ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জোয়ারের ধাক্কায় বিলীন সৈকতের ঝাউগাছ

* নিম্নচাপের প্রভাবে ভেসে গেছে ৮০ ও উপড়ে গেছে ২০০ ঝাউগাছ * স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করলে ঝাউবাগান রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে
জোয়ারের ধাক্কায় বিলীন সৈকতের ঝাউগাছ

প্রতিবছর জোয়ার ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজার উপকূলবাসীর রক্ষাকবচ ও সৌন্দর্য বর্ধনকারী ঝাউ বাগান বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জোয়ারের ঢেউয়ের তোড়ে গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে, উপড়ে পড়ছে এসব ঝাউগাছ। বনবিভাগ জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ঢেউয়ের তোড়ে ভসে গেছে ৮০টি ও উপড়ে গেছে ২০০ ঝাউগাছ। স্থায়ী বাঁধ না থাকলে আগামীতে ঝাউবাগান রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগে কক্সবাজার রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. হাবিবুল হক। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, কক্সবাজার সদর রেঞ্জের নাজিরারটেক থেকে শীলখালী পর্যন্ত ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে ২০১৭-১৮ সাল পর্যন্ত ৪৮৫ হেক্টর বালিয়াড়িতে ঝাউগাছের চারা রোপণ করা হয়। বর্তমানে সেখানে অর্ধেকের মতো ঝাউগাছ রয়েছে। ৪৮৫ হেক্টরের মধ্যে বর্তমানে ৪০ থেকে ৫০ হেক্টর জমিতে ঝাউগাছ রয়েছে। এছাড়া ইনানী, হোয়াক্যং, শীলখালী ও টেকনাফ রেঞ্জের আওতাধীন ঝাউ বাগান নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। তবে সবচেয়ে সৌন্দর্য বর্ধনকারী পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ সৈকতের হিমছড়ি থেকে নাজিরারটেক পর্যন্ত প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে ঝাউবীথি।

বনবিভাগের তথ্য সূত্র বলছে, কক্সবাজার সদর রেঞ্জের নাজিরারটেক থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত ১৯৬১-৬২ সালে ১২ হেক্টর বালিয়াড়িতে প্রথমে সৃজন করা হয় ঝাউগাছ। ১৯৭৪ সালে ঝাউ বাগানের প্রসার ঘটানো হয়। তখন থেকেই এ ঝাউবাগান সমুদ্র পাড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করে আসছে। তবে ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড়ে অর্ধেকের বেশি বাগান বিলীন হয়।

সূত্র আরও জানায়, ১৯৯১-৯২ সালে ১২ হেক্টর বালিয়াড়িতে নতুন করে প্রায় ৩০ হাজার চারা রোপণ করা হয়। ১৯৯৬-৯৭ সালে ১১৫ হেক্টর বালিয়াড়িতে রোপণ করা হয় ৩ লক্ষাধিক ঝাউচারা। ১৯৯৭-৯৮ সালে ৪০ হেক্টরে লক্ষাধিক চারা, ১৯৯৮-৯৯ সালে ৫ হেক্টরে সাড়ে ১২ হাজার চারা, ২০০২-০৩ সালে ৮ হেক্টরে ২০ হাজার চারা, ২০০৩-০৪ সালে ৮৭ হেক্টরে ২ লাখ ১৭ হাজার চারা ও ২০১০-১১ সালে ৫ হেক্টরে সাড়ে ১২ হাজার চারা রোপণ করা হয়। প্রতি হেক্টরে আড়াই হাজার করে প্রায় ৩০০ হেক্টরে সাড়ে ৭ লক্ষাধিক ঝাউগাছ সৃজন করা হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জোয়ারের ঢেউয়ের ধাক্কায় ভাঙতে থাকে সৈকতের বালিয়াড়ি। সমুদ্রপৃষ্ঠের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারের ঢেউয়ের তোড়ে গোড়া থেকে বালু সরে যায়। এতে বিলীন হতে থাকে নয়নাভিরাম ঝাউবাগান।

কক্সবাজার রেঞ্জের কলাতলী বিট কর্মকর্তা ক্যাচিংউ মারমা জানান, স্থায়ী কোনো বাঁধ না-থাকায় সমুদ্রসৈকতের কবিতা চত্বর হইতে লাবনী পর্যন্ত সাগরপাড় এলাকায় ব্যাপক আকারে ঝাউগাছ বিলীন ও পাড় ভেঙে চলাচলের রাস্তা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। যা কক্সবাজার পর্যটন খাতের জন্য হুমকি। স্থায়ীভাবে বাঁধ তৈরি না হলে আগামী ১-২ বছরের মধ্যে ১৫-২০ ফুট জায়গা বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উক্ত এলাকায় স্থায়ী বাঁধসহ নারিকেল গাছের বাগান সৃজন করা প্রয়োজন। নারিকেল গাছের বাগান টেকসই এবং ভাঙন রোধে অনেক ভূমিকা পালন করবে মন্তব্য করেন।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘জোয়ারের সময় ঢেউয়ের ধাক্কায় ঝাউগাছের গোড়া থেকে মাটি সরে যাওয়ায় বিলীন হতে থাকে ঝাউবাগান। তবে ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৪৮৫ হেক্টর জমিতে ঝাউগাছ লাগানো হয়েছে। যদি পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা অন্য কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে উপকূল রক্ষায় সাগর তীরে আধুনিক পদ্ধতিতে কোনো বাঁধ নির্মাণ করা যেত তাহলে উপকূলবাসী রক্ষার পাশাপাশি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য বর্ধনকারী ঝাউগাছ রক্ষা পেত।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), কক্সবাজার শহর শাখার সভাপতি ইরফান উল হাসান বলেন, ঝাউগাছ কখনও উপকূলের রক্ষাকবচ হতে পারেনা। আর বালুর বাঁধ দিয়ে সাগর রক্ষার চেষ্টা আগেও সফল হয়নি। তাই পানির প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে এর সমাধান খোঁজা জরুরি। ভাঙনরোধ ও ঝাউগাছ রক্ষা করতে কেয়া গাছের পাশাপাশি নিসিন্ধা ও নেন্টেনাসহ সামুদ্রিক উদ্ভিদ সাগরের ঢেউয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠবে বালুর ডেইল। মূলত সাগরের স্রোতে বালু এসে উপকূলে জমা হয়ে সৈকত তৈরি হয়। এসব গাছ লাগানোর ফলে বালুর ডেইল সমুদ্রপাড়ে বেড়িবাঁধ তৈরি করবে। এতে সমুদ্রের আকার বড় হবে, ফিরে আসবে জীববৈচিত্র্য।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত