জ্বালানি খাতের নীতিবিষয়ক একটি কমিশন গঠন করাসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) উদ্যোগে ‘কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র: অভিজ্ঞতা কী বলে?’ শীর্ষক সেমিনারে এসব দাবি জানানো হয়। বাপা’র সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহ-সভাপতি, জাতিসংঘের উন্নয়ন ও গবেষণা বিভাগের সাবেক প্রধান ড. নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ ও সিইজিআইএস-এর পরিচালক মোহাম্মদ মোক্তারুজ্জামান। মূল প্রবন্ধে ড. নজরুল ইসলাম বলেন, বাপা, বেন, তেল-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটি ও অন্যান্য মহলের সমালোচনা সত্ত্বেও সরকার জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে সবচেয়ে দূষণকারী আমদানি করা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু করে। দেশের অভ্যন্তরীণ গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন এবং ব্যবহারের প্রতি আগ্রহের অভাব, নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতি গুরুত্বের অভাব, বৃহদাকার বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর অতি নির্ভরশীলতা এবং স্পর্শকাতর পরিবেশ-সম্পন্ন এলাকার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করে নেয়া এই প্রকল্পগুলোর ক্ষতির প্রভাব এখন ধীরে ধীরে প্রত্যক্ষ হচ্ছে। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, হাসিনার সরকারের আমলে জ্বালানি খাতের লুটপাট ও দুর্নীতির তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ সময় জাতীয় সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ব্যবস্থা করা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের প্রতি বর্তমান সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। একইসঙ্গে গণট্রাইব্যুনাল করে জ্বালানি খাতের লুটপাট ও দুর্নীতির তদন্ত করে দ্রুত বিচারের দাবি জানান তিনি। অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ফসিল ফুয়েলের দীর্ঘমেয়াদি সুফল নেগেটিভ। কয়লা তার মধ্যে অন্যতম। অপর দিকে গ্যাসে জ্বালানি উৎপাদনে নেট বেনিফিট অনেক বেশি ও পরিবেশ সহনশীল। তাহলে কেন আমরা গ্যাসের বদলে কয়লাভিত্তিক প্রকল্প চালু করেছি একের পর এক। সেমিনারে বাপা’র পক্ষ থেকে জানানো দাবি ও সুপারিশগুলো হলো : জ্বালানি খাতের নীতি বিষয়ক একটি কমিশন গঠন করতে হবে; উচ্ছেদের শিকার স্থানীয় জনগণকে তাদের প্রকৃত অর্থ প্রদান করতে হবে; সন্তোষজনক বিকল্প জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে; কয়লা থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে; দেশের ভেতর জাতীয় সক্ষমতার অধীনে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান বাড়াতে হবে; দেশজুড়ে বিস্তৃত মাঝারি আকারের সরকারি এবং বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দক্ষ সমাহারের মাধ্যমে স্থায়িত্বশীল জ্বালানি ও বিদ্যুতের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে এবং গণট্রাইব্যুনাল করে জ্বালানি খাতের লুটপাট ও দুর্নীতির তদন্ত করে দ্রুত বিচার করতে হবে। সেমিনারে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকার ভুক্তভোগী মো. মহসিন, পায়রা এলাকার ভুক্তভোগী জে এম মাহবুবুল আলম এবং রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকার ভুক্তভোগী এসএম সবুর রানা উপস্থিত থেকে সেখানকার বর্তমান অবস্থার প্রকৃত চিত্র বর্ণনা করেন।