বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত হওয়ার বিরোধিতা করেন।

আইআরজিসির শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের : ইরানের অভিজাত বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসির খাতাম আল-আনবিয়া সদর দপ্তরের প্রধান আলী সাদমানিকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। খাতাম আল-আনিবিয়া আইআরজিসির নির্মাণ ও প্রকৌশল শাখা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, সাদমানি ইরানের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডার এবং সর্বোচ্চ নেতা ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অন্যতম ঘনিষ্ঠজন। এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ইরানের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। গত শুক্রবার খাতাম আল-আনবিয়া সদর দপ্তরের তৎকালীন প্রধান গোলাম আলী রাশিদকে হত্যা করার পর সাদমানিকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

ইসরায়েলি হামলায় ইরানি টেলিভিশনের নিহত কর্মী বেড়ে তিন : ইসরায়েলের হামলায় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আইআরআইবির মোট তিন কর্মী নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার আইআরআইবি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ইসরায়েলি বাহিনী সোমবার ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থিত আইআরআইবির সদর দপ্তরে হামলা চালায়। ইরানি সংবাদমাধ্যমে আগে জানানো হয়েছিল, এই হামলায় আইআরআইবির দুই কর্মী নিহত হয়েছেন। এখন তিন কর্মী নিহত হওয়ার তথ্য জানানো হলো। নিহত তিনজনের মধ্যে দুজনের নামণ্ডপরিচয় প্রকাশ করেছে ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা ইরনা। তারা হলেন- নিমা রেজবপুর ও মাসুমেহ আজিমি। রেজবপুর ছিলেন আইআরআইবির বার্তা সম্পাদক। আর আজিমি ছিলেন আইআরআইবির সচিবালয় শাখার একজন কর্মী। হামলার জেরে আইআরআইবির সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে অবশ্য সম্প্রচার আবার শুরু হয়।

গাজায় দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত : ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাস যোদ্ধাদের হামলায় আরও দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত এবং ১০ সেনা আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। সোমবার এ ঘটনা ঘটে। টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, নিহত দুই সেনা হলেন- সার্জেন্ট নাবেহ লেসহেম এবং তাল মোভশোভিজ। নাবেহ গোলানি বিগ্রেডের ১২তম ব্যাটালিয়নে কাজ করতেন; আর তাল মোভশোভিজ ৭০৮৬তম কমব্যাট ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়নের ডেপুটি কমান্ডার। ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজার খান ইউনিসে অভিযান চালাতে গিয়ে হামাসের পেতে রাখা বিস্ফোরণে তারা নিহত হন। আহত সেনাদের মধ্যে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও রয়েছেন বলে জানায় ইসরায়েলি বাহিনী।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত