প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ঈমান। এছাড়া কেউ মোমিন হতে পারে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রাসুল মোমিনদের কাছে নিজেদের প্রাণের চেয়ে প্রিয়।’ (সুরা আহজাব : ৬)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের কেউ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে মাতাপিতা, সন্তানসন্ততি ও সব মানুষ অপেক্ষা অধিক প্রিয় হব।’ (বোখারি : ১৪)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে, সে ঈমানের স্বাদ পাবে। (প্রথমটি হলো) আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তার কাছে সর্বাধিক প্রিয় হওয়া।’ (মুসলিম : ৬৭)।
মহাসাফল্যের মূল চাবিকাঠি : নবীজি (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা যেমন ঈমান ও আমলের পূর্ণতা লাভের মাধ্যম, তেমনি পরকালে মহাসাফল্যের মূল চাবিকাঠি। মোমিনের চূড়ান্ত আকাঙ্ক্ষা হলো পরকালে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গ লাভ করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ব্যক্তি যাকে ভালোবাসবে, তার সঙ্গেই তার হাশর হবে।’ (মুসলিম : ২৬৪০)। নবীজি (সা.)-কে সাহাবিরা নিজেদের সবকিছুর চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। তার ন্যূনতম ইশারায় অকাতরে বিলিয়ে দিতেন নিজেদের জানমাল।
সাহাবিদের আনন্দের কারণ : নবীজি (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ছিল তাদের প্রধান সম্বল। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, এক বেদুইন একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কেয়ামত কখন সংঘটিত হবে?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেয়ামত দিবসের জন্য তুমি কী প্রস্তুতি গ্রহণ করেছ?’ বেদুইন বলল, ‘বিশেষ কিছু করতে পারিনি। খুব বেশি নামাজও পড়িনি, রোজাও রাখতে পারিনি, তবে নিঃসন্দেহে হৃদয়ের গভীরে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালোবাসা পোষণ করি।’ তার কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘মানুষ যাকে ভালোবাসবে, কেয়ামতের দিন তার সঙ্গেই থাকবে।’ আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের ক্ষেত্রেও কি এমন হবে?’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ।’ আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.)-এর এ উত্তর শুনে সেদিন সাহাবিরা এত বেশি খুশি হয়েছিলেন, জীবনে আর কখনও তাদের এমন খুশি হতে দেখা যায়নি।’ (বোখারি : ৬১৬৭)।
নবীপ্রেমের প্রকৃত অর্থ : নবীজি (সা.)-কে ভালোবাসা মানে তার আদর্শকে ভালোবাসা। যে ব্যক্তি সত্যিকারার্থে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে ভালোবাসে, সে অবশ্যই তার পথ অনুসরণ করবে এবং তার সুন্নাহর প্রতি অনুগত হবে। সেই ভালোবাসাই তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে নবীজি (সা.)-এর সঙ্গ লাভের যোগ্য করে তুলবে। এটাই নবীপ্রেমের প্রকৃত পুরস্কার।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ি, দক্ষিণ কেরানিগঞ্জ, ঢাকা