ঢাকা বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শোক ও গৌরবের জুলাই

আজকের দিনে বাংলা ব্লকেডের ঘোষণা আসে

আজকের দিনে বাংলা ব্লকেডের ঘোষণা আসে

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের শত বাধা উপেক্ষা করে গত বছরের ৬ জুলাইয়ের এই দিনে দেশের শহরকেন্দ্রিক ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনায় মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কার দাবিতে আন্দোলনের ভিন্নতা পায় এই দিনে। কোটা বাতিলে একাট্টা হয়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আন্দোলন করতে শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের এই দিনে সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের যোগাযোগের সব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে শিক্ষার্থীদের অবরোধ করার আহ্বান জানানো হয়। ফলে কোটাবিরোধী আন্দোলনও বড় সংগ্রামে রূপ নিয়েছিল।

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে জারি করা ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ২০২৪ সালের ৬ জুলাই বিকেল ৩টা থেকে চাকরিপ্রত্যাশীসহ বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে শাহবাগ মোড়ে এসে অবরোধ করেন। এ সময় পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে শিক্ষার্থীরা এগোতে থাকলে পুলিশ রাস্তা ছেড়ে দিয়ে মেট্রোরেলের স্টেশনের কাছে অবস্থান নেয়। ৪৫ মিনিট অবস্থানের পর তারা বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে শাহবাগ ছাড়লে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।

কোট বাতিলে সরকারের প্রতিক্রিয়া না পেলে হরতাল কর্মসূচিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র এবং বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, দেশজুড়ে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি হবে। শুধু শাহবাগ মোড় নয়, সায়েন্স ল্যাব, চানখারপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ প্রতিটি পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা নেমে এসে কর্মসূচি সফল করেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকার বাইরে শিক্ষার্থীরা জেলায় জেলায় মহাসড়ক অবরোধ করেন।

বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ : কোটা বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক, মহাসড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান অবরোধ এবং বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিকালে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি শহিদ মিনারের পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়। সেখান থেকে বিকাল ৩টা থেকে তিন ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে ১২টার দিকে তারা মহাসড়ক থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্যারিস রোডে অবস্থান নেন। এদিকে বিকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজারও শিক্ষার্থী পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে নগরীর ষোলশহর ও দুই নম্বর গেট এলাকায় বিক্ষোভ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা দুই নম্বর গেট এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। খুলনা নগরীর শিববাড়ী মোড়ের ৭টি পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) শিক্ষার্থীরা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক অবরোধ এবং বিক্ষোভ করেন। অন্যদিকে, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) বাবুগঞ্জ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু চত্বরে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব চত্বর এবং ময়মনসিংহে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা টাউন হল মোড়ে বিক্ষোভ করেন।

কোটার যৌক্তিক সংস্কার চায় তিন ছাত্র সংগঠন : শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানায় ছাত্রদল। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় আমার মনে হয় এ দেশে কোটা থাকা উচিত নয়। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন অরাজনৈতিক হলেও তাদের দাবির প্রতি ছাত্রদলের পূর্ণ সংহতি রয়েছে। ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা বলেন, কোটা ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। এ বিষয়ে একটা টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। কেননা এ সমস্যার একটি স্থায়ী ও যৌক্তিক সমাধান প্রয়োজন। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের এখন তৃতীয় প্রজন্ম চলছে। তাদের আর কতদিন কোটা দেওয়া যেতে পারে, কত শতাংশ দেওয়া যেতে পারে এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এছাড়া আদিবাসী, নারী ও প্রতিবন্ধী কোটা রাখতে হবে। ক্ষেত্র বিশেষে জেলা কোটাও দেওয়া যেতে পারে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর এসে মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কেননা এখন মুক্তিযোদ্ধাদের তৃতীয় প্রজন্ম চলছে। অর্থাৎ নাতি-নাতনিরা রয়েছে। তবে আদিবাসীসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ কোটা থাকতে পারে।

শিক্ষার্থীকে সংগঠনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি : কোটা আন্দোলনে যাওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসাইনকে ‘বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে’ সম্পৃক্ত আখ্যা দিয়ে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন। এর প্রতিবাদে সংগঠনের ২১ সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত