অনলাইন সংস্করণ
১৮:২১, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থায় দ্বিতীয় দিনেও আশাব্যঞ্জক কোনো অগ্রগতি হয়নি। সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে তার মস্তিষ্কের ফোলা (সেরিব্রাল ইডেমা) আগের তুলনায় বেড়েছে এবং হৃদস্পন্দনও স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে তার চিকিৎসায় গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ড।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউ ও এইচডিইউ কো-অর্ডিনেটর এবং সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. জাফর ইকবাল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, এভারকেয়ার হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন হাদির সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, তার মস্তিষ্কের ফোলা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি।
মেডিকেল বোর্ড জানায়, গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সার্জিক্যাল অপারেশন সম্পন্ন হওয়ার পর তাকে উন্নত চিকিৎসা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ১৪ ডিসেম্বর চিকিৎসার দ্বিতীয় দিনে পুনরায় তার শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করা হলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ ও ফোলাজনিত ঝুঁকি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
চিকিৎসকদের মতে, ব্রেন স্টেমে আঘাত এবং বাড়তি সেরিব্রাল ইডেমার কারণে রোগীর রক্তচাপে ওঠানামা হচ্ছে। একইসঙ্গে আজ তার হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। তবে রক্তচাপ ও হৃদযন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল সাপোর্ট অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে, ফুসফুসের কার্যকারিতা ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি বা অবনতি হয়নি। চেস্ট ড্রেইন টিউব সচল রয়েছে।
মেডিকেল বোর্ড জানায়, হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা আপাতত বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে ব্রেন ইনজুরির কারণে শরীরের হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ায় প্রতি ঘণ্টায় ইউরিন উৎপাদনে তারতম্য হচ্ছে। এজন্য এসিড-বেস ব্যালেন্স, ফ্লুইড ও ইলেক্ট্রোলাইট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তক্ষরণের ভারসাম্যহীনতা বর্তমানে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও জানানো হয়। একইসঙ্গে ব্লাড সুগার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যা এ ধরনের সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে একটি বড় ক্লিনিক্যাল চ্যালেঞ্জ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ওসমান হাদীর সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও সমন্বয়ের মাধ্যমে তাকে সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। পরিবার অথবা পরিবারের মাধ্যমে সরকার চাইলে তাকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মেডিকেল বোর্ড সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
এদিকে, অপ্রয়োজনে হাসপাতালে ভিড় না করা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। একই সঙ্গে হাদির দ্রুত আরোগ্যের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।
মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ডের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রাইমারি কনসালটেন্ট ডা. আলিউজ্জামান জোয়ার্দার, আইসিইউ কনসালটেন্ট ডা. মো. জাফর ইকবালসহ নিউরোসার্জারি, নিউরোমেডিসিন, অ্যানেস্থেসিয়া, কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজি, রেসপিরেটরি মেডিসিন, কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি, বক্ষব্যাধি সার্জারি, অর্থোপেডিক্স, নাক-কান-গলা ও হেমাটোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্টরা।
মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে আছেন— ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, ডা. লুতফুল আজিজ, ডা. জিল্লুর রহমান, ডা. এ কে এম রেজা, ডা. মাসুম কামাল খান, ডা. জিয়াউল হক, ডা. খন্দকার মাহবুবুর রহমান, ডা. এস এম হাসান শাহরিয়ার, ডা. জুলফিকার হায়দার, ডা. শাহিনুর রহমান, ডা. আতিয়ার রহমান ও ডা. একরাম উদ্দৌলা। সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন এভারকেয়ার হাসপাতালের ডিএমএস ডা. আরিফ মাহমুদ।
উল্লেখ্য, শরিফ ওসমান হাদি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক এবং সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এর মুখপাত্র। তিনি ঢাকার ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা। ওসমান হাদি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং এ লক্ষ্যে নিয়মিত গণসংযোগ করছিলেন।
গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা দুই আততায়ী চলন্ত রিকশায় থাকা হাদির মাথায় গুলি করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সেখানেই তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।