সমর্থকদের আবেগ, উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনা ছাপিয়ে রোমাঞ্চকর এক ফাইনাল উপহার দিলো রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা। এই প্রতিযোগিতার ফাইনালে এর আগে সাতবার মুখোমুখি হয়েছিল তারা। সেখানে অবশ্য রিয়ালই এগিয়ে। মুখোমুখি ফাইনালে লস ব্লাঙ্কোরা জিতেছিল চারবার, কাতালানরা তিনবার। কোপা দেল রে ফাইনালে দুই দলের অস্টমবারের সাক্ষাতে জয়ী কাতালুনিয়ারা। ২০ বারের শিরোপা জয়ী রিয়ালকে হারিয়ে কোপা দেল রের রাজা বার্সেলোনাই। রোমাঞ্চকর এল ক্লাসিকোয় রিয়ালকে ৩-২ গোলের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে হারিয়ে রেকর্ড ৩২তম কোপা দেল রে জিতল তারা। রেফারি নিয়ে তোলপাড়ই হয়েছিল ম্যাচের আগে। শনিবার রাতে কোপা দেল রে ফাইনাল শুরুর আগে সেভিয়ার প্লাজা নুয়েভায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও হল বার্সেলোনা সমর্থকদের। সেটা ছড়িয়ে পড়েছিল রিয়াল সমর্থকদের সঙ্গেও। উত্তেজনা শেষে মাঠের ফুটবলে বাজিমাত কাতালানদের।
নির্ধারিত সময়ে ২-২ গোলে সমতা ছিল ফাইনালে। বার্সার হয়ে ২৮ মিনিটে পেদ্রি আর ৮৪ মিনিটে গোল করেছিলেন ফেররান তোরেস। রিয়ালের পক্ষে ৭০ মিনিটে কিলিয়ান এমবাপ্পে আর ৭৭ মিনিটে লক্ষ্যভেদ করেন অরেলিঁও চুয়ামেনি। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ১১৫ মিনিট পর্যন্ত গোল না হওয়ায় সবাই যখন অপেক্ষা করছিলেন টাইব্রেকারের, তখনই চোখ ধাঁধানো গোল জুলস কুন্দের। ১১৬তম মিনিটে ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া বুলেট শটে গোল করে বার্সা সমর্থকদের আনন্দে ভাসান কুন্দে। ম্যাচের শেষ দিকে রেফারি লাল কার্ড দেখান রিয়ালের তিনজনকে!
১২৩তম মিনিটে কিলিয়ান এমবাপ্পে ফ্রি কিক না পাওয়ায় বেঞ্চ থেকে রেফারির প্রতি তেড়ে যাচ্ছিলেন আন্তনিও রুডিগার। সতীর্থরা টেনে থামান তাকে। ম্যাচের শেষ দিকে রিয়াল বেঞ্চ থেকে কিছু একটা ছুঁড়ে মারা হয় মাঠে রেফারি রিকার্দো দে বুর্গোস বেনগোচেয়া প্রতি। তিনি লাল কার্ড দেখান আন্তোনিও রুডিগারকে। কিছুক্ষণ পর লাল কার্ড দেখেন লুকাস ভাসকেস ও জুড বেলিংহামও। অগ্নিগর্ভ আবহেই শেষ হয় এল ক্লাসিকো।
স্প্যানিশ সুপার কাপ ফাইনালে রিয়ালকে ৫-২ গোলে হারিয়েছিল বার্সা। লা লিগায় আনচেলত্তির দলকে তারা বিধ্বস্ত করে ৪-০ গোলে। সেই তুলায় মৌসুমের তৃতীয় এল ক্লাসিকোটা ছিল জমজমাট। শুরুতে বার্সা এগিয়ে গেলেও একটা সময় লিড নিয়ে নেয় রিয়াল মাদ্রিদ। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে দুর্দান্ত জয়ে রিয়ালের বুক ভাঙে হান্সি ফ্লিকের দল।
প্রেদির গোলে বার্সা এগিয়ে যায় ২৮তম মিনিটে। ভিনিসিয়ুস বল হারানোর পর মাঝমাঠ থেকে পেদ্রিই ডান প্রান্তে লম্বা পাস দেন ইয়ামালকে। তার কাট-ব্যাকে বল পেয়ে অরক্ষিত পেদ্রি জোরাল শটে বল পাঠান জালে। ৩৫তম মিনিটে জুড বেলিংহাম জালে বল পাঠালেও অফসাইডের জন্য গোল পায়নি রিয়াল। বিরতির আগে ৬৩ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য ৯টি শট নেয় বার্সেলোনা, এর চারটি ছিল লক্ষ্যে। রিয়াল শট নিয়েছিল একটিই, যা আবার ছিল না লক্ষ্যে।
বিরতির পর বদলি নেমে খেলার ছবিটা বদলে দেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। বাড়ে রিয়ালের আক্রমণের ধার। ৭০ মিনিটে দারুণ ফ্রিকিকে সমতা ফেরান এমবাপ্পেই। এর ৭ মিনিট পর কর্নার থেকে আসা বলে চুয়ামেনির হেডারে এগিয়েও যায় রিয়াল।
৮৪তম মিনিটে মাঝমাঠ থেকে আসা ভুলে রুডিগার ও কোর্তোয়ার ভুল কাজে লাগিয়ে সমতা ফেরান তোরেস। ইনজুরি টাইমে রিয়াল ডিফেন্ডার রাউল আসেনসিওর সঙ্গে সংঘর্ষ হলে পড়ে যান রাফিনিয়া। পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি রিকার্দো দে বুর্গোস ভিএআর পেনাল্টিটি বাতিল করায় রেফারিকে দুয়ো দিচ্ছিলেন রিয়াল সমর্থকরা। উল্টো হলুদ কার্ড দেখেন রাফিনিয়া। ১০৭ মিনিটে তোরেস বল জালে বল পাঠালেও কাতালানরা গোল পায়নি অফসাইডের জন্য। এরপর ১১৬তম মিনিটে জুলস কুন্দের সেই অসাধারণ গোল। নিজেদের ডি বক্সের একটু বাইরে থেকে ব্রাহিম দিয়াসকে বল দিয়েছিলেন লুকা মদ্রিচ। সেটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া তার আগুনে গোলার শটে আনন্দে ভাসে বার্সেলোনা।