ঢাকা ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আত্রাই নদীর স্নিগ্ধজলে পাখির মায়াবী কুহুতান

আত্রাই নদীর স্নিগ্ধজলে পাখির মায়াবী কুহুতান

পাখির কলকাকলিতে মুখরিত নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদী। শীতের শুরু থেকেই অসংখ্য পরিযায়ী পাখি এসে আবাস গড়েছে আত্রাই নদীর কুঞ্জবন এলাকাজুড়ে। পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচির শব্দে এখন ঘুম ভাঙে নদীর দুপাড়ের মানুষের। নিরাপদে পাখিগুলোর বসবাসের জন্য আবাস করে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন। তবে এটাকে ঘিরে বিনোদনের কেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে। এতে করে এলাকায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও গড়ে উঠবে। জানা গেছে, মহাদেবপুর উপজেলা সদর থেকে এক কিলোমিটার দূরে কুঞ্জবন গ্রাম। এ গ্রামের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী। এ নদীর দুই পাড়ের রয়েছে সড়ক। আর সড়কের পাশে অসংখ্য গাছ। বয়ে যাওয়া নদীর স্বচ্ছ পানিতে পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে থাকে চারপাশ। গত ১৫ বছর থেকে সাইবেরিয়া, মঙ্গলিয়াসহ শীত প্রধান দেশ থেকে আত্রাই নদের মধুবন, কুঞ্জবনসহ কয়েকটি এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সড়ালি, পানকৌড়ি, ডুবরিসহ বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো পরিযায়ী পাখি বিচরণ করে। শীতপ্রধান দেশ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পরিযায়ী পাখিরা এসে কুঞ্জবনের নদীতে আশ্রয় নেয়। শীতের শুরুতে আসতে থাকে পাখি। নদীতে বছরের ৪-৫মাস পাখিগুলো থাকে। সারা দিন নদীতে থাকলেও রাতে পাখিগুলো ফিরে যায় পাশের রামচন্দ্রপুর, মধুবনসহ কয়েকটি স্থানের গাছে। ভোরে আবারো ফিরে আসে আত্রাই নদীতে। প্রতিদিনই পরিযায়ী এ সব পাখি দেখতে আসে দূর-দূরান্ত থেকে নানা বয়সী দর্শনার্থীরা। এ সব পাখিদের রক্ষায় স্থানীয় প্রাণ ও প্রকৃতি সংগঠনসহ স্থানীয়রা কাজ করে আসছে। নওগাঁ শহরের হাঁপানিয়া গ্রাম থেকে পরিযায়ী পাখি দেখতে এসেছেন রুস্তম আলী।

তিনি বলেন, প্রতিবছর এখানে অনেক পরিযায়ী পাখির সমাগম ঘটে বলে জেনেছি। পরিবার নিয়ে পাখি দেখতে এসেছি। এতগুলো পাখি একসাথে কখনো দেখা হয়নি। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে নদী। যেযার মতো খুনসুটি করছে। খুব ভালো লাগছে এখানে এসে। মহাদেবপুর উপজেলা সদরের ইউসুফ সুমন বলেন, আমরা কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবী মিলে পাখিগুলো দেখতে এসেছি। শীত মৌসুম ছাড়া এখানে এত পাখির বিচরণ হয়না। স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি যদি সরকারিভাবে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয় তাহলে আগামীতে এই এলাকায় পাখিদের আরো বেশি আগমন ঘটবে। সেই সাথে এটাকে ঘিরে বিনোদনের কেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে বলে মনে করছি। প্রাণ ও প্রকৃতি সংগঠনের কাজি নাজমুল হক বলেন, চলতি শীত মৌসুমে বালিহাঁস, সরালি হাঁস, পানকৌড়ি, রাতচোরাসহ প্রায় ১৫ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির বিচরণ ঘটেছে আত্রাই নদীতে।

এছাড়া পিয়াং হাঁস, পাতি সরালি, বালিহাঁস, পাতিকুট, শামুকখোল, পানকৌড়ি, ছন্নি হাঁসসহ প্রায় ১২ জাতের দেশি পাখির সমাগম ঘটেছে। কেউ পাখি শিকার বা মাছ শিকার করতে গিয়ে পাখিদের বিরক্ত না করে সে জন্য আমরা কাজ করছি। মাঝে মাঝেই আমরা মাইকিং করে জনসাধরণকে সতর্ক করছি। সরকারি উদ্যোগ নিয়ে এখানে পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল হতে পারে। স্থানীয় বিচিত্র পাখি উৎপাদন গবেষণা পরিষদ নামের সামাজিক সংগঠনের পরিচালক মুনসুর সরকার বলেন, পরিযায়ী পাখিদের নিরাপদ অবস্থানের জন্য নদীর পানিতে বেশ কিছু বাঁশ দিয়ে ঘের তৈরি করে দেয়া হয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে এসে পানিতে পড়ছে। কেউ গা ভাসিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

কেউ গা পরিষ্কার করছে। আবার কেউ বাঁশের ওপর বসে আরাম করছে। প্রতিদিনিই বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ নদীতে পাখি দেখতে আসছে। পাখি দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। মহাদেবপুর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শিল্পী রায় বলেন, আত্রাই নদীতে কুঞ্জবন এলাকায় পাখিদের অবাধ বিচরণ রয়েছে।

ওই স্থানে মাছ শিকার করার কারণে পাখিদের যেন অবাধ বিচরণে বাধাগ্রস্ত না হয় এবং কেউ যেন পাখি শিকার করতে না পারে সে বিষয়ে মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে নজরদারি রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সামাজিক সংগঠন গুলোও পাখির অবাধ বিচরণে কাজ করে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত