টিনের চালা ঘরে বাস, বাবা একজন দিনমজুর, মা কাথা সেলাই আর পুঁতির ব্যাগ তৈরি করে সামান্য কিছু আয় করেন এভাবেই চলে প্রমা কর্মকারের সংসার। প্রতিদিনের সংগ্রাম আর দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সুহাতা গ্রামের মেধাবী শিক্ষার্থী প্রমা কর্মকার ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে নিজের সক্ষমতার প্রমাণ রেখেছে।
ভোলাচং উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী প্রমা কোনো প্রাইভেট কিংবা কোচিং না করেও সম্পূর্ণ আত্মপ্রচেষ্টায় এই কৃতিত্ব অর্জন করে। সে বলে, ‘দিনে পড়াশোনা আর রাতে মায়ের সঙ্গে বসে পুঁতির ব্যাগ বানিয়েছি। ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখেছি ডাক্তার হবো, মানুষের পাশে দাঁড়াবো। কিন্তু বাবার পক্ষে কলেজের খরচ চালানো সম্ভব নয় এই ভাবনাই এখন সবচেয়ে বড় কষ্টের।
প্রমার বাবা শিবলু কর্মকার বলেন, পেটে ভাত না থাকলেও মেয়ের হাতে বই থাকত। ধার-দেনা করেও ওর পড়ালেখা চালিয়েছি। কিন্তু সামনে কলেজ ভর্তি, বইপত্র, যাতায়াতসহ অনেক খরচ এখন আমার পক্ষে আর সম্ভব না। হয়তো ওর স্বপ্নটা থেমে যাবে এখানেই।
প্রমা জানায়, ৯ম শ্রেণি থেকে দুইটি টিউশন করে প্রতি মাসে ৬০০ টাকা আয় করে সে নিজের খরচ চালিয়েছে।
কিন্তু কলেজ পর্যায়ে গিয়ে সেই সামান্য অর্থে আর পেরে ওঠা সম্ভব নয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অঞ্জনা রাণী সাহা বলেন, প্রমার সাফল্য বাস্তবতার কঠিন মুখে এক আশার আলো। এ বছর আমাদের বিদ্যালয় থেকে ১১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে, কিন্তু প্রমার গল্প ব্যতিক্রম। আমি ব্যক্তিগতভাবে ও বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব। সমাজের দায়িত্বশীলদের প্রতি আমার আহ্বান- এই মেয়েটির স্বপ্ন যেন থেমে না যায়।
যদি সমাজ এগিয়ে আসে, তাহলে শুধু প্রমা নয়, তার মতো অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্নপথ আলোকিত হবে। অদম্য ইচ্ছাশক্তির নাম প্রমা যার হাতেই একদিন ধরা পড়তে পারে হাজারো মানুষের সুস্থতার চাবিকাঠি।