পৃথিবীতে এখন কোনো কিছুর অভাব নেই, অভাব রয়েছে শুধু নৈতিকতার। মানুষের কল্যাণের জন্য নিত্য নতুন আইন করা হচ্ছে; কিন্তু সে আইন প্রয়োগ হচ্ছে অনৈতিকভাবে। আর এর প্রধান মাধ্যম হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এ মাধ্যমটাই এখন সবার কাছে বেশ প্রয়োজনীয় এবং পরিচিত একটি মাধ্যম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বলতে আমরা সবাই হয়তো ফেসবুক বুঝি। তবে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, হুয়াটস অ্যাপ, ভাইবার, স্কাইপি, ইমো, পিনস্টারসহ বিভিন্ন মাধ্যম এখন আমাদের অ্যান্ড্রয়েড ফোনে চলে এসেছে। এদের প্রত্যেকটার মাধ্যমেই যোগাযোগ করা সম্ভব। তাই এদের প্রত্যেকটাকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বলা হয়ে থাকে। তবে আমাদের কাছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া যা-ই বলি, এটা হচ্ছে ফেসবুক। আর এ ফেসবুকই এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। এখন যে কোনো কিছুই ফেসবুকের মাধ্যমে সহজেই ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। আমরা যাই খুঁজি, সব এখন ফেসবুকে পেয়ে যাচ্ছি। একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম প্লাটফর্ম হিসেবে আমরা সবাই এ ফেসবুক ব্যবহার করি। অনেকে ব্যবসায়িক আলাপও সারেন এর মাধ্যমে। কিন্তু এখন সেই জায়গাটা স্বল্প সময়ে দখল করছে অশ্লীল ভিডিওতে। অথচ সমাজ জীবনে মানুষের সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন তা হলো নৈতিক মূল্যবোধ। আর নৈতিক মূল্যবোধ শুরু হয় পরিবার থেকে এবং নৈতিক শিক্ষা এর মূল ভিত্তি। কারণ সভ্যতা, ভদ্রতা, নৈতিকতা, কৃতজ্ঞতা বোধ, অপরের প্রতি শ্রদ্ধা-স্নেহ, পরোপকার, উদার মানসিকতাণ্ডএগুলো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে খুব বেশি অর্জন করা যায় না। এগুলোর ভিত্তি প্রোথিত হয় সামাজিক মূল্যবোধ লালনপালন ও সুশিক্ষার মাধ্যমে। মানসিক বিকাশ ও নৈতিক চরিত্র গঠনে সামাজিক মূল্যবোধ ও পারিবারিক সুশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
ব্যক্তির আচার-আচরণ তথা তার চরিত্র গঠনে তার নিজস্ব সমাজের মূল্যবোধ যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। ব্যক্তি বিভিন্ন পরিবেশে কিভাবে মিশবে, স্থান-কাল পাত্র ভেদ অনুযায়ী কীভাবে আচরণ করবে, কাকে স্নেহ আর কাকে শ্রদ্ধা করবে, কাকে কীভাবে সমীহ করবে, কোন বিষয় কতটা ভক্তিভরে বা গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করতে পারবে, তার অনেকটাই তার সমাজ থেকে অর্জিত আদর্শ ও মূল্যবোধের ওপর নির্ভর করে। পরিণত বয়সে ব্যক্তি তার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে কি ভূমিকা রাখবে, সেটাও অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত হয়। আজকের তরুণরাই জাতির আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের বেড়ে ওঠা ও প্রাপ্ত শিক্ষার ওপর সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা নির্ভর করে। তাই তরুণ প্রজন্ম এবং তার ভবিষ্যৎ ও নীতি-নৈতিকতা নিয়ে বর্তমান প্রজন্মকেই ভাবতে হয়।
চলমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে তরুণ প্রজন্ম নিজে নিজে বেড়ে উঠবে এমন ভাবাটা ঠিক নয়। সুষ্ঠু ও সুপরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমে তাদের গড়ে তুলতে হয়। প্রয়োজন হয় যত্ন ও পরিচর্যার। বিগত কয়েক দশক ধরে সেই যত্ন ও পরিচর্যার অভাবেই সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক অবক্ষয, নতুন প্রজন্ম ধাবিত হচ্ছে অধঃপতনের দিকে। বর্তমান সময়টি ফেসবুক, ইন্টারনেটের। এ যুগে নিজেদের চরিত্র ঠিক রাখা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপারই বটে। বর্তমানে পরিবার ও সমাজের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে চরিত্রহীনতার দিকটি বিশেষভাবে ফুটে উঠে। ঘুষ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, ধর্ষণ, মাদকের ছোবল ইত্যাদি সমাজকে কলুষিত করে তুলেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আজকাল কী দেখছি আমরা?
