বিশ্বের অগণিত ক্রিকেট ভক্তের দৃষ্টি এখন পাকিস্তান আর সংযুক্ত আরব আমিরাকে। এই দুই দেশে বসতে যাচ্ছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসর। হাইব্রিড মডেলের এই টুর্নামেন্ট মাঠে গড়াতে আর এক সপ্তাহও বাকি নেই। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্দা উঠছে বৈশ্বিক এই আসরের। এবার শ্রেষ্ঠত্ব দেখাবে কারা, শিরোপাই বা জিতবে কে এসব নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অনেকে ভবিষ্যদ্বাণীও করে ফেলেছেন। একদিন আগেই নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স। টুর্নামেন্ট সামনে রেখে অনুশীলনে ঘাটতির আক্ষেপ থাকলেও এই ক্যারিবিয়ানের কণ্ঠে বেজেছে সম্ভাবনার কথা। সিমন্স বলেছেন, ‘ক্যারিবিয়ানে ওয়ানডে সিরিজ ভালো না হলেও আমরা শেষটা ভালো করেছি। আমি মনে করি আমাদের খুব ভালো সম্ভাবনা আছে, যদি সামর্থ্যরে সবটা দিতে পারি।’ গুরুর কথার সঙ্গে মিল পাওয়া গেল শিষ্যের কথাতেও। টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বেশ জোর দিয়েই বললেন, এবার শিরোপার মঞ্চে দাঁড়িয়ে উঁচিয়ে ধরতে চান ট্রফি। আট বছর আগে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। তাই এবার ফাইনালে খেলা এবং চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখাটা দোষের কিছু নয়।
২০১৭ সালে হওয়া ওই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে গ্রুপ পর্বে মাত্র একটি ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের সঙ্গে হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে প- হয়। শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে ভারতের কাছে হেরে থামে অভিযান। প্রথমবারের মতো কোন আইসিসি ইভেন্টে সেমিফাইনালে খেলার পথটা যেমনই হোক সিঁড়ি বেয়ে উঁচুতে ওঠায় মূল কথা। সেই থেকে কিছুটা আত্মবিশ্বাস এবার নিতে পারে বাংলাদেশ দল।
সেই আত্মবিশ্বাস থেকে গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিক ফটোসেশন শেষে সংবাদ সম্মেলনে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য রাখলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, ‘আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দলের এই সক্ষমতা আছে। সবাই এটাই চাচ্ছে, এটাই বিশ্বাস করে আমাদের ওই সক্ষমতা আছে। আমাদের রিজিকে আল্লাহ কী লিখে রেখেছেন আমরা জানি না। আমার কাছে মনে হয় আমরা ওইভাবে মেহনত করছি, আমাদের সততার সঙ্গে কাজ করছি এবং প্রতিটা খেলোয়াড় বিশ্বাস করি আমাদের যে লক্ষ্য, ওই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।’
র্যাংকিংয়ে সেরা আটে থাকায় এবারও খেলার টিকিট পেয়েছে বাংলাদেশ। এবার বাংলাদেশ কতদূর যাবে? নিজেদের সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের ফরম্যাট পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে সেরা সময়ে নেই বাংলাদেশ। তবুও অধিনায়কের স্বপ্ন দেখালেন আকাশ ছোঁয়ার। ২০১৭ আসরের পর বাংলাদেশ দলকে নিয়ে আশার বেলুন অনেক উঁচুতেই উঠেছিল। ২০২৩ বিশ্বকাপে তাই শেষ চারের আশা রেখেছিল বাংলাদেশ। অথচ ওই আসর থেকে নিজেদের সেরা ফরম্যাটে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স পড়তির দিকে। এছাড়া গত কিছুদিনে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা ছিলেন টি-টোয়েন্টির আমেজে। সেখান থেকে ওয়ানডে ফরম্যাটের আইসিসি ইভেন্টে দ্রুত মানিয়ে নেওয়া কতটা সহজ। নাজমুল শান্ত বলছেন বাকি কিছুদিনে তা সম্ভব। এমনিতে গত কয়েকদিনের অনুশীলনে ম্যাচ সিনারিও নিয়ে কাজ করেছে বাংলাদেশ দল। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আরো কিছুদিনের অনুশীলন এবং পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে দুবাইয়ের প্রস্তুতি ম্যাচে নিজেদের ওয়ানডে ফরম্যাটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন শান্তরা।
নাজমুল হোসেন শান্ত জানিয়েছেন, ‘আমাদের হাতে এখনো ছয়-সাতদিন আছে, এর মধ্যে আরো গুছিয়ে নিতে পারব। সংস্করণের দিক থেকে একটু তো ভিন্নতা থাকেই। কিন্তু যেভাবে ব্যাটসম্যানরা খেলেছে, এই টুর্নামেন্টে উইকেটটা ভালো ছিল, আমরা যে কন্ডিশনে খেলবো আশা করছি এর চেয়ে ভালো উইকেট থাকবে। ব্যাটসম্যানরা ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে। কীভাবে ৫০-৬০-৭০ থেকে ১০০-১৩০ করতে পারে, এটা গুরুত্বপূর্ণ। বোলাররাও এই উইকেটে ভালো বল করেছে।’
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে মাঠে নামার আগে সংবাদ সম্মেলনে একটি কমন প্রশ্ন চলে আসে। এবারও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। এবারও প্রশ্ন উঠল সাকিব আল হাসানকে নিয়ে। সাংবাদিকদের সাকিবকে মিস করা সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে শান্ত জানান, ‘হ্যাঁ অবশ্যই মিস করব। আমরা সবাই জানি, এই উত্তর অনেক খেলোয়াড় দিয়েছে। আমরা জানি সাকিব ভাইকে মিস করব। ওনি থাকলে ভালো হতো এই উত্তর অনেকবার পেয়েছেন। আমার মনে হয় না যে, একটা এত বড় টুর্নামেন্টে যাওয়ার আগে এই প্রসঙ্গে কথা বলাটা যৌক্তিক।’