সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার বিকেলে উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরে তার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ বলছে, কিছু লোক তার বাসায় গিয়ে ‘মব’ সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে আসে। উত্তরা-পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, সাবেক সিইসি এ কে এম নুরুল হুদার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, জনতা তাকে ঘেরাও করে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে তাকে নিয়ে আছে। পরে এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপ কমিশনার মহিদুল ইসলাম বলেন, শেরে বাংলা নগর থানার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে পরে তাকে আদালতে পাঠানো হবে। এর আগে গতকাল দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় সাবেক সিইসি নূরুল হুদাসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি। এ মামলার আসামির তালিকায় দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করা তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারদের পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ১৯ জনের নাম রয়েছে। শেরে বাংলা থানায় মামলা করার কয়েক ঘণ্টা সন্ধ্যার দিকে নূরুল হুদার উত্তরার বাড়িতে গিয়ে চড়াও হয় এক দল ব্যক্তি। তারা বাসায় ঢুকে সাবেক সিইসিকে অপদস্থ করেন। ওই সময় জনতার মধ্যে থাকা কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভও করেন। এমন একটি লাইভে দেখা গেছে, নূরুল হুদার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন ব্যক্তি। তার গেঞ্জির কলার ধরে রেখে বক্তব্য দিতে দেখা যায় ওই ব্যক্তিকে। এসময় ওই ব্যক্তির পাশে পুলিশের পোশাক পরা একজনকে দেখা যায়। উত্তরা পশ্চিম থানার একজন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ যাওয়ার আগেই ’মব’ তাকে যথেষ্ট হেনস্থা করে ফ্ল্যাট থেকে নামিয়ে আনে। তাকে ডিম ছুড়ে মারা হয়েছিল। তারই ভবন থেকে দুটো জুতা নিয়ে রশির সঙ্গে বেঁধে গলায় ঝুলিয়ে দেয় ওই ব্যক্তিরা। সেসময় বাসার দরজার সামনে স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার নাম নিয়ে স্লোগান দেন। আরেকটি ভিডিওতে নূরুল হুদাকে ঘিরে ধরে ‘স্বেচ্ছাসেবক উত্তর’ এর নামে স্লোগান দিতে শোনা যায় কথিত জনতাকে। ভিডিওতে দেখা যায় তাকে ধরা থাকা লোকটি জুতার মালা থেকে একটি জুতা নিয়ে তাকে মারধর করছেন। পরে পুলিশ জুতার মালাটি খুলে নিয়ে সাবেক সিইসিকে হেফাজতে নেয়। প্রসঙ্গত, সাবেক সচিব নূরুল হুদা ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সিইসি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন দেশের দ্বাদশ সিইসি। তার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস?্যরে কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় পর্যায়ের সব ভোট হয়। এ ইসির মেয়াদ শেষ হয় ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয় বলে অভিযোগ বিএনপির। নূরুল হুদা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্দেশ পালন করতেন বলেও অভিযোগ করে আসছে দলটি।