ফেসবুকে রিলসের নামে যা চলছে, তা যেন এক ধরনের প্রতিযোগিতাকে কতটা উলঙ্গ হতে পারে, কে কতটা অশ্লীল হতে পারে, কে কত কম সময়ে বেশি ভিউ পেতে পারে। শুধু বিনোদনের নামে নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে শরীর দেখিয়ে, নৈতিকতার সবসীমা লঙ্ঘন করে মানুষের নজর কাড়ার যে চেষ্টা, তা আমাদের সমাজকে এক ভয়াবহ জায়গার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ভাবনার বিষয় হলো, যারা এসব ভিডিও বানাচ্ছেন, তারা কি একবারও নিজেদের সন্তান, পরিবার বা কাছের মানুষদের কথা ভাবছেন? ভাবছেন, এই কনটেন্ট তাদের সামনে গেলে তারা কী ভাববে, কী শিখবে?
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের অনেকের কাছে এখন আর এসবের কোনো গুরুত্ব নেই। বরং নিজেদের মা, স্বামী কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যরাও এসব ভিডিও তৈরিতে উৎসাহ দিচ্ছেন বা নিজেরাই অংশ নিচ্ছেন। তখন আর সমাজ বা পরিবারের চোখে কী দেখাবে- সে বিবেচনা যেন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। আসলে টাকার মোহ আর খ্যাতির নেশায় আমরা ভুলে যাচ্ছি সামাজিক দায়বদ্ধতা। একটি মেয়ে যখন অশ্লীল পোজ দিচ্ছে, একটি ছেলে যখন বিকৃত রুচির ভিডিও বানাচ্ছে, তখন তারা শুধু নিজেরাই নষ্ট হচ্ছে না- পুরো সমাজকে বিষিয়ে দিচ্ছে। এখানে শুধু ব্যক্তির ব্যাপার নয়, এটি একটি প্রজন্মের মানসিকতার সংকট। আমরা যদি এখনই সচেতন না হই, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নৈতিকতা বলতে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, অনেকেই এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে ভিউ-ই সর্বস্ব। ভিউ মানেই টাকা, আর টাকা মানেই সাফল্য। এই একচোখা দর্শনে আমরা নীতি-নৈতিকতা, সংস্কৃতি, সামাজিক দায়বদ্ধতা- সব কিছুকেই জলাঞ্জলি দিচ্ছি। যেখানে একসময় পরিবার মানে ছিল মমতা, লজ্জা, মূল্যবোধ- সেখানে এখন কিছু পরিবারের সদস্যই হয়ে উঠছে অশ্লীল কনটেন্ট তৈরির সহযোগী।
প্রযুক্তি আমাদের নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে; কিন্তু সেটিকে আমরা যদি অন্ধভাবে শুধুই স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার বানাই, তাহলে সামাজিক অবক্ষয় অনিবার্য। আমাদের দরকার এখন সচেতনতা, আত্মসমালোচনা এবং দায়িত্বশীল ব্যবহার। ভিউয়ের পেছনে ছুটতে ছুটতে যদি আমরা নিজেদের হারিয়ে ফেলি, তাহলে যেটুকু জনপ্রিয়তা বা অর্থ আমরা অর্জন করি, সেটাও একদিন হয়ে উঠবে শূন্যতার প্রতীক। অন্যদিকে জ্ঞানের পৃথক শাখা হিসেবে ব্যবসা নীতিবিদ্যার যাত্রা গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে। ব্যবহারিক নীতিবিদ্যার শাখা হিসেবে গত কয়েক দশকে ব্যবসা নীতিবিদ্যা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে বিস্তর। যদিও ব্যবসা ও নীতিবিদ্যাকে আপাতদৃষ্টিতে বিরোধাত্মক বলে প্রতীয়মান হয়; কিন্তু উত্তর- আধুনিক সময়ের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে টেকসই সমাজের জন্য টেকসই ব্যবসার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আর টেকসই ব্যবসা তখনই সম্ভব যখন ব্যবসা ও নীতিবিদ্যা পাশাপাশি সহাবস্থান করবে। ব্যবসা নীতিবিদ্যা বলতে সাধারণ অর্থে ব্যবসাসংক্রান্ত বিষয়াদির নীতিবিদ্যক আলোচনাকে বোঝায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দাউদ খান তার পিএইচডি অভিসন্দর্ভে ব্যবসা নীতিবিদ্যার সংজ্ঞায় উল্লেখ করেন, ব্যবসা নীতিবিদ্যা হলো প্রায়োগিক নীতিবিদ্যার একটি বিশেষ শাখা, যেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত মানুষের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির ঔচিত্য-অনৌচিত্য, ন্যায়ত্ব-অন্যায়ত্ব, ভালোত্ব-মন্দত্ব প্রভৃতি মূল্যায়ন করা হয়। অর্থাৎ ব্যবসার ক্ষেত্রে ভালো ব্যবস্থাকে গ্রহণ এবং মন্দ ব্যবস্থাকে বর্জন করাই ব্যবসা নীতিবিদ্যা। নীতিবিদ্যার ধ্রুপদি তত্ত্বগুলো পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে ব্যবসায় সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতাকে ব্যাখ্যা করা যায় এভাবে-নৈতিকতার অন্যতম একটি আলোচনার বিষয় উপযোগবাদ।
