আবু উসমান (রা.) বলেন, ‘আমি সালমান ফারসি (রা.)-এর সঙ্গে একটি গাছের নিচে ছিলাম। তিনি গাছের একটি শুকনো ডাল নিয়ে ঝাড়া দিলেন, এর কারণে গাছের পাতাগুলো ঝরে পড়ল। তারপর বললেন, হে আবু উসমান, আমি কেন এমন করলাম, জানতে চাইবেন না? আমি বললাম, কেন এমন করলেন? তিনি বললেন, আমি একবার রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে একটি গাছের নিচে ছিলাম, তখন তিনি সে গাছ থেকে একটি শুকনো ডাল নিলেন। তারপর তা ঝাড়া দিলেন, এতে পাতাগুলো পড়ে গেল। তখন বললেন, হে সালমান, কেন এমন করলাম জানতে চাইবে না? আমি বললাম, কেন এমন করলেন? উত্তরে রাসুল (সা.) বললেন, একজন মুসলমান যখন ভালোভাবে অজু করে এবং নামাজ আদায় করে তখন তার গুনাহগুলো এভাবেই ঝরে যায় যেমন- এ পাতাগুলো ঝরে পড়ল।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৯)। নামাজের উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন। নামাজ আদায়ের সময় সর্বোচ্চ মনোযোগ ও একাগ্রতা বজায় রাখা জরুরি। দৃষ্টিকে এদিক-সেদিক ফিরিয়ে দিলে নামাজের খুশু (বিনয়) ও খুজু (একাগ্রতা) ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা ইবাদতের গভীরতা ও অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যকে হ্রাস করে। পুরুষ হোক বা নারী, নামাজে দৃষ্টিসংক্রান্ত নিম্নোক্ত বিষয়গুলো পালন করা মুস্তাহাব-
দাঁড়ানো অবস্থায় : সেজদার স্থানের দিকে দৃষ্টি রাখা। রুকুতে পায়ের পাতা বা পায়ের অগ্রভাগের দিকে দৃষ্টি রাখা। সিজদায় নাকের ডগার দিকে তাকানো। তাশাহহুদে (বসার সময়) নিজের কোলের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা। সালামের সময় ডান ও বাম কাঁধের দিকে তাকানো। এইভাবে দৃষ্টি রাখলে নামাজে একাগ্রতা বজায় থাকে, মন ও হৃদয় আরও গভীরভাবে ইবাদতের সঙ্গে যুক্ত হয়। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সালাতের মধ্যে এদিক-সেদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এটি শয়তানের একটি ছোঁ মেরে নিয়ে যাওয়া। শয়তান বান্দার নামাজ থেকে (মনোযোগ) ছিনিয়ে নেয়। (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব : ৭৯০)। ইমাম কাসানি হানাফি (রহ.) বলেন, নামাজে ডানে বা বামে মুখ ফেরানো উচিত নয়। আর নামাজের আদব হলো, দাঁড়ানো অবস্থায় সেজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখা, যাতে পূর্ণ একাগ্রতা সৃষ্টি হয়, ডানে-বাঁয়ে দৃষ্টি না যায়। এটি সুন্নত। তবে কোনোভাবে দৃষ্টি চলে গেলে নামাজ ভঙ্গ হবে না। নামাজরত মুক্তাদির জন্য ইমাম সাহেবের দিকে তাকিয়ে থাকা সুন্নতবহির্ভূত কাজ। (আদদুররুল মুখতার : ১/৪৪৭)।