ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

এডিস মশার কামড়ে মৃত্যু বেড়েছে

এডিস মশার কামড়ে মৃত্যু বেড়েছে

সারাদেশে গতকাল চব্বি ঘণ্টায় এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ছয়জন মারা গেছেন। এই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৮৬ জন। এ নিয়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪৫ জন এবং শনাক্ত রোগী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৬৮২ জনে। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। প্রায় প্রতিটি ঘরেই এখন জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ, হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। ফলে নাগরিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম উদ্বেগ ও আশঙ্কা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও করোনা রোগীর সংখ্যাও কম নয়। ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিমে পড়েছে সিটি করপোরেশনগুলো। ডেঙ্গু নিয়ে ইমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, এখন জ্বর হচ্ছে অনেকের। অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। যাদের জ্বর, শরীরব্যথা, মাথাব্যথা বা গায়ে র‌্যাশ আছে, তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। নিজে নিজে ওষুধ খেলে সমস্যা বাড়তে পারে। যারা বাসায় আছেন, তারা প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ বা পেইন কিলার খাবেন না। পানি, ডাবের পানি, ওরস্যালাইন বেশি করে খেতে হবে। জ্বরের এক থেকে তিন দিনের মধ্যে ডেঙ্গু টেস্ট করিয়ে নেওয়া ভালো। যদি বমি হয়, পাতলা পায়খানা হয়, খেতে না পারেন, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

এ ছাড়া যারা ক্যানসার, ডায়াবেটিস, কিডনি বা লিভারের রোগে ভুগছেন- তাদের জন্য জ্বর হলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। শিশু, বৃদ্ধ আর গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রেও দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ দেরি করলে অনেক সময় আর কিছু করার সুযোগ থাকে না। পাশাপাশি এডিস মশা যেন বংশবিস্তার না করতে পারে, সেজন্যও ব্যবস্থা নিতে বলেন ডা. এবিএম আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ফুলের টব, ফ্রিজের নিচে, ছাদে রাখা টব বা গামলায় তিন-চার দিনের পানি জমতে দেওয়া যাবে না। প্রশাসনের দায়িত্ব ঘরের বাইরে মশা নিয়ন্ত্রণ করা। আর মানুষের দায়িত্ব ঘরের ভেতর পরিষ্কার রাখা। সবাই মিলে কাজ করলে মশা পুরোপুরি না মারলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করেন এই মেডিসিন স্পেশালিস্ট।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, কীটতত্ত্ববিদ ও চিকিৎসকদের মতে, এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারে। সংক্রমণ ও মৃত্যু এমনই পূর্বাভাস দিচ্ছে। দেশজুড়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ গত বছরের চেয়ে এবার অনেক বেশি। মৃত্যুও অনেক বেড়েছে। ঢাকার বাইরের জেলা বিশেষকরে বরগুনা জেলার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। এই জেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের দেশে ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধির চারটি কারণ রয়েছে। সেগুলো হলো- মশা নিধনে সুব্যবস্থার অভাব, পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা না থাকা, ভিন্ন ধরনের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা এবং দেশে অসময়ে বৃষ্টিপাত।

চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গুতে দ্বিতীয়বার বা নতুন কোনো ধরনে আক্রান্ত হলে, সেই রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়। ঢাকার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডেঙ্গু বেশি ছড়ালে এ পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। কেননা, দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে রোগী বেশি হলে, তা সামলানো অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। ঢাকার বাইরে মশা নিধনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো খুবই দুর্বল।

ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগ। ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ হলো জ্বর। এক্ষেত্রে ৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠতে পারে। জ্বর টানা থাকতে পারে, ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেওয়ার পর, আবারও আসতে পারে। এরসঙ্গে শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।

ডেঙ্গু করণীয় : ডেঙ্গু হলে বাসায় না হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন তা নির্ভর করে এর ধরণ বা ক্যাটাগরির ওপর। ডেঙ্গু জ্বরের চারটি ধরণ বা ক্যাটাগরি রয়েছে। প্রথম ক্যাটাগরির রোগী স্বাভাবিক থাকে।

তাদের শুধু জ্বর থাকে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই। বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়াই যথেষ্ট। ধরণ বা ক্যাটাগরি-৩ এর ডেঙ্গু রোগী সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকে। এতে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ’র প্রয়োজন হতে পারে।

ডেঙ্গু রোগীর খাবার: ডেঙ্গু রোগীকে প্রচুর প্রোটিন ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এছাড়া প্রচুর পরিমাণ পানি, স্যালাইন, স্যুপ, ডাবের পানি, ফলের রস এবং দুধ জাতীয় তরল পানীয় পান করতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর থেকে সেরে ওঠার পরও প্রচুর পরিমাণে তরল পান করতে হবে। এ সময় শরীর যেন পানিশূন্যতায় না ভোগে সে জন্য প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে।

ডেঙ্গুতে কারা বেশি ঝুঁকিতে: ডেঙ্গুতে সাধারণত বেশি ঝুঁকিতে থাকেন- ১ বছরের কম এবং ৬৫ বছরের উপরে যাদের বয়স তারা। এছাড়া গর্ভবতী নারী যাদের ওজন বেশি, যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, যারা হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত, কিংবা যাদের নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয়। তাদেরকে ডেঙ্গু সংক্রমণের শুরু থেকেই হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশা এবং ডেঙ্গু রোগীর উপর নজরদারী বাড়াতে হবে। এডিস মশার লার্ভা জন্মে এমন জায়গাগুলো অপসারণ করতে হবে। জনগণকে ডেঙ্গু নিধনে সম্পৃক্ত করতে হবে। সুতরাং ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আগেই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সচেতনতা বাড়াতে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর’।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত