রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পূর্বেকার অসমাপ্ত আলোচনা সমাপ্তিকরণের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর বেইলি রোড অবস্থিত ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এ বৈঠক হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে ৩০ দল ও জোটকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। জামায়াত ছাড়া ২৯ দল ও জোটের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক বিরতির মাঝে সাংবাদিকদের সাথে কথা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জনগণের ভোটে বিএনপি ক্ষমতায় এলে জনগুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতির পদ আসনের ভিত্তিতে বিরোধীদল পাবে। এর মধ্যে রয়েছে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি, প্রিভিলেজ কমিটি, এস্টিমেটস কমিটি এবং পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটি।
সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, সংবিধানের ৬৯ অনুচ্ছেদ সংশোধন নিয়ে চলমান আলোচনায় সব দল দুটি বিষয়ে একমত হয়েছে। আস্থা ভোট ও অর্থ বিল। এই দুই বিষয়ে সংসদ সদস্যদের দলীয় অবস্থান অনুসরণ করতে হবে। তবে এসব বাদে অন্যান্য বিষয়ে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন। বিষয়টি জাতীয় সনদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে এবং এতে সংশ্লিষ্ট সব দলের সই থাকবে বলেও তিনি জানান।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে একটি অতিরিক্ত লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেখানে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ না রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এই প্রস্তাব এখনও আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। বিএনপি দায়িত্বপ্রাপ্ত হলে এই বিষয়টি সংযুক্ত করার সুযোগ থাকবে। নারীদের জন্য সংরক্ষিত ১০০টি আসন রাখার ব্যাপারেও সবাই একমত হয়েছেন বলে জানান তিনি। তবে এই আসনগুলোর নির্বাচনি পদ্ধতি কী হবে তা নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
এদিকে, ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন সংকল্পবদ্ধ যে, আমরা জুলাই মাসের মধ্যে জাতীয় সনদ তৈরি করতে পারব।
আলী রীয়াজ বলেন, আমাদের লক্ষ্য যেটা আমরা বারবার বলেছি, জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন সংকল্পবদ্ধ যে আমরা জুলাই মাসের মধ্যেই জাতীয় সনদ তৈরি করতে পারব। সেক্ষেত্রে আপনারা (রাজনৈতিক দলগুলো) যে সহযোগিতা দেখাচ্ছেন এবং সময় ও সহযোগিতা করছেন সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
আলী রীয়াজ বলেন, আমরা আশা করছি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে, আমাদের পক্ষে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। আমরা চেষ্টা করছি সমস্ত বিষয়গুলোতে যাতে আমরা সকলে একমত না হলেও সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন বিষয়ে মতে আসতে পারি। তিনি বলেন, সব বিষয়ে আমরা হয়তো একমত হতে পারব না; কিন্তু তারপরে আমরা জাতি এবং রাষ্ট্রের স্বার্থে যেন খানিকটা হলেও ছাড় দিয়ে এক জায়গায় আসতে পারি। সবগুলো বিষয়ে শেষ করতে পারব এমন নিশ্চয়তা নেই। এ আলোচনায় সংবিধানের ৭০নং অনুচ্ছেদ, স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনয়ন, নারী প্রতিনিধিত্বসহ বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। এছাড়া দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ (নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ), প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ বেশ কিছু বিষয় আলোচনার কথা রয়েছে। ১৭, ১৮ এবং ১৯ জুন তিনদিন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার কথা রয়েছে। আলী রীয়াজের নেতৃত্বে বৈঠকে কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত আছেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, মুয়ীদ চৌধুরী, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার। উল্লেখ্য, এর আগে প্রথম দফার সংলাপ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। ওই পর্যায়ে ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করে ঐকমত্য কমিশন।