ঢাকা বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পুরো ইউক্রেন দখল করতে চান পুতিন

পুরো ইউক্রেন দখল করতে চান পুতিন

ইউক্রেনের পুরো ভূখণ্ড রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করতে চান বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত ২০ জুন সেন্ট পিটার্সবার্গ অর্থনৈতিক ফোরামে পুতিন এমন মন্তব্য করেন। খবর আল-জাজিরার। পুতিন বলেন, ‘আমি বহুবার বলেছি, রুশ ও ইউক্রেনীয় জনগণ এক জাতি। এই দৃষ্টিকোণ থেকে পুরো ইউক্রেনই আমাদের। তিনি আরও বলেন, ‘ যেখানে রুশ সেনারা পা রাখে, তা আমাদের।’ পুতিনের এমন মন্তব্যের জবাবে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা বলেন, ‘ যেখানে রুশ সেনা যায় সেখানেই তারা নিয়ে আসে মৃত্যু, ধ্বংস আর বিভীষিকা।’ এছাড়া ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ম্যাসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে এক পোস্টে বলেন, ‘পুতিন এবার সম্পূর্ণ খোলামেলাভাবে বলেছেন তিনি শুধু ইউক্রেনই নয়, বেলারুশ, বাল্টিক রাষ্ট্র, মলদোভা, ককেশাস এবং কাজাখস্তানের দিকেও নজর দিয়েছেন। জার্মানির সেনাবাহিনীর কৌশলগত প্রতিবেদনেও পুতিনের সম্প্রসারণবাদী মনোভাবকে অস্তিত্বগত হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে, ইউরোপীয় দেশগুলো ও কানাডা ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা আরও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা স্থগিত থাকার ঘাটতি পূরণে ভূমিকা রাখবে। ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে জানান, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসেই ইউরোপ ও কানাডা মিলে ইউক্রেনকে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে, যা গত বছরের পুরো পরিমাণ ৫০ বিলিয়নের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসন এখনো পর্যন্ত সামরিক সহায়তা তেমনভাবে শুরু না করলেও, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ‘প্যাট্রিয়ট’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প জানান, কিছু সরঞ্জাম দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে, তবে এগুলো খুবই দুর্লভ এবং বর্তমানে ইসরাইলকেও সরবরাহ করা হচ্ছে।

রাশিয়া স্পষ্ট করে জানিয়েছে, অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ না হলে যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়। শনিবার ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সেই শর্ত পুনরায় উল্লেখ করেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ন্যাটো সম্মেলনে ইউক্রেনকে কোনো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেননি। তবে তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের কাছে ‘প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা’ বিক্রির চেষ্টা করবেন। ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা এ বছর সামরিক সহায়তা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র সাময়িকভাবে সহায়তা বন্ধ রেখেছে। এরই মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আবারও বলেছেন, তিনি পুরো ইউক্রেন রাশিয়ার অংশ করতে চান। ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে বলেছেন, এই মুহূর্তে ইউরোপ ও কানাডা ইউক্রেনকে মোট ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। গত বছর পুরো বছরে তা ছিল প্রায় ৫ হাজার কোটি ডলার। এবার ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার পৌঁছে গেছে। কেউ কেউ বলছেন, তা ৪ হাজার কোটি ডলারের কাছাকাছি।

ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে বলেছেন, এই মুহূর্তে ইউরোপ ও কানাডা ইউক্রেনকে মোট ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। গত বছর পুরো বছরে তা ছিল প্রায় ৫ হাজার কোটি ডলার। এবার ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার পৌঁছে গেছে।

এই ইউরোপীয় সহায়তা কিছুটা হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা না দেওয়ার ঘাটতি পূরণ করছে। গত এপ্রিলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রতিদিনের রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দরকার। ট্রাম্প প্রশাসন এরপর কিছু অস্ত্র বিক্রি করলেও তা ছিল কেবল এফ ১৬ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ। হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে জেলেনস্কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে প্যাট্রিয়ট ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানান। গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘কিছু দেওয়া সম্ভব কি না, তা আমরা দেখতে পারি। সেগুলো পাওয়া খুব কঠিন। আমরাও এগুলো ব্যবহার করছি এবং ইসরায়েলকেও দিচ্ছি।’ যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে ইউক্রেনের কাছে তার মিত্রদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের দাবি জানিয়েছে রাশিয়া। গত শনিবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভও সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। ২১ জুন টেলিগ্রামে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি লিখেন, পুতিন এবার একেবারে খোলাখুলি বলেই দিয়েছেন, হ্যাঁ, তিনি পুরো ইউক্রেন চান। শুধু তা-ই নয়, তিনি বেলারুশ, বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো, মলদোভা, ককেশাস এবং কাজাখস্তানের কথাও বলছেন।

