নিম্ন ও মধ্যবিত্তের সুবিধার জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। কিছুটা বিরতির পর গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে পুনরায় এ কার্যক্রম শুরু করেছে সংস্থাটি। পণ্য কিনতে এসে টিসিবির অব্যবস্থাপনায় পণ্য না পাওয়ার অনিশ্চয়তা ও মারামারিসহ বিভিন্নভাবে হয়রানির স্বীকার হচ্ছে নিম্ন আয়ের ভোক্তারা। ক্রেতারা টিসিবির পণ্য বিক্রি নিয়ে জানান ক্রেতার তুলনায় পণ্য কম। টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা ৫৮৮ টাকা খরচ করে ২ লিটার ভোজ্যতেল (সয়াবিন বা কুঁড়ার তেল), ২ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি চিনি, ২ কেজি ছোলা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারেন। প্রতিটি ট্রাকে ২০০ জনের পণ্য থাকে। অথচ প্রায় প্রতিটি ট্রাকের পেছনেই ৩০০-৪০০ মানুষের সারি দেখা যায়। জনবহুল আবাসিক এলাকায় মানুষের সংখ্যা আরো বেশি থাকে। টিসিবির ট্রাক থেকে এসব পণ্য কিনলে একজন ভোক্তার ৪০০ টাকার মতো সাশ্রয় হয়। মূলত এই অর্থ সাশ্রয়ের জন্যই তীব্র ভিড় সত্ত্বেও মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। কিন্তু ক্রেতার তুলনায় পণ্য কম থাকায় শেষ পর্যন্ত অনেকে পণ্য কিনতে না পেরে খালি হাতে ফেরত যান। আবার স্থান ও সময় জানেন না ক্রেতারা। টিসিবির নিবন্ধিত ডিলার বা সরবরাহকারীরা ট্রাকে করে প্রতিদিন ঢাকা শহরের ৫০টি ও চট্টগ্রামের ২০টি স্থানে ভর্তুকি মূল্যের পণ্য বিক্রি করেন। তবে প্রতিদিন একই জায়গায় পণ্য বিক্রি হয় না; একই ওয়ার্ডের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ট্রাক যায়। ফলে সীমিত আয়ের অনেক ক্রেতা ঠিক কোথায় পণ্য বিক্রি হচ্ছে, তা জানেন না। আবার লম্বা সময় নিয়ে ট্রাক খোঁজাও তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এ বিষয়ে টিসিবির বক্তব্য হচ্ছে, একই স্থানে প্রতিদিন পণ্য দিলে নির্দিষ্ট কিছু মানুষ বারবার পণ্য কেনার সুযোগ নেন। এটি এড়াতে প্রতিদিনই স্থান বদল করা হয়। তবে টিসিবির স্থান পরিবর্তনের এই পদ্ধতি খুব কার্যকর হয় না। সরেজমিন দেখা গেছে, স্থান পরিবর্তন সত্ত্বেও বিভিন্ন এলাকায় নির্দিষ্ট কিছু মানুষ প্রতিদিন টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কেনেন। এই মানুষেরা জোটবদ্ধ হয়ে সম্ভাব্য বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেন। ট্রাক এলে একে অন্যকে খবর পাঠান। তাদের অনেকে এসব পণ্য বাইরে বেশি দামে বিক্রি করেন বলেও অভিযোগ আছে। অন্যদিকে কর্মজীবী, সীমিত বা নিম্ন আয়ের মানুষেরা স্থান ও সময় না জানায় টিসিবির পণ্য কেনার সুযোগ সেভাবে পান না। এছাড়া টোকেন ছাড়াও বিক্রি হচ্ছে পণ্য। টিসিবির ট্রাকের পেছনে নারী ও পুরুষেরা সাধারণত দুটি সারিতে দাঁড়ান। অনেক পরিবেশক ট্রাক নিয়ে আসার পর উপস্থিত মানুষের মধ্যে টোকেন বিতরণ করেন। তখন টোকেনের সিরিয়াল অনুসারে ক্রেতারা পণ্য কেনেন। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক পরিবেশক টোকেন ছাড়াই পণ্য বিক্রি করেন। টোকেন না থাকলে অনেক ক্রেতা আগে পণ্য নেয়ার জন্য লাইন ভেঙে সামনে চলে যান। তাতেই শুরু হয় হট্টগোল। আর বিশৃঙ্খলা, মারামারির সাথে যুক্ত হয় খারাপ ব্যবহার। টিসিবির ট্রাকের পেছনে আরেকটি নিয়মিত চিত্র হচ্ছে বিশৃঙ্খলা, ধাক্কাধাক্কি ও মারামারির ঘটনা।
প্রতিটি স্থানেই পণ্য বিক্রিতে চরম বিশৃঙ্খলা ও ক্রেতাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা দেখা গেছে। এই চিত্র সবচেয়ে প্রকট নারীদের সারিতে। টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয় বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে। তাদের অভিযোগ, ট্রাকের বিক্রেতারা (পরিবেশক, চালক ও সহকারী) সাধারণ ক্রেতাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এর মধ্যে গালাগাল যেন নিয়মিত ঘটনা।
কখনও কখনও পানি ছুড়ে মারেন এবং সজোরে ধাক্কা দেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবির শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ক্রেতাদের অভিযোগ আমরা জেনেছি। তাদের সঙ্গে যেন দুর্ব্যবহার করা না হয়, সে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে পণ্যের তুলনায় মানুষের ভিড় বেশি থাকায় বিশৃঙ্খলা এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। সে জন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নেয়ার কথা ভাবছি।’