একটা ফুটবল ম্যাচ উপভোগ্য হতে যা যা প্রয়োজন তার সবই ছিল। ক্ষণে ক্ষণে বদলেছে রং। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে উত্তেজনা। সে উত্তেজনা গড়িয়েছে মারামারিতে। যে কারণে রেফারি লাল কার্ড দেখাতে বাধ্য হয়েছেন। রোমাঞ্চকর সেই ম্যাচে গোল করে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর আবারও নেপালের সমতায় ফেরা। শেষ মিনিটের দারুণ এক গোলে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশের মেয়েরা। মোসাম্মৎ সাগরিকা, মুনকি আক্তারদের পায়ে বল পড়তেই গ্যালারিতে তুমুল গর্জন। গতকাল রোববার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ মুখোমুখি হয়েছিল নেপালের। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার জালে ৯ গোল দিয়েছিল বাংলাদেশ। এই ম্যাচেও যথারীতি জয় আশা করেছিলেন আফঈদা খন্দকারেরা। কিন্তু ২-০ তে এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত নেপাল এক সময় ২-২ এ সমতায় ফেরায়। কিন্তু ম্যাচের একেবারে শেষ মিনিটে বাংলাদেশ পেয়েছে রোমাঞ্চকর জয়। নেপালকে হারিয়েছে ৩-২ গোলে। বাংলাদেশের একটি করে গোলটি করেছেন সিনহা জাহান শিখা, মোসাম্মৎ সাগরিকা ও তৃষ্ণা রানী। নেপালের গোল দুটি করেছেন আনিশা রায় ও মীনা দিউবা।
দুই ম্যাচে ২ জয়ে ৬ পয়েন্ট বাংলাদেশের। যথারীতি পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে রয়েছে স্বাগতিকরা। গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে বসুন্ধরা কিংসের মাঠ হয়ে পড়েছে একেবারে খেলার অনুপযুক্ত। এই এবড়ো খেবড়ো মাঠে শুরু থেকেই আক্রমণে ওঠে বাংলাদেশ।
যদিও প্রথম ম্যাচের একাদশ থেকে এদিন দুটি পরিবর্তন এনেছেন কোচ পিটার বাটলার। বাদ পড়েছেন উমহেলা মারমা ও রুপা আক্তার। দলে ঢুকেছেন বর্ণা খাতুন ও শান্তি মারডি। দলে পরিবর্তন এলেও আক্রমণে কমতি ছিল না বাংলাদেশের।
ম্যাচের ১৪ মিনিটে প্রথম গোল পেয়ে যায় বাংলাদেশ। বাঁ প্রান্ত দিয়ে সাগরিকা বল নিয়ে বক্সে ঢোকেন। তিনি বল বাড়িয়ে দেন মুনকির কাছে। ততক্ষণে নেপালি গোলরক্ষক সুজাতা তামাং পজিশন ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। তারপরও মুনকির শট গড়িয়ে জালে ঢুকছিল। কিন্তু সেখান থেকে আসায় প্লেসিং করেন। নেপালের ডিফেন্ডার গঙ্গা রোকায়া গোললাইন সেভ করেন। কিন্তু ফিরতি বলে প্লেসিংয়ে গোল করেন শিখা (১-০)।
নেপাল গোল শোধের দারুণ সুযোগ পেয়েছিল ২৮ মিনিটে। বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন নেপালের ফরোয়ার্ড সেনু। তাকে ফেলে দিয়ে পূজা হলুদ কার্ড দেখেন। এরপর বক্সের সামনে থেকে ফ্রি কিক নেন সুশিলা কেসি। কিন্তু সুশিলার ফ্রি কিক ক্রসবারে লেগে ফেরে। ম্যাচে দ্বিতীয়বার বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ৩৭ মিনিটে। সাগরিকা করেন দ্বিতীয় গোল। বক্সের মধ্যে অবশ্য বল নিয়ে প্রথমে শিখা চেষ্টা করেন গোল দিতে। তবে নেপালি গোলরক্ষক সুজাতা চেষ্টা করেন বল থামাতে। কিন্তু ?দুবার চেষ্টা করেও বল থামাতে পারেননি। ফিরতি বলে সাগরিকার প্লেসিংয়ে হয়েছে ২-০। অবশ্য বিরতির খানিক আগে নেপালের আরেক ফরোয়ার্ড মীনা দিউবা বাংলাদেশের গোলরক্ষক স্বর্ণা রানীকে একা পেয়েও গোল দিতে পারেননি। কর্ণারের বিনিময়ে সে যাত্রায় বাঁচিয়ে দেন স্বর্ণা। বিরতির পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে মাঠে। যে উত্তেজনা গড়ায় হাতাহাতি ও মারামারিতে। এর জেরে বাংলাদেশের সাগরিকা ও নেপালের সিমরানকে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছে। ঘটনার শুরু ৫৫ মিনিটে। বল নিয়ে সাগরিকা নেপালের বক্সে ঢোকার সময় তাকে টেনে ধরেন সিমরান। সাগরিকা মাটিতে পড়ে যান। এরপর উঠেই সিমরান ও সাগরিকা মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। এরপর সতীর্থরা এসে থামান। এরপরই লাল কার্ডের ঘটনা ঘটেছে। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য আফঈদা খন্দকার, বর্ণা খাতুনকে তুলে নেন কোচ পিটার বাটলার। তাদের বদলি নামেন তৃষ্ণা রানী, রুমা আক্তার নামেন। আফঈদার তুলে নেওয়া যে দলের জন্য ভুল কৌশল ছিল সেটা পয়েন্ট খুইয়ে বুঝেছেন কোচ বাটলার। অবশ্য মাঠে নেমে তৃষ্ণা বেশ কবার ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু গোলের দেখা পাননি। কখনও বল মেরেছেন বাইরে। কখনও গোল সেভ করেছেন নেপালের গোলরক্ষক। গোল শোধে চেষ্টা ছিল নেপালের সব সময়। সেই সুযোগ আসে দ্বিতীয়ার্ধে। ম্যাচের ৭৫ মিনিটে পেনাল্টি পায় নেপাল।