ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

দিনাজপুরে ৭০০ কোটি টাকার লিচুর বাজার

দিনাজপুরে ৭০০ কোটি টাকার লিচুর বাজার

লিচুর জন্য বিখ্যাত জেলা দিনাজপুর। যেখানকার উৎপাদিত লিচু স্বাদ, গন্ধ, রসালো ও মিষ্টতায় ভরপুর। এই জেলার লিচু দেশব্যাপী বিখ্যাত ও সমাদৃত। এই সময়টাতে ভরপুর বাজার জমে উঠেছে জেলার কালিতলা এলাকায়। যেখানে লিচু কিনতে এসে তৃপ্তির কথা জানালেও কৃষকরা বলছেন, গত বছরের তুলনা দাম কম। এরপরও এই বছরে জেলাতে ৭০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে কৃষি বিভাগ। এবার দিনাজপুরের উৎপাদিত বেদেনা জাতের লিচুকে ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যাতে এই লিচুতে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ী ও কৃষকরা। বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগের দাবি জানিয়েছেন তারা। দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব মতে, এই জেলাতে পাঁচ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগানে উৎপাদিত হবে ২৫ হাজার মেট্রিক টন লিচু। যেটি সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বাগানগুলোর গাছে গাছে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে টসটসে লাল লিচুতে ভরে উঠেছে। শুধু বাগানগুলোতেই নয়, এখন বাজারেও পর্যাপ্ত পরিমাণে শুরু হয়েছে লিচুর আমদানি। এই জেলায় মাদ্রাজি, বোম্বাই, বেদেনা, চায়না থ্রি, হাঁড়িয়া, কাঁঠালি, মোজাফফরী জাতের লিচুর উৎপাদন হয়। তার মধ্যে এবারে এই জেলার উৎপাদিত বেদেনা জাতের লিচু স্বাদ, গন্ধ ও মিষ্টতায় ভরপুর হওয়ায় এই লিচুর চাহিদা একটু বেশিই। তবে গত বছরের তুলনায় এবারে দাম কম, যাতে খুশি ক্রেতা সাধারণ। বাজার ঘুরে জানা গেছে, এবার বোম্বাই জাতের লিচু শ’ বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩৫০, মাদ্রাজি জাতের লিচু ২০০-২৫০, বেদেনা জাতের লিচু ৪০০-৬০০, চায়না থ্রি জাতের লিচু ৮০০-১০০০, হাঁড়িয়া জাতের লিচু ৪০০-৬০০, কাঁঠালি জাতের লিচু ৫০০-৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে গত বছরে এই সময়ে লিচুর দাম বেশি ছিল। যদিও কয়েকদিন ধরেই লিচুর দাম ধীরে ধীরে বাড়ছে। জিআই পণ্যের স্বীকৃতি মিলেছে, তাই আগ্রহ আরও বেড়েছে। কালিতলা ফল বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা সবসময় বেশি। তবে গত বছরে প্রচণ্ড রোদের কারণে আমরা ব্যবসা করে সুবিধা করতে পারিনি। লিচু কিনে ঢাকায় পাঠাতে পাঠাতেই অর্ধেক লিচু নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। এবারে ব্যবসা করে সুবিধা হচ্ছে, লিচু নষ্ট হয়ে যাওয়ার হার কম। সেই সঙ্গে দামও কম। কালিতলা ফল বাজারের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই বাজারে এবারে দাম কম হলেও কয়েক দিনের মধ্যে দাম বেড়ে যাবে। লিচু বিক্রি করতে আসা সদর উপজেলার উলিপুর এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবারে আবহাওয়া ভালো তাই ফলনও ভালো হয়েছে। দাম কম হলেও খুশি যে, এবারে লিচু রোদের কারণে নষ্ট হয়নি। তাই গত বছরের তুলনায় লাভ হবে।

কৃষকদের দাবি ছিল লিচুকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং বিদেশে রপ্তানি করা। এবারে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি মিলেছে, কিন্তু বিদেশে রপ্তানি এখনও হয়নি। যদি এই লিচু বিদেশে রপ্তানি হয় তাহলে আমাদের লাভ হবে, দাম বেশি পাব। তাই সরকার এই পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশা করছি।দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) আনিছুজ্জামান বলেন, এবারে আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ ছিল না, পোকামাড়কের আক্রমণও ছিল না। এজন্য উৎপাদন বেশি হয়েছে। দামও ভালো রয়েছে। ফলে কৃষকরা লাভবান হবেন। এই জেলার উৎপাদিত বেদেনা জাতের লিচু জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় সারাবিশ্বে ছড়িয়ে যাবে। জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় এই জেলার লিচু বিদেশে রপ্তানি করলে কৃষকরা আরও বেশি লাভবান হতে পারবেন। এ বছর যে পরিমাণে লিচুর উৎপাদন হয়েছে তাতে করে আবহাওয়াসহ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কৃষকদের ঘরে যাবে ৭০০ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত