সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি কিংবা এপ্রিলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। নির্বাচন কেন্দ্র করে অন্যান্য দলের মতো ইসলামপন্থী দলগুলো মাঠ গোছাতে সক্রিয় অবস্থানে রয়েছে। বিগত সময়ের মতপার্থক্য ভুলে ভোটের মাঠে জোট গঠন করে প্রতিটি আসনে ‘এক বাক্স’ একক প্রার্থীর নীতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনি মাঠে কোন দলের কতজন প্রার্থী হবে তা নিয়ে দর-কষাকষি চলছে। সেক্ষেত্রে বড় রাজনৈতিক দলের প্রলোভনে পা না দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন ইসলামপন্থি দলের শীর্ষপর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা।
জানা গেছে, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর আত্মপ্রকাশ ঘটবে ইসলামপন্থি জোটের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ইসলামী দলগুলোর নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। পুরোনো বিভেদ ভুলে সবাইকে সমঝোতার মাধ্যমে এগোতে হবে। সংসদ নির্বাচনে ইসলামী শক্তির পক্ষে বিশেষ জনমত গড়ে তুলতে হবে। এরই মধ্যে বিভিন্ন দলের প্রার্থী বাছাই ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগও শুরু হয়েছে। তবে ইসলামী দলগুলোর ভোট যাতে এক বাক্সে যায়, সেই লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে অধিকাংশ দল।
জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের পতনের পরে ইসলামী দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কয়েক দফা আলাপ হয়েছে। সেখানে নির্বাচনকালীন জোট গঠন ও সংসদীয় আসনগুলোতে সম্মিলিত একক প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় আসন ভাগাভাগিসহ একক প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে প্রার্থীর নিজস্ব জনপ্রিয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এরইমধ্যে একক প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে একমত হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামিসহ অন্তত ১০টি দল। বাকি দলগুলো হলো- ইসলামি আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলনের দুটি অংশ, ইসলামি ঐক্যজোটের একাংশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশ এবং নেজামে ইসলাম পার্টির দুটি অংশ। কিছুদিনের মধ্যে দলগুলোর জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। এ উদ্যোগে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি যতটা ছাড় ও উদারতার প্রয়োজন তা দেখাতে চায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ আমলের সাড়ে ১৫ বছরে ইসলামপন্থিদের ওপর সবচেয়ে বেশি জুলুম ও নির্যাতন চালানো হয়। জুলাই-আগস্টে অধিকাংশ ইসলামপন্থি দল একত্রে আন্দোলন করেছে। আন্দোলনের সফলতা যাতে কেউ বিনষ্ঠ না করতে পারে সেজন্য ঐক্যের প্রয়োজন। গত ২৯ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফতের সম্মেলনে যোগ দিয়ে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেছিলেন, ইসলামি দলগুলোর মাথায় আর কেউ কাঁঠাল ভেঙে খেতে পারবে না। ১২ দলীয় জোটের সমমনা দলের নেতারা জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক করেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, কোনো সংসদীয় আসনে আমাদের শক্তি ও জনসমর্থন বেশি। কিন্তু যেকোনো কারণে অন্য একটা দলকে আসনটি ছাড় দিতে হবে।
সেক্ষেত্রে আমাদের প্রতীক ব্যবহার করতে চাইলে কোনো সমস্যা নেই। তবে, জামায়াতে ইসলামী বলছে, ইসলামপন্থি অনেক দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার পর স্পষ্ট হবে জোট।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, পরস্পরের সঙ্গে বোঝাপড়া করে একটা সুন্দর নির্বাচনের দিকে যাব। যাতে দেশের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে, গণতন্ত্রের বিকাশে একটি দৃষ্টান্তকারী নির্বাচন হয়। সেজন্য ইসলামী দলগুলো একসঙ্গে নির্বাচনে আসা প্রয়োজন। একটি ব্যালট করতে যতটা ছাড় ও উদারতার প্রয়োজন হয় জামায়াত তা করবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মহাসচিব মাওলানা অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমদ আলোকিত বাংলাদেশ বলেন, ‘ইসলামী দলগুলোর মধ্যে জোট নয়, সমঝোতা হবে।
সমঝোতার ভিত্তিতে সংসদীয় আসনে ইসলামী দলগুলো একক প্রার্থীর কথা ভাবছে। যেভাবে আলোচনা এগিয়ে চলছে, তাতে আগামী দুই’এক মাসের মধ্যে দলগুলোর সমঝোতা স্পষ্ট হবে’।
ইসলামপন্থি দলগুলোর আদর্শিক পার্থক্য রয়েছে, ভিন্ন ভিন্ন আদর্শিক ভাবধারায় থেকে কিভাবে সমঝোতা হবে এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, ‘আমরা যদি ঐক্য কিংবা জোট করতে যাই তাহলে আদর্শিক মতাদর্শের বিষয়গুলো সামনে আসবে, আর সমঝোতা হলে প্রত্যেক দল নিজ নিজ অবস্থানে থাকবে। সেখানে কোনো সমস্যা থাকে না’।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামপন্থী দলগুলোর ঐক্যের ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে। গত মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যমত্যের কমিশনের বৈঠকে উপস্থিত থাকাবস্থায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী আলোকিত বাংলাদেশ বলেন, ‘ইসলামী ভাবধারার দলগুলোর ভেতরে একটা ঐক্যের চেষ্টা চলছে। যাদের সঙ্গে আদর্শিক মিল আছে, তাদের সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ভাবনা রয়েছে। আবার যাদের সঙ্গে আদর্শিক মিল নেই তাদের সঙ্গে জোট করার সম্ভাবনা খুবই কম’।
ইসলামী দলগুলোর সমন্বয়ে কাজ করা সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি ড. খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের অভিন্ন বাক্স নিশ্চিত করতে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। গোপন কোনো ষড়যন্ত্রে কেউ পা দেবে না বলে সবাই অঙ্গীকার করছেন।
সূত্র বলছে, সারা দেশে জামায়াতে ইসলামী ৩০০ আসনে প্রাথমিকভাবে প্রার্থী বাছাই করেছে। তবে এককভাবে কিংবা জোটগতভাবে প্রার্থী দেবে কি না তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
তফসিলের পর তা চূড়ান্ত হবে। ইসলামি দলগুলোর জোট বা ঐক্যের জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ জানান, আমিরে জামায়াত অনেকের সঙ্গে বৈঠক করছেন, কথা বলছেন, চরমোনাই পীরের বাসায় গিয়েছেন। এসবের মাধ্যমে ঐক্যের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছি। সবার সঙ্গে যোগাযোগ অনেক বেড়েছে, এটা অব্যাহত থাকবে।’