দেশের ভেতরে ‘মব’ সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্ন ঘটানানোর চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ‘মব’ তৈরি করে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নূরুল হুদাকে বাসা থেকে ধরে এনে জুতার মালা পরিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার পর এক বিবৃতিতে এই ঘোষণা দিয়েছে সরকার। গতকাল রোববার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তির ওপর আক্রমণ ও তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা বেআইনি, আইনের শাসনের পরিপন্থী ও ফৌজদারি অপরাধ। ‘মব’ সৃষ্টি করে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী সবাইকে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ নূরুল হুদাকে একটি সুনির্দিষ্ট মামলায় রাজধানীর উত্তরা থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, এ সময় ‘মব’ কর্তৃক সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও অভিযুক্তকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। দেশের সব নাগরিকের প্রতি আবারও আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত সব ব্যক্তির বিচার দেশের আইন মেনে হবে। বিচারাধীন বিষয় ও ব্যক্তির ব্যাপারে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সব নাগরিককে সহনশীল ভূমিকা পালনের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাকে হর্টিকালচার সেন্টার পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নূরুল হুদাকে আটকের সময় যেভাবে মব জাস্টিস করা হয়েছে তা কাম্য নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে এ ধরনের ঘটনায় বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলে তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গতকাল সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল গ্রেফতারের যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক নয়। তাকে এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। উত্তরা থেকে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদা আটক হয়েছেন। তাকে আটকের সময় যেভাবে মব জাস্টিস করা হয়েছে তা কাম্য নয়।
সচিবালয়ে পরিবেশ দিবস নিয়ে ব্রিফিংয়ের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আদর্শ পরিবেশে এই সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেনি। নন ভায়োলেন্স (অহিংস) ভাবে মব বন্ধ করার চেষ্টা করছে সরকার। সরকার শুধু বিবৃতি দিয়ে বসে থাকেনি। এ নিয়ে ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নুরুল হুদাকে মবের (জনতার উশৃঙ্খলা) মাধ্যমে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সরকার নিন্দা জানিয়েছে বলে জানান পরিবেশ উপদেষ্টা। এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, বিএনপি ‘মব’ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার মব ঘটনার সঙ্গে দলের কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত করে ডিসিপ্লেনারি অ্যাকশন নেওয়া হবে। গতকাল এ তথ্য জানান বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা মব কালচারে বিশ্বাস করি না। আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অবিরাম সংগ্রাম করে যাচ্ছি। আমরা চাই দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং আদালতের রায় বাস্তবায়ন হবে, বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা থাকবে।
তিনি বলেন, কে এম নূরুল হুদার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার গ্রেফতার প্রক্রিয়া এবং বিচার প্রক্রিয়া আইনগতভাবে যথাযথভাবে পরিচালিত হবে এটা আমরা প্রত্যাশা করি। তবে তার ওপরে যে অবমাননাকর ব্যবহার করা হয়েছে এটা আমরা সমর্থন করি না। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। যদি বিএনপির কোনও নেতাকর্মী এই ঘটনায় জড়িত থাকে, তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ডিসিপ্লেনারি অ্যাকশন (শৃঙ্খলাবিরোধী ব্যবস্থা) আমরা নেবো, এটা আমাদের অবস্থান। বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা চাই কোনও ব্যক্তি যত বড় অপরাধীই হোন না কেন, তার আইনি এবং সাংবিধানিক অধিকার যেন অক্ষুণ্ন থাকে। যত বড় অপরাধীই হোন না কেন, তার আইনি ও সাংবিধানিক অধিকার যেন ক্ষুণ্ন না হয়।
কে এম নূরুল হুদার দলীয়করণের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য এবং নির্বাচনি ব্যবস্থাকে পুরোপুরি বিনষ্ট করে দেওয়ার জন্য যে কয়জন ব্যক্তি দায়ী তার মধ্যে কে এম নূরুল হুদা অন্যতম। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য কয়েকটি রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে পুরোপুরি কলুষিত এবং ধ্বংস করার জন্য আরও কয়েকজন ব্যক্তি দায়ী। যেমন- সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক। তবে আমরা কখনোই সেই অপসংস্কৃতিতে বিশ্বাস করি না, আমরা মব কালচারে বিশ্বাস করি না।