ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নগর ভবনে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ভোগান্তিতে সেবাগ্রহীতারা

* হামলায় কয়েকজন আহত * সাংবাদিককে ছুরি দেখিয়ে হুমকি * আজ সংবাদ সম্মেলন করবেন ইশরাক হোসেন
নগর ভবনে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ভোগান্তিতে সেবাগ্রহীতারা

বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে বসানোর সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে দিনে দিনে উত্তাল হয়ে ওঠেছে নগর ভবন। শপথ না নিয়েই মেয়র পদে বসে নগর ভবনে ‘পরিচ্ছন্ন ঢাকা ও নাগরিক সেবা নিশ্চিতকল্পে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। আর গতকাল মঙ্গলবার ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের দু’পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের যে পক্ষটি বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের ‘বিরোধী’, তাদের লোক সন্দেহে মারধরের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার কারণে ডিএসসিসির সেবা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন সেবাগ্রহীতারা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও কর্মচারীরা বলেন, একটি পক্ষের নেতৃত্বে আছেন আরিফুজ্জামান প্রিন্স। তাকে ইশরাকের বিরোধী পক্ষ মনে করা হচ্ছে। তিনি সিটি করপোরেশনের তার পক্ষের কর্মচারীদের নিয়ে নগর ভবনে আসেন। তারা আসার পর আরেকটি পক্ষের নেতৃত্বে থাকা আরিফ চৌধুরীর অনুসারীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে আরিফুজ্জামান বলেন, ইশরাক নগর ভবন চালু করার ঘোষণা দিয়েছেন। তার এ ঘোষণার পরও বহিরাগত কিছু লোক প্রতিদিন নগর ভবনে মহড়া দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি করে আসছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে নিরাপদে অফিস করতে পারেন, সে জন্য তারা সব কর্মচারীরা একত্র হয়ে নগর ভবনে মিছিল শুরু করেন। এর পরপরই তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আরিফ চৌধুরী বলেন, অন্যান্য দিনের মতো গতকালও তারা শান্তিপূর্ণভাবে নগর ভবনে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু বহিরাগতরা নগর ভবনে এসে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাদের পাঁচজনকে গুরুতর আহত করেছে। এই ঘটনার দেড় ঘণ্টা পর ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে নগর ভবনে আসতে থাকেন ইশরাকের সমর্থকেরা। তারা নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আরিফুজ্জামানের অনুসারী সন্দেহে নগর ভবনের এক কর্মীকে মারধর করা হয়। তার নাম শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি সিটি করপোরেশনের প্রশাসন শাখার কম্পিউটার অপারেটর। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ইশরাকের অনুসারীরা তৌহিদুলকে বেদম পেটাতে থাকেন। এ সময় পুলিশ এসে তৌহিদুলকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশের কাছে তৌহিদুলকে দিতে রাজি হচ্ছিল না ইশরাকের অনুসারীরা। পরে নগর ভবনে আগত আরেক ব্যক্তিকে আরিফুজ্জামানের অনুসারী সন্দেহে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ এই দুই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এসব ঘটনার ভিডিও ও ছবি তোলার সময় গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর চড়াও হতে দেখা গেছে ইশরাকের সমর্থকদের।

নগর ভবনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার আন্দোলনে শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন আরিফ চৌধুরী। পরে আন্দোলনে যুক্ত হতে আরেক শ্রমিক নেতা আরিফুজ্জামান নগর ভবনে এলে তাদের ওপর হামলার চালানো হয়েছিল। দু’পক্ষের মধ্যে আগে থেকে দ্বন্দ্ব ছিল।

নগর ভবনের একাধিক কর্মচারী বলেন, যারা ইশরাকের আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন না, তাদের ‘বিরোধী পক্ষ’ মনে করা হচ্ছে। আর যারা আন্দোলনে ছিলেন তাদেরকে ইশরাকের লোকজন বলা হচ্ছে।

এদিকে গতকাল ইশরাকের মিডিয়া সেল বলেছে, আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলন করবেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের চলমান আন্দোলন, সেবা কার্যক্রম এবং ঢাকাবাসীর আন্দোলন নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের অবমাননাকর দাবি ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদসহ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে এই জরুরি সংবাদ সম্মেলন করবেন ইশরাক হোসেন। এদিকে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর গত সোমবার থেকে খুলেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটির নগরভবনের প্রধান ফটক। চালু হয়েছে সেবা কার্যক্রম। পাশাপাশি ইশরাক অনুসারীদের অবস্থান কর্মসূচিও চলমান রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটির নগর ভবন থেকে দেওয়া সব নাগরিক সেবা বন্ধ ছিল। জরুরি প্রয়োজনে এসে এ সময় সেবাপ্রার্থী নাগরিকদের বারবার ঘুরে যেতে হয়েছে। সেসময় ইশরাকপন্থী কর্মচারীরা নগরভবনের মূল ফটক আটকে রাখার পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগে তালা ঝুলিয়ে সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে রাখেন। পরে ঈদের বিরতির পর গত ১৫ জুন থেকে ইশরাকের অনুসারীরা নগরভবনে একত্রিত হয়ে ফের অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে শুরু করে। ফলে গত পরশু পর্যন্ত নগর ভবনের প্রধান ফটকসহ অন্যান্য বিভাগে তালা ঝোলানোই ছিল। দীর্ঘ দিন পর গতকাল সোমবার প্রধান ফটকসহ অন্যান্য বিভাগের তালা খুলে দেওয়া হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে নির্বাচন হয় ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। সেই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন ইশরাক হোসেন। গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মেয়র পদ থেকে শেখ ফজলে নূর তাপসকে অপসারণ করে সরকার। অন্যদিকে চলতি বছরের ২৭ মার্চ একটি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ইশরাক হোসেনকে গত সিটি নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করেন। এরপর ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত