ঢাক ঢোল পিটিয়ে বলা হয়েছিল এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ভিন্ন মাত্রা পাবে। ছাড়িয়ে যাবে আগের সব আসরকে। সে লক্ষ্যে একাদশ আসরের উদ্বোধনটা হয়েছিল জমকালো আয়োজনে। তারপর যা ঘটেছে, তাতে সত্যি এবারের বিপিএল আগের সব আসরকে ছাড়িয়ে গেছে! টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার পথে কিন্তু এখনও নির্ধারিত পারিশ্রমিক পাননি ক্রিকেটাররা। বিশেষ করে দুর্বার রাজশাহী ও চিটাগং কিংসের খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। বিষয়টি মোটেও ভালো লাগেনি মেহেদী হাসান মিরাজের। যদিও তার দল খুলনা টাইগার্সে কোনো অভিযোগ এখনও পর্যন্ত নেই পারিশ্রমিক নিয়ে। তবে অন্য কয়েকটি দলে পারিশ্রমিক নিয়ে যা হচ্ছে, তা মেনে নিতে পারছেন না মিরাজ। তার মতে, এসব ঠিকঠাক সামলাতে না পারলে দেশের ক্রিকেটেরই বদনাম হবে। ক্রিকেট বোর্ডকে ক্রিকেটারদের পাশে থাকার অনুরোধও জানালেন খুলনা টাইগার্স অধিনায়ক।
বিপিএলে এবার সমস্যার শুরুটা হয়েছিল টিকেট নিয়ে। টিকেট দেরিতে ছাড়া এবং সঠিক তথ্য না পেয়ে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের সামনে মিছিল-স্লোগান হয়েছে, টিকেট কাউন্টারে ভাঙচুরসহ আগুন দেয়া হয়েছে, বিপিএল শুরুর দিন স্টেডিয়ামের মূল ফটক ভেঙে দর্শক ঢুকে যাওয়ার নজিরবিহীন ঘটনাও দেখা গেছে। টুর্নামেন্ট শুরুর পর আস্তে আস্তে মাঠে প্রচুর দর্শকের উপস্থিতি ও উইকেটের ভালো মানের কারণে টুর্নামেন্ট বেশ জমে উঠবে বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু পারিশ্রমিকের সমস্যা প্রকাশ্য হওয়ার পর টুর্নামেন্টের অন্য সবকিছু আড়াল হয়ে গেছে। দুর্বার রাজশাহী ও চিটাগং কিংস দলের পারিশ্রমিক নিয়ে নানা বিতর্কের ঝড় চলছে এখনও। সামগ্রিক এই সবকিছু নিয়েই দুর্ভাবনার জায়গা দেখেন মিরাজ। খুলনা টাইগার্সের অনুশীলন শেষে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় দলের এই অলরাউন্ডার বললেন, দেশের দুর্নাম হওয়ার মতো কিছু যেন না হয়। ‘আমার কাছে মনে হয়, প্রত্যেকটি মানুষেরই সাপোর্ট করা উচিত। নতুন একটা পরিবেশ যদি আসে, এটা একটু কঠিন হয়। এবার একটু ভিন্ন হচ্ছে। আমার কাছে মনে হয়, প্রত্যেকটি মানুষের পাশে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। যে সমস্যাগুলো হচ্ছে, আমাদের ক্রিকেট বোর্ডে যারা আছেন, যারা দায়িত্বে আছেন, আশা করি এটা সুন্দরভাবে সামলাবেন।’
খুলনা টাইগার্সের অধিনায়ক বলেন, ‘দিনশেষে, আমাদের সবারই কিন্তু বদনাম হবে। আমরা যদি ঠিকঠাকভাবে এই জিনিসগুলো সামলাতে না পারি, ঠিকভাবে যদি কাজে লাগাতে না পারি, তাহলে দিনশেষে আমাদের ক্রিকেটের বদনাম হবে। আমাদের সবারই বদনাম হবে। আমাদের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব এটা, বাংলাদেশ ক্রিকেটের যেন বদনাম না হয়। আমরা যেভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেট খেলছি, আমরা ভালো করলে সবাই বাহবা দেয়, আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব সেটা বজায় রাখা।’ নিয়ম অনুযায়ী, এতদিনের পারিশ্রমিকের ৭৫ শতাংশ পেয়ে যাওয়ার কথা ক্রিকেটারদের। মিরাজরাও এখনও তা পাননি। তবে শিগগিরই পেয়ে যাবেন বলে আশ্বস্ত হয়েছেন তারা।
মিরাজ বলেন, ‘আমাদের দলে এর মধ্যেই ৪০ শতাংশ পেমেন্ট করে দিয়েছে। ইকবাল ভাইয়ের (দলের কর্ণধার) সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। তিনি বলেছেন, এই সপ্তাহের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ দিয়ে দেবেন। প্রায় ৭০ শতাংশ আমরা পেয়ে যাব।’ নিজেদের সমস্যা না থাকলেও রাজশাহী, চট্টগ্রাম দলের ক্রিকেটাদের জন্য খারাপ লাগা কাজ করছে মিরাজের মনে। তার মতে, গোটা দেশের সামগ্রিক অবস্থার প্রভাবই পড়েছে বিপিএলে। ‘অবশ্যই এটা খারাপ লাগছে। দিনশেষে আমরা খেলোয়াড়রা ক্রিকেট খেলি তো টাকার জন্য। পারিশ্রমিক যদি না পাই, প্রতিটি খেলোয়াড়ের জন্য এটা খারাপ।
যেহেতু ক্রিকেট বোর্ড আমাদের অভিভাবক, আশা করি তারা এটা নিয়ে কথা বলবেন এবং আমাদের দায়িত্ব নিয়ে কথা বলবেন সবার সঙ্গে, যারা ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক আছেন। কোনো সমস্যা হলে ক্রিকেট বোর্ড হয়তো সমাধান দেবে।’ তিনি বলেন, ‘সবাই যদি চিন্তা করেন, এখন যেহেতু দেশ থিতু নেই, সেজন্য হয়তো এই সমস্যাগুলো হচ্ছে। এখানে যারা দায়িত্বে আছে, যারা টুর্নামেন্ট চালাচ্ছে, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল, তারা এটা নিয়ে কাজ করবেন এবং আশা করি তারা সুন্দর একটি সমাধান দেবেন এবং তারা ক্রিকেটারদের পাশে থাকবেন, আমার মনে হয়।’