একজন ব্যক্তির সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে জামায়াত-এনসিপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত পোষণ করেছে। তবে এতে সায় দেয়নি বিএনপিসহ তিনটি রাজনৈতিক দল। অন্য দুটি দল হলো- বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম)।
গতকাল রোববার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ৩৩টি দলের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শেষে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, তিনটি রাজনৈতিক দল ছাড়া বাকি সবাই মত দিয়েছে যে, একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবেও এমন মেয়াদের কথা উল্লেখ ছিল।
জোনায়েদ সাকি বলেন, এ নিয়ে ভিন্নমত থাকায় আলোচনা এখনো চলমান। পরবর্তী বৈঠকের আগে পারস্পরিক মতবিনিময়ের জন্য দুদিন সময় নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, শুধু প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে নয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব, সাংবিধানিক পদে নিয়োগে সাংবিধানিক কমিশনের ভূমিকা এবং সরাসরি নির্বাচনের প্রশ্নসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমরা ধাপে ধাপে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামোর ভিত্তি গড়ে তুলতে চাই। জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা দ্রুত কোনো সিদ্ধান্তে না গিয়ে সমঝোতার পথ খুঁজছি। এসব বিষয়ে তাড়াহুড়ো না করে সবার মতামতের ভিত্তিতে ঐকমত্যের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। এতে দেশের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন আরও সমৃদ্ধ ও টেকসই হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, যদি শেষ পর্যন্ত ঐক্য না হয়, তবে যে দল বা নেতারা দ্বিমত পোষণ করেন, তাদের মতামত জনগণের কাছে তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে।
এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় অধিবেশনের পঞ্চম দিনের সংলাপ শুরু হয়। এতে অংশ নেয় ৩৩টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩৩টি দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি পৃথক অধিবেশন করেছে। এসব সংলাপে বেশকিছু বিষয়ে ঐকমত্য হলেও মৌলিক কিছু প্রস্তাবে দ্বিমত ছিল। এসব বিষয় সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গত ১৭ জুন থেকে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু হয়।
এদিকে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও নমনীয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, আপনারা আসছেন, আরেকটু আগান। তাহলে জুলাই সনদ দ্রুত করা সম্ভব।
আলী রীয়াজ বলেন, আমরা এখানে এসেছি একটি বিশেষ ও কঠিন বাস্তবতায় ১৬ বছরের সংগ্রাম, সহস্রাধিক মানুষের আত্মত্যাগ, অনেকের নিখোঁজ হওয়া ও নিপীড়নের প্রেক্ষাপটে। রাজনৈতিক দলগুলোরও অনেক ত্যাগ রয়েছে। তাই আসুন, সবাই মিলে সমঝোতার পথে এগিয়ে যাই। মূলতবি অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ, রাষ্ট্রের মূলনীতি ও সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্র্নিধারণ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এতে দুই জোটসহ প্রায় ৩০টি দল ও জোট অংশ নেয়।
আলী রীয়াজ আরও বলেন, নির্বাচন ও বিচার প্রক্রিয়া সমান্তরালভাবে চলবে। তবে ঐকমত্যের জন্য দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। আলোচনা চলাকালীন নতুন নতুন মত আসছে, ফলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে দলগুলোর নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আরও আলাপ প্রয়োজন।
তিনি জানান, উচ্চকক্ষ গঠন, নারীদের প্রতিনিধিত্ব এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসহ কিছু বিষয়ে এখনও ঐকমত্য হয়নি। এসব নিয়ে আগামী সপ্তাহে আবার আলোচনা হবে।