এক সময় যমুনা নদীতে জেগে ওঠা চরের বিস্তীর্ণ জমি পতিত পড়ে থাকতো বছরের পর বছর। চিক চিক করা বালুর আস্তরণ একসময় ঢাকা পড়ে যেতো প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া কাঁশবন কিংবা ঝাউগাছে। কিন্তু একটা সময়ে এ চরের আগাছা পরিষ্কার ও কাঁশবন-ঝাউগাছ কেটে নদীপাড়ের সংগ্রামী মানুষরা তৈরি করে নিয়েছেন জমি। তাদের কঠোর হাতের কোমল ছোঁয়ায় সেই মাটি থেকে ফলছে ‘সোনা’। এ সময়ের পতিত ও আগাছাপূর্ণ বগুড়ার ধুনট উপজেলার যুমনা নদীর বিস্তীর্ণ চরজুড়ে এখন চলছে নানান জাতের ফসলের আবাদ। যমুনা নদীর চরাঞ্চলের কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তিল চাষ। চরের মাটি বেলে ও বেলে-দোঁআশ হওয়ায় কম পরিশ্রমে তিলের ভালো ফলন পাওয়া যায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলন হয়। বাজারে তিলের চাহিদাও রয়েছে। অল্প শ্রমে ও কম খরচে সব ধরনের মাটিতে উৎপাদন হওয়ায় তিল চাষে আগ্রহ বেড়েছে বগুড়ার ধনুটের কৃষকদের। ভোজ্য তেল হিসাবে তিলের চাহিদা বেড়েছে। তিল থেকে তৈরি নাড়ু, খাজা, মোয়া ও নানা মুখরোচক খাবারও জনপ্রিয়। পাশাপাশি প্রসাধনী শিল্পে তিল তেল ব্যবহার হচ্ছে। সব মিলিয়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন আশা করছেন কৃষকরা। সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, যমুনার চরে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি তিলের আবাদও হয়েছে। যত দূর চোখ যায়, শুধু তিলের সবুজ গাছের সমাহার। বেশ কিছু অংশে তিল পরিপক্ব হয়ে উঠেছে। কয়েক দিনের মধ্যে সংগ্রহ করবে চাষিরা। চলতি মৌসুমে যমুনার চরাঞ্চলে প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে তিলের চাষ হয়েছে।
বিঘাপ্রতি ৯ থেকে ১০ মণ তিল পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। চরের তিলচাষি রফিক, জালাল, আফজালসহ অনেকে জানান, আগের তুলনায় চলতি মৌসুমে চরাঞ্চলে তিলের আবাদ তুলনামূলক ভালো। তিল চাষ সহজ ও লাভজনক। জমির মাটি সমান করে বীজ ছিটানোর তিন মাস পর সেচ, সার, কীটনাশক ছাড়াই তিল ঘরে তোলা যায়। বৈশাখী চরের জসীম বলেন, তিল চাষে সার ও কীটনাশক লাগে না বললেই চলে। গরু-ছাগলে তিল তেমন একটা খায় না, তাই রক্ষণাবেক্ষণে খরচ হয় না। তিল চাষের জন্য আমরা কৃষকদের উৎসাহ দিয়েছিলেন তারা। কৃষকরা পরামর্শ গ্রহণ করে তিল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। কম খরচে অল্প সময়ে ভালো ফলন হওয়ায় তাদের এ চাষে আগ্রহ বেড়েছে। উপজেলায় মোট ৩ হেক্টর জমিতে তিলের চাষ হয়েছে।