চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মাত্র একটি বিদ্যালয় ব্যতীত ১২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রেখে মিলনমেলা ও বনভোজন আয়োজন করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির নেতারা। এতে অংশ নেন বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক। স্কুল বন্ধ রেখে বনভোজন আয়োজন করায় বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক মহলে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। একপর্যায়ে তাৎক্ষণিক ছুটি বাতিল করে বিদ্যালয় খোলার নির্দেশ দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। এছাড়া শিক্ষকদের ছুটি মঞ্জুর করার কারণে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে শোকজ করা হয়েছে। এক দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। গত সোমবার চুয়াডাঙ্গা বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা শাখার ব্যানারে আক্কাছ লেক ভিউ পার্ক অ্যান্ড রিসোর্টে এ আয়োজন করা হয়।
এদিকে, কিভাবে ও কেন ছুটি দিয়েছে তা জানতে চুয়াডাঙ্গা উপজেলার শিক্ষা অফিসার লাইলা তাসলিমা নাসরিনের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। গতকাল মঙ্গলবারের মধ্যে তাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। জানা যায়, স্কুল বন্ধ রেখে এই আয়োজন করায় আলোচনার জন্ম হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ প্রায় সব কর্মকর্তা কর্মচারী দাওয়াত পেলেও শেষ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন যোগ দেননি। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সংরক্ষিত ছুটির আবেদন করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমাদের ছুটি মঞ্জুর করেন। এর পরই আমরা মিলনমেলা ও বনভোজনের আয়োজন করি। আয়োজন চলাকালীন সময়ে হঠাৎ আমাদের জানানো হয় ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এখনি স্কুল খোলার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। এর পরই দুপুর ২টার মধ্যে আমরা গুছিয়ে বের হই। তিনি আরো বলেন, শিক্ষকরা বছরে তিনটি সংরক্ষিত ছুটি পেয়ে থাকেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা ছুটি পাস করিয়ে আয়োজন করেছিলাম। তবে কয়েকটা বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অংশগ্রহণ না করায় তাদের বিদ্যালয় খোলা ছিল। এ বিষয়টি এখন কেন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে তা আমার জানা নেই। সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষিকা বলেন, সমিতির নেতারা বনভোজনের জন্য ৫০০ টাকা টাকা চাঁদা তুলছেন। বনভোজনে শিক্ষকদের যাওয়ার জন্য কোনো যানবহনের ব্যবস্থা রাখেনি। ১৫ কিলোমিটার পথ নিজ ব্যবস্থায় যেতে হবে। তাই আমার মতো অনেকেই চাঁদা দিয়েও বনভোজনে অংশ নেয়নি। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার লাইলা তাসলিমা নাসরিন বলেন, শিক্ষা অফিসারের অনুমতিক্রমে প্রধান শিক্ষকরা বছরে তিন দিন সংরক্ষিত ছুটি নিতে পারেন। শিক্ষক সমিতির যারা আছেন উনারা চাইছিলেন তাদের আয়োজনে পিকনিক করবেন। তাই ১২১টি বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক সংরক্ষিত ছুটির জন্য আবেদন করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমি ছুটি দেই। তিনি আরো বলেন, এর আগে কখনো এমন হয়নি। শিক্ষকরা সংরক্ষিত ছুটি নিয়ে থাকেন। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে শিক্ষকদের মধ্যে দুটি গ্রুপিংয়ের কারণে রিপোর্ট হয়েছে। আয়োজন চলাকালীন সময়ে ছুটি বাতিল করা হলে সব শিক্ষকরা তাদের বিদ্যালয়ে যায় এবং ক্লাস শুরু করেন। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। আমি ব্যাখ্যা দেব। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহীন্দ্র কুমার মণ্ডল বলেন, বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ছুটি বাতিল করে বিদ্যালয় খোলা হয়েছে। সারাদিন ক্লাসও হয়েছে। ছুটি কিভাবে দিয়েছিলেন, কেন দিয়েছেন তা জানতে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে।