ইসরায়েলে নতুন করে কয়েক দফা ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইরান। একে ‘অপারেশন ট্রু প্রোমিজ থ্রি’-এর নতুন পর্ব আখ্যা দিয়ে ইরান জানিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা এবং গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চালানো এ হামলায় সশস্ত্র বাহিনী এমন কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে, যা এর আগে কখনও করেনি। হামলায় ইসরায়েলের কয়েকটি সংবেদনশীল স্থাপনা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে বলে জানা গেছে। প্রেসটিভির খবরে বলা হয়, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের নৃশংস আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় প্রতিশোধমূল অভিযানের সর্বশেষ ধারাটি শুরু হয় দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কঠোর বার্তার পর। বুধবার খামেনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথামতো ইরান কারও কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলকে সাহায্য করে, তাহলে ওয়াশিংটন অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়বে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে মঙ্গলবার সামাজিকমাধ্যমে একাধিক পোস্টে ট্রাম্প ইরানের প্রতি ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’-এর আহ্বান জানান। এরপর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে খামেনি বলেন, এই জাতি কখনও আত্মসমর্পণ করবে না। তিনি ট্রাম্পের হুমকিকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করে বলেন, ‘যারা জ্ঞানী এবং ইরানের ইতিহাস ভালো করে জানেন, তাদের জানা আছে, ইরানিরা কোনো হুমকিকে পরোয়া করে না।’ কার্যকরভাবে যুদ্ধ শুরুর ঘোষণাও দেন খামেনি।
সিজ্জিল ক্ষেপণাস্ত্রের গতিবিধি দেখে অবাক বিশ্ব : সামাজিকমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, ইরানের বিভিন্ন স্থান থেকে ছোড়া ‘সিজ্জিল’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রাতের আকাশে অস্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে এবং এগুলোকে প্রতিহত করতে গিয়ে বহু-স্তরের ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তালগোল পাকিয়ে ফেলছে। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের ছবি বা ভিডিও প্রকাশের ওপর সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সামাজিকমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলে প্রত্যক্ষ এবং শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছে। কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ছিল নতুন প্রজন্মের, যেগুলো লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে আঘাত হেনেছে। আক্রান্ত লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে সামরিক ও গোয়েন্দা স্থাপনাও ছিল। ইসরায়েলি মিডিয়া বলেছে, ইরানের সর্বশেষ হামলার সময় তেলআবিব, হাইফা, নেতানিয়া ও হাশফুলায় সাইরেন বাজানো হয়। আতঙ্কিত বসতি স্থাপনকারীরা দ্রুত ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকে পড়েন। খবরে বলা হয়, ইরান গত দুই দিনে মার্কিন মদতপুষ্ট ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যর্থ করতে বিভিন্ন উদ্ভাবনী কৌশল প্রয়োগ করে দুর্দান্ত সাফল্য পেয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদপত্র ইয়েদিওত আহরোনোথ বলেছে, ইরানি হামলার এই অস্বাভাবিক সর্বশেষ ধারা ইসরায়েলকে অস্থির করে তুলেছে।
সর্বশেষ অভিযানের পর ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি এক বিবৃতিতে বলেছে, বুধবার সন্ধ্যায় দুই স্তরের সুপার হেভি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছেন তারা। বাহিনীটি বসতি স্থাপনকারীদের উদ্দেশে বলেছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইরানের একাধিক সফল প্রতিশোধমূলক হামলার কারণে ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হ্রাস পেয়েছে। ইসরায়েলের আকাশ এখন পুরোপুরি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের নিয়ন্ত্রণে। আগের দিনের অভিযানের কথা উল্লেখ করে আইআরজিসি বলেছে, এদিন তারা ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি ইন্টেলিজেন্স সেন্টার এবং ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের একটি ঘাঁটি ধ্বংস করেছেন। সপ্তাহের শুরুতে আইআরজিসি প্রধানের দেওয়া বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে এতে বলা হয়, ইহুদিবাদীদের জন্য নরকের দরজা খুলে যাবে। বিবৃতিতে বসতি স্থাপনকরীদের সতর্ক করে বলা হয়, এখন ইহুদিবাদীদের সামনে দুটি পথ আছে; একটি হলো- ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হওয়া; অন্যটি হলো- তাদের পূর্বপুরুষরা যে দেশ থেকে এসেছেন, সেখানে ফিরে যাওয়া।
চিকিৎসাধীন সেনাদের হাসপাতাল বিধ্বস্ত, হতাহতের শঙ্কা : আলজাজিরা জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর আঘাতে মধ্য ও দক্ষিণ ইসরায়েলের চারটি স্থাপনা গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ইসরায়েলের অন্যতম বৃহত্তম সোরোকা হাসপাতালও রয়েছে। হাসপাতালের ছাদ পুরোপুরি ধসে পড়েছে বলে জানিয়েছে আলজাজিরা। এই হাসপাতালে গাজা উপত্যকায় আহত অনেক ইসরায়েলি সেনা চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারা জীবিত আছেন কিনা, তা স্পষ্ট নয়। হামলায় হাসপাতালটি এত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে যে মেডিকেল ক্রুরা ঘটনাস্থলে লোকজনকে আসতে নিষেধ করছেন। খবরে বলা হয়, সকালে ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলোর তিনটি বৃহত্তর তেলআবিবে; অন্যটি হলোনে। হলোনের একটি বড় স্থাপনা পুরোপুরি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনা জানিয়েছে, সকালের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল গামণ্ডইয়াম টেকনোলজি পার্কে অবস্থতি ইসরায়েলের বৃহৎ কমান্ড অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স হেডকোয়ার্টার এবং মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স ক্যাম্প। ফ্যাসিলিটিগুলো বেয়ার শেভার সোরোকা হাসপাতালের পাশে অবস্থিত। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে সৃষ্ট শকওয়েভের কারণে হাসপাতালটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। আলজাজিরা অন্য এক খবরে বলেছে, গতকাল সকালের নতুন হামলায় জেরুজালেম ও তেলআবিবে বেশ কিছু প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। চারটি বিকট বিস্ফোরণের খবর দিলেও ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে কিছু বলেনি ইসরায়েলি মিডিয়া। তবে ইসরায়েলের মেগান ডেভিড অ্যাডম ইমার্জেন্সি সার্ভিসের বরাতে আলজাজিরা বলেছে, তেলআবিবের হোলোনে ইরানি মিসাইলের আঘাতে দুই ডজনেরও বেশি মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন।
হার্মিস-৯০০ ড্রোনের ধ্বংসাবশেষের ভিডিও : ইরানের টেলিভিশনে ইসরায়েলের ‘হার্মিস নাইন হানড্রেড’ মডেলের ড্রোনের ধ্বংসাবশেষের ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।
খবরে বলা হয়, ইসফাহান শহরের পাশে এই হার্মিস ড্রোনটি ভূপাতিত করেছে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এবারই প্রথম ধ্বংস হওয়া কোনো ইসরায়েলি ড্রোনের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করল ইরান। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী স্বীকার করেছে, তাদের একটি দূরনিয়ন্ত্রিত আকাশযান ইরানে ভূপাতিত হয়েছে। সারফেস টু এয়ার মিসাইলের আঘাতে সেটি ভূপাতিত হয় বলে জানায় ইসরায়েল। খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সরবরাহ করা রাডার ঘাদির এবং ফালাক-এর সাহায্যে ড্রোনটি শনাক্ত ও ভূপাতিত করতে সক্ষম হয় ইরান। তেহরান বুধবার জানিয়েছে, সংঘাত শুরুর পর তেহরান ও ইসফাহানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৪টি ইসরায়েলি ড্রোন ভূপাতিত করেছেন তারা। তাছাড়া, ইসরায়েলের মোট পাঁচটি এফ-থার্টিফাইভ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে। এফ-থার্টিফাইভ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান। এটি রাডারে সহজে ধরা পড়ে না। অত্যাধুনিক ড্রোন ও যুদ্ধবিমান ধ্বংসের ঘটনাগুলোকে সংঘাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ এটি ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সক্ষমতার শক্ত প্রমাণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ : ইরানে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ দিনদিন বাড়ছে। যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত না হওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্কে। সামাজিকমাধ্যম এক্সে নিউইয়র্কের বিক্ষোভকারীরা তাদের বিক্ষোভের ভিডিও পোস্ট করছেন। এতে দেখা গেছে, শত শত মানুষ ম্যানহাটনে মিছিল করেছেন। তারা ইরানে হামলার হুমকি এবং গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের নিন্দা জানান। তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘ইরানে নাক গলিও না’, ‘গণহত্যায় অর্থায়ন বন্ধ কর।’ হোয়াইট হাউসের সামনেও একদল বিক্ষোভকারী বিক্ষোভ করছেন। তাদের দাবি, ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র যেন আর জড়িত না হয়। বিক্ষোভকারীরা ইরানে ইসরায়েলি বোমা হামলা ও ইসরায়েলি বাহিনীকে কোটি কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। যুদ্ধে সরাসরি জড়িত না হতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
‘শেষ মুহূর্তে’ সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প : ইরানে ইসরায়েলের চলমান হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়াবে কি না, সে সিদ্ধান্ত এখনও নেননি বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘একেবারে শেষ মুহূর্তে আমি সিদ্ধান্ত নেব।’ হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেলেও সেখান থেকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের আলোচনা চলছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার সামনে সব ধরনের সম্ভাব্য সামরিক ও কূটনৈতিক ‘পদক্ষেপ’ তুলে ধরা হয়েছে। তবে, এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আলজাজিরার প্রতিবেদক জানিয়েছেন, ‘আমরা ট্রাম্পকে বলতে শুনেছি, তিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান। সেই সিদ্ধান্ত কী হবে বা কবে তা নেওয়া হবে, সে সম্পর্কে কিছুই অনুমান করা যাচ্ছে না।’ মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন। তবে হামলার বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি।