ব্রিটিশ দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিল ও জেরেমি বেন্থাম এ তত্ত্বের প্রবক্তা। উপযোগবাদী তত্ত্ব অনুসারে সমাজে এমন কাজ পরিচালনা করা উচিত যেন অধিকসংখ্যক মানুষের সর্বোচ্চ পরিমাণ সুখ নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসার ক্ষেত্রে উপযোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে শুধু আত্মস্বার্থমূলক দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্য করা যায়। সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে উপযোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে ব্যবসা পরিচালনা করলে অধিকাংশ মানুষ উপকৃত হবে। উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বর্তমানে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিজনিত সংকট মোকাবিলায় নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত সবাইকে নৈতিক ও দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। কেননা, আমাদের ভুললে চলবে না যে মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে বসবাসরত প্রত্যেক মানুষের অন্যের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। ব্যবসার ক্ষেত্রে মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি নৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতাকে আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। মানুষ নিজ নৈতিকতা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে না।
মানুষের একমাত্র চিন্তা স্বার্থ আর স্বার্থ। আত্মীয়তা, দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব প্রভৃতি বিকিয়ে দেয় ‘স্বার্থের’ কারণে। নিজ স্বার্থ হাসিল করে মানুষ ভোগ-বিলাসের জন্য আরো পেতে চায়, যে পাওয়ার কোনো শেষ নেই; কিন্তু সে প্রাপ্তি অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। মানুষের জীবন, ক্ষমতা ও সম্পদ সম্পূর্ণভাবে একটি ক্ষণস্থায়ী বিষয় এবং অত্যন্ত ভঙ্গুর। এ উপার্জিত সম্পদ ও ভোগ-বিলাসের জন্য পরকালে তো বটেই, ইহকালেও অনেক লাঞ্ছনা ভোগ করতে হয়। সম্পদ ও ক্ষমতাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। ইন্টারনেট মানুষের জীবনকে সহজ করে দিলেও এর অপব্যবহার সমাজকে ভাঙনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক সবাই ফেসবুক ব্যবহার করছে। তরুণ-তরুণীরা আবার ইনস্টাগ্রামও ব্যবহার করে। এ সব মাধ্যমে আপনি চাইলেই অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিতে পারেন আবার এ সব দেখতেও পারেন।
সার্চবক্সে আপনি যা-ই সার্চ দেবেন তা-ই পাবেন। মূলত এ সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পরিচালিত হয় অন্যদেশ থেকে এবং এখানে সারা বিশ্বের মানুষ যুক্ত থাকে। তাই এখানে অশ্লীলতা বন্ধ করা বেশ কঠিন। যদিও প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানটি চাইলে এ সব অশ্লীলতা বন্ধ করতে পারে। এ ছাড়া আমাদের তরুণ-তরুণীদের এদিক থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন নৈতিকতা এবং ধর্মীয় নীতি অনুসরণ করা। অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের গাইড করা। তবেই আগামী প্রজন্ম এ অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকবে। নয়তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীলতার যে ছড়াছড়ি তাতে এ ভয়ংকর ব্যাধি থেকে বাঁচা বেশ কঠিন।
তরুণদের জীবন উন্নত করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। আত্মপ্রকাশ, সৃজনশীলতা, আত্মণ্ডউন্নতি সৃষ্টি করাসহ সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের সঙ্গে মানুষের ইতিবাচক সংযোগ স্থাপন করা এবং বিশ্বে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। যদি কি না আমরা ইতিবাচকভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি। তরুণদের জন্য দায়িত্বশীলভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ওপর সোশ্যাল মিডিয়ার সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাবগুলো সম্পর্কে তাদের সচেতন করা দরকার। এর অর্থ হলো- সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ওপর তাদের জন্য সীমা নির্ধারণ করা। এছাড়া যদি তারা অনলাইনে হয়রানির শিকার হয় তাৎক্ষণিক আইনি সাহায্য নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। একই সঙ্গে এটা শেখানো উচিত যে, তারা যেন কোনোভাবেই অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেয়। সর্বোপরি, সোশ্যাল মিডিয়াতে তারা যে তথ্য শেয়ার করে সে সম্পর্কেও সচেতন হওয়া।
লেখক : গবেষক ও কলাম লেখক