
সঠিক পরিকল্পনার অভাব, অদক্ষ সাংগঠনিক কাঠামো এবং মানহীন খেলায় নামতে নামতে তলানীতে ঠেকেছিল দেশের ফুটবল। অনিশ্চয়তার মধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রবাসী ফুটবলারের সন্ধান করছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। তারপর পাওয়া যায় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা চৌধুরীকে। চলতি বছরের মার্চে ইংল্যান্ড প্রবাসী এই ফুটবলারের আগমনে নতুন করে জেগে উঠেছে লাল সবুজের ফুটবল। এই হামজা এখন দেশের ফুটবলের প্রাণ ভোমরা। তার সঙ্গে রয়েছেন কানাডার সামিত সোম, যুক্তরাষ্ট্রের জিসান আহমেদসহ আরও কয়েকজন। এছাড়া আরও অনেকে ট্রায়াল দিয়েছিলেন।
তবে এ মুহূর্তে আলোচনায় বয়সভিত্তিক বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলে খেলা এক প্রবাসী ফুটবলার। গত বছরের নভেম্বরে কম্বোডিয়ায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টের বাছাই খেলেছিল বাংলাদেশ। প্রথম প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক দলে খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান আরহাম ইসলাম। এক বছর পর তিনি অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব-২০ দলের চূড়ান্ত স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া ডিসেম্বরে মাঝামাঝি জাপানে ত্রিদেশীয় একটি সিরিজ খেলবে। সেখানে স্পেনের অনূর্ধ্ব-২০ দলও খেলবে। জাপানের জাতীয় অনূর্ধ্ব-২০ দলের পাশাপাশি জাপানের ক্লাব দলের সঙ্গেও এক ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়া সম্প্রতি ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ টুর্নামেন্ট খেলেছে। তারপর তারা নতুন উদ্যমে গড়ে ওঠার লক্ষ্যে জাপানের এই টুর্নামেন্টে ২০ জনের স্কোয়াড করেছে, যার মধ্যে ১৩ জনই অস্ট্রেলিয়ার জুনিয়র দলে অভিষেকের অপেক্ষায়। ওয়েস্টার্ন ইউনাইটেডে খেলা বাংলাদেশের আরহাম তাদের একজন।
এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টের বাছাইয়ে বাংলাদেশের ম্যানেজার ছিলেন সাবেক জাতীয় অধিনায়ক জাহিদ হাসান এমিলি। বাংলাদেশের হয়ে খেলা আরহামের অস্ট্রেলিয়ার জুনিয়র দলের চূড়ান্ত স্কোয়াডে জায়গা পাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন বাংলাদেশি অস্ট্রেলিয়া জুনিয়র দলে খেলবে, এটা খুব গর্বের। অনূর্ধ্ব-২০, এরপর-২৩, পরে জাতীয় দল। তার যে যোগ্যতা, সে একদিন অস্ট্রেলিয়া দলেও খেলতে পারে। আবার হতাশার ব্যাপার হলো, বাংলাদেশে সে অনূর্ধ্ব-১৭ দিয়ে শুরু করলেও বাস্তবতা বিবেচনায় তাকে বাংলাদেশ আর নাও পেতে পারে।’ আরহাম ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলেন। কম্বোডিয়া টুর্নামেন্টে তিনি ভালোই খেলেছিলেন। গত এক বছরে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ও ২৩ টুর্নামেন্টের বাছাই খেলেছে। সেখানে আরহামকে ডাকা হয়নি। এ নিয়ে এমিলি খানিকটা আফসোসের সুরে বলেন, ‘গত এক বছর আরহাম বা তার পরিবারের সঙ্গে ফেডারেশন যোগাযোগ রেখেছে কি না আমার জানা নেই। অনূর্ধ্ব ২৩ কিংবা অন্য টুর্নামেন্টেও তাকে খেলানোর জন্য ডাকা যেত। সে ও তার পরিবার বাংলাদেশকে প্রথম গুরুত্ব দেওয়ার কারণে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলে খেলেছে। এরপর ফেডারেশনের উচিত ছিল তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা, কারণ সে অত্যন্ত ভালো মানের খেলোয়াড়।’ কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশের ওই দলের কোচ ছিলেন বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সাইফুল বারী টিটু। তিনি পরবর্তীতে অনূর্ধ্ব-২৩ দলের কোচ হন। ওই দলে আরহাম ডাক পাননি। তখন এটা নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছিল। আজ অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-২০ দলের চূড়ান্ত স্কোয়াডে জায়গা পাওয়ার পর তিনি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন কিনা সেটা শঙ্কাজনক। তবে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর জানিয়েছেন, আরহাম ও তার বাবার সঙ্গে ফেডারেশনের যোগাযোগ রয়েছে।