২০ জুন সেন্ট পিটার্সবার্গে এক সম্মেলনে ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘আমি বহুবার বলেছি, রুশ ও ইউক্রেনীয়রা একই জাতি। এই অর্থে, পুরো ইউক্রেনই আমাদের।’ পুতিন আরও বলেন, ‘আমাদের একটা পুরোনো প্রবাদ আছে, যেখানে রুশ সেনা পা রাখে, সেটা আমাদের হয়ে যায়।’

পুতিনের এই বক্তব্যের উত্তরে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই সিবিহা বলেন, যেখানে রুশ সেনা যায়, সেখানে শুধু মৃত্যু, ধ্বংস আর নরক নেমে আসে। ২১ জুন টেলিগ্রামে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি লেখেন, পুতিন এবার একেবারে খোলাখুলি বলেই দিয়েছেন, হ্যাঁ, তিনি পুরো ইউক্রেন চান। শুধু তা-ই নয়, তিনি বেলারুশ, বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো, মলদোভা, ককেশাস এবং কাজাখস্তানের কথাও বলছেন। জার্মানির সামরিক কর্মকর্তারাও পুতিনের সম্প্রসারণবাদ নিয়ে একমত। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া এক কৌশলপত্রে বলা হয়, রাশিয়া ন্যাটোর বিরুদ্ধে বড় ধরনের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং চলতি দশকের শেষ নাগাদ সে লক্ষ্য পূরণের চেষ্টায় আছে। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরেই বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোর বিষয়ে রাশিয়ার সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেছি। এখন বুঝতে পেরেছি, এটা আমাদের ভুল ছিল। এ উপলব্ধি থেকে আর ফেরার উপায় নেই। বিশ্ব আর আগের মতো শান্তিতে ফিরে যাবে না।’

এ কারণে জার্মানি ও অন্য ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে তারা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করবে।

এর মধ্যে ১ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় হবে দ্বৈত ব্যবহারযোগ্য অবকাঠামো, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, সাইবার সুরক্ষা ও নাগরিক সুরক্ষাব্যবস্থায়। পুতিনের প্রতি আগে সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখানো ট্রাম্প এবার কিছুটা ভিন্ন সুরে বলেন, ‘আমি মনে করি, তিনি একজন বিভ্রান্ত মানুষ। আমি খুব অবাক হয়েছি। ভাবতাম, এই যুদ্ধ সহজেই মিটে যাবে। এখন মনে হচ্ছে, পুতিনকেই এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।’ ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দিকে বলেছিলেন, ইউক্রেনকেই যুদ্ধ থামানোর দায়িত্ব নিতে হবে।

ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর দাবি, ন্যাটো সম্মেলনের সপ্তাহজুড়ে রাশিয়া প্রায় প্রতিদিন ২০০ বার করে আক্রমণ চালিয়েছে। জেলেনস্কি গত শনিবার জানান, ইউক্রেনে এখন ৬ লাখ ৯৫ হাজার রুশ সেনা রয়েছে। আর সুমি এলাকায় নতুন ফ্রন্ট তৈরি করতে আরও ৫২ হাজার সেনা মোতায়েনের চেষ্টা চালাচ্ছে।

জেলেনস্কি বলেন, ‘এই সপ্তাহে তারা সুমির দিকে ২০০ মিটার এগিয়েছিল। আমরা আবার ২০০ থেকে ৪০০ মিটার পেছনে ঠেলে দিয়েছি।’

পুতিনের প্রতি আগে সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখানো ট্রাম্প এবার কিছুটা ভিন্ন সুরে বলেন, ‘আমি মনে করি, তিনি একজন বিভ্রান্ত মানুষ। আমি খুব অবাক হয়েছি, ভাবতাম এই যুদ্ধ সহজেই মিটে যাবে। এখন মনে হচ্ছে, পুতিনকেই এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।’

আকাশ থেকে হামলা

রাশিয়া ইউক্রেনের সাধারণ মানুষকে ভীত করে তোলার উদ্দেশ্যে নিয়মিত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯ জুন কিয়েভে রুশ হামলায় ৩০ জন নিহত ও ১৭২ জন আহত হন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত