ঢাকা সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হজরত মুসা (আ.)-এর জীবনের শিক্ষণীয় ঘটনা

সাঈদ আহমাদ
হজরত মুসা (আ.)-এর জীবনের শিক্ষণীয় ঘটনা

পবিত্র কোরআনে বহুল আলোচিত নবী-রাসুলগণের মধ্যে হজরত মুসা (আ.) অন্যতম। তিনি ইসরাইলি বংশের জন্য প্রেরিত হন। তার জীবনীতে রয়েছে সংগ্রাম, নেতৃত্ব এবং ঈমানের ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত। এ মহান নবীর বরেণ্য জীবন থেকে দুটি শিক্ষামূলক ঘটনা উল্লেখ করা হলো।

এক. আশ্চর্য এক পাথর : হজরত মুসা (আ.) অত্যন্ত লাজুক ছিলেন। উন্নত চরিত্রের বৈশিষ্ট্য হিসেবে সর্বদা শরীর ঢেকে রাখতেন। কিন্তু বনী ইসরাঈলের কিছু লোক তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে মিথ্যা অপবাদ রটনা করত। তারা ধারণা করত, তার শরীরে কোনো ত্রুটি আছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পাথরের মাধ্যমে তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ এবং শারীরিকভাবে নিখুঁত প্রমাণিত হন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুসা (আ.) অত্যন্ত লজ্জাশীল ছিলেন। সব সময় শরীর আবৃত রাখতেন। তার দেহের কোন অংশ খোলা দেখা যেত না। শরীর উন্মুক্ত রাখতে তিনি লজ্জাবোধ করতেন। বনী ইসরাঈলের কিছু সংখ্যক লোক তাকে খুব কষ্ট দিত। তারা বলত, তিনি যে শরীরকে এত বেশি ঢেকে রাখেন, তার একমাত্র কারণ হলো, তার শরীরে কোনো দোষ আছে। হয়ত শ্বেত রোগ অথবা একশিরা বা অন্য কোন রোগ আছে। আল্লাহপাক ইচ্ছা করলেন মুসা (আ.) সম্পর্কে তারা যে অপবাদ রটিয়েছে তা থেকে তাকে মুক্ত করবেন।

একদিন নির্জন স্থানে ঝর্ণার ধারে গিয়ে তিনি একাকী হলেন এবং তার পরনের কাপড় খুলে একটি পাথরের উপর রাখলেন, তারপর গোসল করলেন, গোসল সেরে যখনই তিনি কাপড় নেয়ার জন্য সেদিকে এগিয়ে গেলেন তার কাপড়সহ পাথরটি ছুটে চলল। এরপর মুসা (আ.) তার লাঠি হাতে নিয়ে পাথরটির পেছনে পেছনে ছুঁটলেন। তিনি বলতে লাগলেন, আমার কাপড় হে পাথর! হে পাথর! পরিশেষে পাথরটি বনী ইসরাঈলের একটি জনসমাবেশে গিয়ে পৌঁছল। তখন তারা মুসা (আ.) কে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখল। আর বুঝে গেল, তিনি আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এবং তারা তাকে যে অপবাদ দিয়েছিল সে সব দোষ থেকে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত। যখন পাথরটি থামল, তখন মুসা (আ.) তার কাপড় নিয়ে পরিধান করলেন এবং তার হাতের লাঠি দিয়ে পাথরটিকে জোরে জোরে আঘাত করতে লাগলেন।

আল্লাহর কসম! এতে পাথরটিতে তিন, চার, কিংবা পাঁচটি আঘাতের দাগ পড়ে গেল। আর এটাই হলো আল্লাহর এ বাণীর মর্ম- হে মোমিনগণ! তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা মুসা (আ.)-কে কষ্ট দিয়েছিল। এরপর আল্লাহ তাকে নির্দোষ প্রমাণিত করেন তা থেকে, যা তারা রটনা করেছিল। আর তিনি ছিলেন আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান। (বোখারি : ৩১৬৫)। এ ঘটনা থেকে শিক্ষা হলো, লজ্জাশীল হওয়া এবং খোলামেলা না থেকে শরীর ঢেকে রাখা নবীদের বৈশিষ্ট্য। তাই যথা সম্ভব সতর ঢাকার পরেও বাকি শরীর ঢেকে রাখা উচিত।

দুই. ফেরেশতাকে থাপ্পড় দেয়া : হজরত মুসা (আ.)-এর কাছে হঠাৎ করে মৃত্যুর ফেরেশতা জান কবজ করতে এলে প্রথমে তিনি মেনে নিতে রাজি হননি। আল্লাহতায়ালা পরে তাকে আরও জীবন দেয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু মুসা (আ.) বুঝতে পারেন মৃত্যু অবধারিত এবং এটি যেকোনো মুহূর্তেই আসতে পারে। এজন্য তিনি দুনিয়ায় দীর্ঘায়ু চাওয়ার পরিবর্তে আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নেয়াকে প্রাধান্য দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মওতের ফেরেশতাকে মুসা (আ.)- এর কাছে তার (জান কবযের) জন্য পাঠানো হয়েছিল। ফেরেশতা যখন তার কাছে এলেন, তিনি তার মুখে থাপ্পড় মারলেন। তখন ফেরেশতা তার রবের কাছে ফিরে গিয়ে বললেন, আপনি আমাকে এমন এক বান্দার কাছে পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না। আল্লাহ বললেন, তুমি তার কাছে ফিরে যাও এবং তাকে বল, সে যেন তার একটি হাত একটি গরুর পিঠে রাখে, তার হাত যতগুলো পশম ডাকবে তার প্রতিটি পশমের পরিবর্তে তাকে এক বছর করে হায়াত দেয়া হবে।

মুসা (আ.) বললেন, হে রব! তারপর কী হবে? আল্লাহ বললেন, তারপর মৃত্যু হবে।

মুসা (আ.) বললেন, এখনই হোক। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, তখন তিনি আল্লাহর কাছে আরজ করলেন, তাকে যেন ‘আরদে মুকাদ্দাস’ বা পবিত্র ভূমি থেকে পাথর নিক্ষেপের দূরত্বের সমান স্থানে পৌঁছে দেয়া হয়। হাদিস বর্ণনাকারী বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি যদি সেখানে থাকতাম, তাহলে অবশ্যই আমি তোমাদের রাস্তার পার্শ্বে লাল টিলার নিচে কবরটি দেখিয়ে দিতাম। (বোখারি : ৩১৬৮)। মুসা আ.-এর এ ঘটনা থেকে বোঝা যায়, যে যত প্রতাপশালী বা আল্লাহর প্রিয় বান্দা-ই হোক তার মৃত্যু অবধারিত। মরণ কাউকে ছাড়বে না। তাই সময় থাকতে পরকালের প্রস্তুতি নেয়া জরুরি।

লেখক : খতিব ও শিক্ষক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত