কক্সবাজারে মহাসড়কের উপর পশুর হাটের কারণে ঈদে ঘরমুখী মানুষের মাঝে চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। ফলে এক ঘণ্টার পথে লাগছে কয়েক ঘণ্টা। সড়কের উপর পশুর হাটগুলোতে যানজট নিরসনে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অপরদিকে মহাসড়কের পশুর হাট বসানোয় খোদ সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তাদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, জেলার বিভিন্ন স্থানে হাটবাজার ইজারার নীতিমালা মানছেনা অনেকেই। স্ব-স্ব উপজেলার বাজার মনিটরিং এ গাফেলতির কারণে ইজারাদাররা তাদের ইচ্ছে মতো টোল আদায় করছে।
গতকাল বুধবার সরজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া, কাটির মাথা ও মরিচ্যা, ঈদগাঁও, কলঘর এলাকায় মহাসড়কের উপর পশুর হাটে বসানোর কারণে চরম যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকার সড়কের উভয় পাশে আটকা পড়েছে শতশত যানবাহন।
সরেজমিনে দেখা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ উখিয়ার মরিচ্যা পশুর হাটটি মহাসড়কের উপর। প্রায় এক কিলোমিটার সড়কে টেকনাফ-কক্সবাজারমুখী শত শত যানবাহন আটকা পড়তে দেখা যায়। এমনকি বাজারটিতে পায়ে হেটে চলাচলও কঠিন হয়ে পড়ে।
জানতে চাইলে সিএনজি চালক আমির হোসেন বলেন, ‘বিকেলে ভাড়া নিয়ে উখিয়া যাচ্ছিলাম। মরিচ্যায় পশুর হাটটি মহাসড়কের উপর হওয়ায় দীর্ঘ ২ ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ি। শুধু যাত্রীবাহী যানবাহন নয়, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সও আটকা পড়েছে।’
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরীর বলেন, ‘আপাততে যানজট নিরসনে কাজ করতে গ্রাম পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মহাসড়ক থেকে মরিচ্যার পশুর হাটটি সরানোর জন্য বাজারের আশপাশে খাসজমি খোঁজা হচ্ছে।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তথ্য সূত্র বলছে, কক্সবাজার জেলায় ৯৪টি পশুর হাট বসছে। এরমধ্যে স্থায়ী বাজার ৪৮টি, কোরবান উপলক্ষ্যে ৪৬টি। উপজেলা ভিত্তিক অনুমোদিত বাজারের সংখ্যা হলো সদরে ১৪টি, রামুতে ১৩টি, চকরিয়ায় ১৬টি, পেকুয়ায় ৮টি, উখিয়ায় ৮টি, টেকনাফে ৭টি, মহেশখালীতে ৬টি, কুতুবদিয়ায় ৬টি রয়েছে।
এদিকে কক্সবাজার সদরে ১৪টি কোরবানের পশুর হাট ইজারা হলেও প্রাণী-সম্পদ অফিসের তথ্যমতে পশুর হাট বসছে ৭টি। ইতোমধ্যে বাজারগুলো বিক্রি শুরু হয়েছে। অনেক বাজারে মিয়ানমারের গরু মহিষ সয়লাব হতে দেখা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব বাজারের উন্নয়ন তহবিলে বছরের পর বছর অলস পড়ে আছে লাখ লাখ টাকা। অর্থ পড়ে থাকলেও পশুর হাট সম্প্রসারণ বা নতুন স্থান নির্ধারণে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদগাঁও বাস স্টেশনের উত্তর পাশ দিয়ে ঈদগড়-বাইশারী সড়ক। এই সড়ক দিয়ে লামা-নাইক্ষংছড়ি উপজেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার হাজারো মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে। চলে শত শত যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী পরিবহণ।
স্থানীয়রা জানান, প্রতি শনি মঙ্গলবার বসে পশুর হাট। হাটের ভেতরে জায়গা স্বল্পতার জন্য প্রায় ১ হাজার মিটার সড়ক দখল করে চলে পশু বেচাকেনা। যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কের ওপর পশু রেখে এমনভাবে পথ আটকানো থাকে, যা দেখে যে কারও মনে হতে পারে এটি কোনো সড়ক নয়, বরং পশুর হাট। এ অবস্থায় যানবাহন চলাচলে যেমন ভোগান্তি বাড়ছে, তেমনি দুর্ভোগ বাড়ছে স্থানীয়দের। দীর্ঘদিন ধরে যানবাহন চালক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের এমন দুর্বিষহ অবস্থার কেন অবসান হচ্ছে না, সেটি জানেন না কেউ।
