গল টেস্টে জ্বলে উঠে বড় রান পেয়েছিল বাংলাদেশের ব্যাটাররা। তবে কলম্বো টেস্টে তার উল্টোটাই দেখা গেল। অথচ আগের দিনই কলম্বোর উইকেটে গলের ব্যাটিং উইকেটের ছায়া দেখতে পেয়েছিল উভয় দলই। যে কারণে টসে জিতে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাটিং নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। লক্ষ্য ছিল স্বাগতিকদের সামনে বড় সংগ্রহ দাঁড় করানো। কিন্তু ব্যাট করতে গিয়ে অকারণ তাড়াহুড়া, অতিরিক্ত ও বাজে শট খেলার মাশুল দিয়ে একের পর এক ফিরে গেছেন লাল সবুজ দলের ব্যাটাররা। ফলে প্রথম দিনে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় শেষের দিকে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। বৃষ্টি ও আলোক স্বল্পতা মিলিয়ে খেলা হয়েছে ৭১ ওভার। তাতে ৮ উইকেট হারিয়ে ২২০ রান করেছে বাংলাদেশ। ক্রিজে আছেন তাইজুল ইসলাম ও ইবাদত হোসেন। সর্বোচ্চ ৪৬ রান এসেছে ওপেনার সাদমান ইসলামের ব্যাটে।
গতকাল বুধবার কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। খুবই রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলা শুরু করেন দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয়। কিন্তু এবারও উইকেটে স্থির হতে পারেননি বিজয়। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে আসিথা ফার্নান্দোর বলে ব্যাটের ভেতর কাণায় লেগে বোল্ড হন তিনি। ১০ বলে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন। সর্বশেষ তিন টেস্ট ইনিংসে দ্বিতীয়বার ডাক মারলেন বিজয়। আউট হওয়ার আগে লঙ্কান ডানহাতি পেসারের বলে আরও দুইবার জীবনও পান। ইনিংসের তৃতীয় আসিথার বলে বিজয়ের ক্যাচ ফেলে দেন লঙ্কান উইকেটরক্ষক কুশল মেন্ডিস। পরের বলে তৃতীয় স্লিপে আবার ক্যাচ তোলেন ডানহাতি ব্যাটার। অর্থাৎ দুটি জীবন পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি বিজয়।
এরপর উইকেটে ভালোভাবেই সেট হয়েছিলেন মুমিনুল হক। কিন্তু ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। ৩৯ বলে ২১ রান করে সাজঘরে ফেরেন ক্যাচ দিয়ে। ইনিংসের ১৭তম ওভারের প্রথম বলে লঙ্কান স্পিনার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার বলে রুম করে মারতে গিয়ে বদলি ফিল্ডার পাবান রত্মায়েকের হাতে ক্যাচ হন বাঁ-হাতি টাইগার ব্যাটার। এতে ভাঙে বাংলাদেশের দ্বিতীয় উইকেটে ৩৮ রানের জুটি। দলীয় ৪৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তৃতীয় উইকেটে ৩১ রানের জুটি করেন সাদমান ও শান্ত। কিন্তু মাত্র ২ রানের ব্যবধানে দুই সেট ব্যাটারের উইকেট খুইয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
ইনিংসের ২৮তম ওভারের শেষ বলে আউট হন শান্ত। ৩১ বলে ৮ রান করে লঙ্কান পেসার ভিশ্ব ফার্নান্দোর বলে উইকেটরক্ষক কুশল মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ হন বাংলাদেশ অধিনায়ক। দলীয় ৭৪ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর ২ রান যোগ হতেই সাজঘরের পথ ধরেন সাদমান। ২৯তম ওভারের শেষ বলে থারিন্দু রত্মায়েকের ঘূর্ণিতে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে ক্যাচ তুলে দেন টাইগার বাঁ-হাতি ব্যাটার। ৯৩ বলে ৪৬ রান করে ফেরেন সাদমান। ৩৩.২ ওভারের খেলা শেষে নেমেছিল বৃষ্টি। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বৃষ্টির শুরুর আগে ৪ উইকেটে ৯০ রান করেছিল বাংলাদেশ। প্রায় দেড় ঘণ্টা বন্ধ থাকার ফের খেলা শুরু হয়। এরপরই ভুল করে বসেন লিটন। মুশফিক আর লিটনের জুটি আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু লিটনের ভুলে সেই জুটি ৬৭ রানের বেশি বড় হয়নি।
আগের ওভারেই প্রভাত জয়সুরিয়াকে স্লগ করতে গিয়ে বল আকাশে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। একটুর জন্য সে ক্যাচ জয়সুরিয়ার হাত ফস্কে যায়। কিন্তু ভুল থেকে শিক্ষা নেননি লিটন। পরের ওভারে দিলেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ। দুই-তিনবারের চেষ্টায় সেই ক্যাচ গ্লাভসবন্দি করলেন উইকেটরক্ষক কুশল মেন্ডিস। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেই উইকেট পান বাঁ-হাতি স্পিনার সোনাল দিনুশা। ৫৬ বলে ২ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় লিটন ফেরেন ৩৪ করে। ৫ উইকেটে ১৪৪ রান নিয়ে প্রথম দিনের চা-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। শেষ সেশনে মুশফিক-মিরাজ জুটির দিকে তাকিয়ে ছিলেন সমর্থকরা। কিন্তু মুশফিকের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটার এমন ভুল করে বসলেন, যা ভীষণ দৃষ্টিকটুই ঠেকেছে। দলের বিপদের মুখে প্রিয় স্লগ সুইপ খেলে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন মুশফিক। ৭৫ বলে ৪ বাউন্ডারিতে তার ব্যাট থেকে আসে ৩৫ রান। এর আগে ব্যক্তিগত ৮ রানের মাথায় স্লগ সুইপে ক্যাচ দিয়েও জীবন পেয়েছিলেন মুশফিক। চোট কাটিয়ে দলে ফেরা মেহেদী হাসান মিরাজ বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলছিলেন। নাঈম হাসানকে নিয়ে ৫৬ বলে ৩৭ রানের একটি জুটিও গড়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু বিশ্ব ফার্নান্ডোর পেস বুঝতে না পেরে খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ দেন মিরাজ। ৪২ বলে ৩১ রানের ইনিংসে ৩টি চার হাঁকান এই অলরাউন্ডার। ২০০ এর আগে (১৯৭ রানে) ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।