
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংসদীয় আসনের খসড়া সীমানা নিয়ে দাবি-আপত্তির শুনানিতে নির্বাচন কমিশনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের পক্ষে-বিপক্ষে বিএনপির দুই পক্ষের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এর আগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও একই জায়গায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের হাতাহাতি হয়।
রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুরে প্রথম দিনের শুনানিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন ও অন্য নির্বাচন কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনে দুপুর পৌনে ১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপির দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন।
এসময় নির্বাচন কর্মকর্তারা দুই পক্ষকেই থামানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ইসি কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে ইসি সচিব ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের জন্য শুনানি শেষ করেন এবং তাদের শুনানি কক্ষ ত্যাগ করার অনুরোধ জানান।
মারামারির পর শুনানিতে উপস্থিত থাকা বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১৫ বছর যে বিএনপির জন্য লড়াই করলাম, তারাই এখন আমাকে ধাক্কা দেয়। ঠিক আছে, ধাক্কার বদলে তো ধাক্কা আসবেই।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনে আমরা প্রেজেন্ট (উপস্থাপন) করেছি। জনসংখ্যা বিবেচনায় নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা সঠিক সিদ্ধান্ত। আমার বিষয়গুলো আমি নিজে প্রেজেন্ট করবো, তাই করেছি।
রুমিন ফারহানা অভিযোগ করেন, আশা করেছিলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে যিনি আছেন তিনি গুন্ডাপান্ডা নিয়ে ইসিতে ঢুকবেন না। কিন্তু তারা গুন্ডা নিয়ে ইসিতে এসেছেন। এই আসনের প্রার্থী তার গুন্ডাপান্ডা নিয়ে ইসিতে এসে মারামারি করেছেন- এটা খুবই লজ্জাজনক। এতে কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
এনসিপি’র নেতা-কর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উনি যেহেতু পরিচিত মুখ নন, সুতরাং উনি জামায়াত না এনসিপি আমার জানা নেই। তবে ওনার লোকজন প্রথমে আমাকে ধাক্কা দিয়েছে। আমার লোকজন তো বসে থাকবে না, কারণ আমি একজন নারী। আমার লোকজনকে মারধর করেছে, তখন আমার লোকজন জবাব দিয়েছে।
এ ঘটনায় এনসিপির তিনজন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন দলটির কর্মীরা। তারা হলেন– এনসিপি নেতা প্রকৌশলী আমিনুল হক চৌধুরী, মুস্তফা সুমন ও আতাউল্লাহ।
সীমানা পুনর্নির্ধারণ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২: এ আসনটি ২০২৪ সালে ছিল সরাইল ও আশুগঞ্জ নিয়ে। এবার করা হয়েছে সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা এবং বিজয়নগর উপজেলার বুধস্তি, চান্দুয়া ও হরষপুর ইউনিয়ন নিয়ে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩: এ আসনটি ২০২৪ সালে ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও বিজয়নগর মিলে। এবার করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর এবং বিজয়নগর উপজেলার ইছাপুর, চম্পানগর, পত্তন, দক্ষিণ সিংগারবিল, বিষ্ণপুর, চর ইসলামপুর ও পাহাড়পুর ইউনিয়ন নিয়ে।
এদিন ইসিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের খসড়া প্রকাশের পর পক্ষে বিপক্ষে আবেদন জমা পড়ে।
শুনানিতে অংশ নিয়ে বিএনপির রুমিন ফারহানা ইসির প্রকাশিত খসড়ার পক্ষে তার যুক্তি তুলে ধরেন। আর অন্যান্য বেশ কয়েকজন খসড়ার বিপক্ষে তাদের অবস্থান তুলে ধরেন।
খসড়ার বিপক্ষে থাকা শুনানিতে অংশ নেওয়া নেতারা জানান, বিজয়নগর উপজেলা থেকে তিনটি ইউনিয়ন (বুধস্তি, চান্দুয়া ও হরষপুর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে যুক্ত করা হয়েছে। তারা উপজেলা অখণ্ড চায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী রুমিন ফারহানা ইসিতে তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হলো এখানে একটি মারামারি হয়েছে। আমি যেহেতু একজন আইনজীবী, আমি মনে করেছি, আমার কেস আমি নিজেই প্রেজেন্ট করবো। সো আমার কেস আমি প্রেজেন্ট করেছি।...ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ এর যিনি প্রার্থী তিনি সদলবলে ২০-২৫ জন মিলে গুন্ডাপান্ডার মতো আচরণ করেছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক, অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমি মনে করি কমিশনের যে গাম্ভীর্য এবং যে সম্মান সেটার সঙ্গে এটা যায় না।