জানা গেছে, ঈদগাঁও উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারের মধ্যে ঈদগাঁও পশুর হাটের ইজারা মূল্য সর্বোচ্চ। অথচ গরু-ছাগলের আলাদা কোনো বাজারের ব্যবস্থা না করে দীর্ঘদিন ধরে দায়সারাভাবে সড়কেই বেচাকেনা চলছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সপ্তাহের মঙ্গলবার মহাসড়কে বসেছে পশুর হাট। হাটের দিন গরুর বর্জ্যে সড়কজুড়ে তৈরি হয় এক নোংরা পরিবেশ। হাটবারে ব্যস্ততম এই মহাসড়কে ভিড় বাড়ে যানবাহনের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তরে ঈদগাঁও বাজার। গরুর হাট হিসেবে আশপাশের কয়েক উপজেলায় যার সুনাম রয়েছে। কিন্তু বাজারের যথেষ্ট পরিমাণে নির্ধারিত জায়গা না থাকায় গরু বেচাকেনা চলে সড়কে। এই পশুর হাটে মিলিত হয়েছে রামু, চকরিয়া, নাইক্ষংছড়ি ও লামা এই চার উপজেলা। যার ফলে বাজারটির গুরুত্ব অনেক। বাস স্টেশনের মধ্য দিয়ে ঈদগাহ কলেজ গেইট পর্যন্ত রাস্তার প্রায় ১০০০ মিটার দখল করে প্রতি সপ্তাহে চলে গরু বেচাকেনা। হাট বসা সড়ক পারাপারে দুই মিনিটের মতো লাগার কথা, অথচ লাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পশুর হাটের জন্য বাধ্য হয়ে প্রতি সপ্তাহে বন্ধ রাখতে হয় সড়কের দু’পাশের দোকানপাট।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতি হাটবারে লাখ লাখ টাকা ইজারা নিয়েও বাজারের জন্য কোনো নির্ধারিত জায়গা করতে পারেনি পরিচালনা কমিটি। সড়ক দখল করে পশুর হাট বসানোর কারণে যানজট লেগে থাকে। ভোগান্তির শিকার হয় সাধারণ মানুষ।
হাটের এক ব্যবসায়ী জানান, ঈদগাঁও বাজার উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যের ইজারার হাট। অথচ দীর্ঘদিন ধরে সড়কে বসছে পশুর হাট। বাজার উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তাদের কোনো উদ্যোগ নেই।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, হাটবারে দোকান খোলা নিয়ে বিপাকে পড়েন তারা। হাট শেষে অপরিচ্ছন্ন, নোংরা বর্জ্যের গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়েন কেউ কেউ। ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা সড়কের জনদুর্ভোগ লাঘবে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
এ প্রসঙ্গে ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিমল চাকমা বলেন, ‘ঈদগাঁও পশুর হাটের জায়গা সংকট। যে কারণে বিক্রেতারা পশু নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়ান। এই বিষয়ে নিয়মিত তদারকি চলছে।’
কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, মোস্তফা মুন্সী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মহাসড়কের উপর পশুর হাট নিয়ে জেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ সভায় একাধিকবার উপস্থাপন করা হয়েছে। তবুও কোন ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। ’ তিনি বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠিও দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী মহাসড়কের উপর পশুর হাট বসানোর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ওইসব পশুর হাটগুলো দীর্ঘদিনের। তবুও বাজারগুলো সরানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘যেসব এলাকায় সড়কের উপর পশুর হাট রয়েছে, স্ব স্ব এলাকার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা পশুর হাটে যানজট নিরসনসহ অপরাধ নির্মূলে কাজ করছে। এছাড়া জালনোট শনাক্তেও প্রতিটি পশুর হাটে পুলিশের আলাদা টিম কাজ করছে।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক রুবাইয়া আফরোজ জানান, হাটবাজার ইজারার শর্তেই উল্লেখ আছে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে হাট বসানো যাবেনা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউএনওদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। তারা ব্যবস্থা নিবেন।##