চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তাপমাত্রা মোটামুটি সহনীয় থাকলেও গত বৃহস্পতিবার থেকে তাপ ক্রমেই বাড়তে শুরু করেছে। গত শুক্রবার তা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়। তীব্র তাপপ্রবাহ গতকাল শনিবার আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। এই তীব্র তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিন অনুযায়ী, এমন তাপমাত্রা আজ রোববার পর্যন্ত থাকতে পারে। আগামীকাল সোমবার থেকে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। গতকাল চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ। বাতাসের আর্দ্রতা মাত্র ২৩ শতাংশ। গত দুই দিন ধরেই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে চুয়াডাঙ্গায়। ক্রমাগত বাড়ছে তাপমাত্রার পারদ। অন্যদিকে, ঢাকায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তাপমাত্রা ৩৮-৩৯.৯ ডিগ্রি হলে সেটাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়।
এদিকে গত তিন দিন থেকেই দেশে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কোথাও মাঝারি, কোথাও মৃদু আবার কোথাও কোথাও তাপপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করছে। গত শুক্রবার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের কোথাও কোথাও তীব্র তাপপ্রবাহ বইতে পারে।
গতকাল আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, তাপমাত্রার এ ঊর্ধ্বগতি রোববারও থাকতে পারে। তবে রোববার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। গতকাল বিকালে আবহাওয়াবিদ মো. শাহিনুল ইসলাম জানান, আজ রোববার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসময় দেশের দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। সারা দেশে চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক আলতাব হোসেন বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে জেলার ওপর দিয়ে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই।’ তিনি জানান, সূর্যের তীব্রতা এত বেশি যে গরম আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে।
তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে সকাল থেকেই শহরের রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে পড়ে। সূর্যের তাপে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। অনেকের শরীরেও তাপের কারণে জ্বালা-পোড়া অনুভূত হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তাপপ্রবাহে প্রয়োজনে বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহার করতে হবে। প্রতি এক ঘণ্টা পর পর বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। গরমে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে। অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’
খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে তাপপ্রবাহ এখন সবচেয়ে বেশি। এর সঙ্গে চট্টগ্রাম, বরিশাল বিভাগেও তাপপ্রবাহ আছে। এর প্রভাবে ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগে তাপপ্রবাহ অনুভূত হচ্ছে। এই তাপপ্রবাহ আগামীকাল সোমবার ধীরে ধীরে কমে আসতে পারে। ওই দিন থেকে বৃষ্টি ও কালবৈশাখি হতে পারে। গতকাল শনিবার আবহাওয়া অধিদপ্তর এই পূর্বাভাস দিয়েছে। আগামী ১৩ মে পর্যন্ত আবহাওয়া পরিস্থিতির কথা জানিয়েছে অধিদপ্তর। তাতে বলা হয়েছে, শনিবার সারা দেশে তাপপ্রবাহ চলমান থাকবে এবং রাতের তাপমাত্রা বাড়তে পারে। রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেটে হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে।
আজ রোববার দিনে ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতে ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমতে পারে। কিছু জায়গায় তাপপ্রবাহ প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর পরের দুই দিন সোম ও মঙ্গলবারেও একই প্রবণতার কথা জানানো হয়েছে। তবে তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ থেকে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।