রয়টার্স জানিয়েছে, ইরানের আরাক শহরে ডিউটেরিয়াম অক্সাইড মিশ্রিত ভারী পানির পারমাণবিক চুল্লিতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এর আগে ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে ইরানের ওই চুল্লির আশপাশের এলাকায় বসবাস করা মানুষদের অবিলম্বে অন্যত্র সরে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের খবর বলছে, ডিউটেরিয়াম অক্সাইড মিশ্রিত এই পানি পারমাণবিক চুল্লি শীতল করার কাজে ব্যবহার হয়। তবে উপজাত পণ্য হিসেবে ওই পানি থেকে প্লুটোনিয়াম পাওয়া যায়। এই উপাদান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে কাজে লাগে।
জরুরি বৈঠকে বসছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ : সংঘাত নিয়ে আজ শুক্রবার জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। ইসরায়েল এই বৈঠকে অংশ নেবে। ইরান, রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান ও আলজেরিয়ার অনুরোধে এ বৈঠক হবে। চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়েছে বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজ। নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে ইসরায়েল অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন।
নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রের স্থাপনায় বিমান হামলা : ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বুধবার রাতে ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রের একটি স্থাপনায় বিমান হামলা চালানো হয়েছে। তাদের দাবি, ওই কেন্দ্রটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, ‘সেখানে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ব্যবহৃত উপাদান ও সরঞ্জাম রয়েছে। সেখানে এমন সব প্রকল্প বানানো হচ্ছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিকে ত্বরান্বিত করতে সক্ষম।’ এবারই প্রথম নাতাঞ্জে হামলার খবর জানা গেল, তা নয়। এর আগে চলতি সপ্তাহের শুরুতে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর প্রধান বিবিসিকে জানান, গত শুক্রবার নাতাঞ্জে একদফা হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। হামলায় নাতাঞ্জে ইরানের ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রের সেন্ট্রিফিউজগুলো ‘পুরোপুরি ধ্বংস না হলেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তেহরানের শাসকদের মূল্য দিতে হবে, হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর : ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইরানকে চড়া মূল্য দিতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের বিরসেভা শহরের সরোকা হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এরপর ইরানকে এই হুঁশিয়ারি দেন নেতানিয়াহু। এক্স পোস্টে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘আজ সকালে, ইরানের সন্ত্রাসী স্বৈরশাসকেরা বিরসেভা শহরের সরোকা হাসপাতালে ও দেশের মধ্যাঞ্চলে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।’ তিনি আরও লেখেন, ‘আমরা তেহরানের জালিম শাসকদের চড়া মূল্য দিতে বাধ্য করব।’
ইরানে ৬৩৯ জন নিহত! : ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস বলেছে, ইসরায়েলের হামলায় ইরানে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৩৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে ১ হাজার ৩২০ জনের বেশি। ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাত সপ্তম দিনের মতো চলছে। হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস আরও বলেছে, নিহতদের মধ্যে ২৬৩ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১৫৪ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। বাকিদের পরিচয় দেয়নি সংস্থাটি। সংস্থাটি বলেছে, হতাহতের তথ্য তারা ইরানের স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছেন।
ইরানে গড়ে তোলা নিজেদের নেটওয়ার্কের সহায়তায় তথ্য যাচাই করা হয়েছে। তবে, ইরান সরকারের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ১ হাজার ২৭৭ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ইরানের হামলায় ২৪ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন বলে স্বীকার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। যুদ্ধে হতাহতদের তথ্য প্রকাশে সরকারি বিধিনিষেধের কারণে এ তথ্য কতটুকু সঠিক, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে অনেক সংবাদমাধ্যম বলেছে, হতাহত ইসরায়েলিদের সংখ্যা এর চেয়ে বহুগুণ বেশি হতে পারে।