ঢাকা শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

লিচুগাছে মুকুলের পরিবর্তে কচিপাতা

ভয়াবহ ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা
লিচুগাছে মুকুলের পরিবর্তে কচিপাতা

বসন্তের এ সময় লিচু গাছের মুখরিত তাক লাগানো মুকুল দেখে বাগান চাষি ও গাছ মালিকেরা থাকতো অনেক খুশিতে। কিন্তু এবার চিরাচরিত মুকুলের সেই মৌ মৌ গন্ধ নেই। গাছে গজিয়েছে মুকুলের পরিবর্তে কচিপাতা। মুকুল কম আসায় ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় লিচুর বাগান মালিক, চাষি ও ব্যবসায়ীরা। যদিও কৃষি বিভাগ বলছে, এখনো সময় আছে লিচুর মুকুল আসার।কিন্ত বাগান মালিক ও চাষিরা বলছেন সময় পেরিয়ে গেছে।

তারা বলছেন, লিচুর মুকুলের এমন করুণ দশা গত ৪০ বছরেও দেখা যায়নি। মুকুল কম আসার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করছেন কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা। কৃষি বিভাগ বলছে, এখনো সময় আছে লিচুর মুকুল আসার। কৃষকরা বলছেন সময় পেরিয়ে গেছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় তিন হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের লিচু চাষ হয়েছে। ঈশ্বরদী পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামে তিন হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ৮৩ হাজার ৫০০টি লিচু গাছ রয়েছে। বিঘা প্রতি ২০টি থেকে ১৫টি গাছ অর্থাৎ এক একর জমিতে ৪২টি, এক হেক্টর জমিতে ৯০টি গাছ হয়েছে। সেখানে ছোট বড় বাগান মিলিয়ে ১১ হাজার ২৭০টি গাছে লিচুর বাগান রয়েছে। ঈশ্বরদী উপজেলায় লিচু আবাদি কৃষকদের সংখ্যা নয় হাজার ৬২০ জন। বাণিজ্যিক আকারে লিচু বাগান রয়েছে দুই হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। বিচ্ছিন্নভাবে বসতবাড়ি আবাদ হয়েছে ৫০০ হেক্টর জমিতে। ফলন্ত আবাদি জমির পরিমাণ দুই হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমি। লিচু উৎপাদন জমির পরিমাণ দুই হাজার ৮৩৫ হেক্টর এবং অফলন গাছ রয়েছে ৫৫ হাজার ৫৫০টি। লিচু ঈশ্বরদীর সলিমপুর ও আশেপাশের ইউনিয়নের এলাকার প্রধান অর্থকরী ফসল। প্রতিবছর এ উপজেলায় ৫০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়। লিচু চাষের ওপর নির্ভর করে এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের জীবন-জীবিকা। সরেজমিনে লিচুর গ্রাম’ বলে পরিচিত জয়নগর, মানিকনগর, মিরকামারী, চরমিরকামারী, কদিমপাড়া ও আওতাপাড়া গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, এ বছর শত শত লিচু বাগানে মুকুলের পরিবর্তে গজিয়েছে নতুন কচিপাতা। নতুন পাতা গজালে মুকুল আসে না। যে কারণে লিচুর উৎপাদন নিয়ে চাষিদের সংশয়। ফাল্গুন মাসের ২৪ দিন অতিক্রান্ত হলেও চাষিরা বাগান পরিচর্যা করছেন না। ব্যবহার হচ্ছে না সার, কীটনাশক ও মুকুলের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ।

কৃষি অফিস সূত্র আরও জানা যায়, ঈশ্বরদী উপজেলায় প্রধানত, ৩ জাতের লিচু বেশি চাষ হয়। তার মধ্যে মোজাফফর (দেশি) লিচু পরিপক্ব হয়ে সবার আগে বাজারে আসে। তবে ব্যবসায়ীদের বেশি চাহিদা বোম্বাই ও চায়না-৩ লিচু। আর তাই চাষিরা বেশি ঝুঁকছেন সেদিকে। স্বল্পসংখ্যক কৃষক তার জমিতে কদমি, কাঁঠালি এবং বেদেনা, চায়না-১, চায়না-২ লিচুর চাষ শুরু করেছে। বোম্বাই, চায়না-৩ লিচু আকারে বড়, খেতে সুমিষ্ট স্বাদ গন্ধ আলাদা, লিচুর আঁটি ছোট হওয়ার কারণে দেশে-বিদেশে বেশ সুনাম রয়েছে। যে কারণে উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নে চর-মিরকামারী, জয়নগর, ভাড়ইমারী, বক্তারপুর, জগন্নাথপুর, দাশুড়িয়া ইউনিয়নের নওদাপাড়া, কোলেরকান্দি, সাহাপুর ইউনিয়নের আওতাপাড়া, চর-কদিমপাড়া, পাকশী ইউনিয়নের জিগাতলা, নতুন রুপপুর, চর রূপপুর, দিয়ার বাঘইলসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে লিচুর বাগান রয়েছে। সলিমপুর ইউনিয়নে এমন কোনো বাড়ি নেই, যে বাড়িতে একটি লিচুর গাছ নেই।

চাষিরা জানান, বাগানে ১০০ লিচু গাছ থাকলেও মাত্র ১০-২০টি গাছে মুকুল এসেছে। মুকুলের পরিমাণও অনেক কম। অতীতে এতো কম মুকুল দেখা যায়নি। এ বছর কেন এমন হলো তারা বুঝতে পারছেন না। আবহাওয়ার কারণে এ বছর মুকুলের বিপর্যয় হতে পারে বলে তাদের ধারণা। উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর কারিগরপাড়া গ্রামের লিচুচাষি শামসুল আলম বলেন, আমার প্রায় ১২ বিঘা জমিতে লিচুর বাগান আছে। এবছর এত কম মুকুল আসছে যা আগে কখনও দেখিনি। এখানকার মানুষ লিচুর ওপর নির্ভরশীল। এবারে বছর চালাতে খুবই কষ্ট হবে। ১৫ থেকে ২০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। বাকি গাছে মুকুল নেই। উপজেলার উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা এখলাছুর রহমান বলেন, লিচুগাছে সমানভাবে প্রতিবছর মুকুল আসে না। কোনোবার কম, কোনোবার বেশি আসে। তবে এবারে তুলনামূলকভাবে কম গাছে মুকুল এসেছে। জেনেটিক কারণে হতে পারে। আগামী বছর মুকুলের পরিমাণ সব গাছেই বেশি হবে এবং ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, দেশে লিচু চাষের জন্য ঈশ্বরদী বিখ্যাত। এ বছরও গাছে মুকুল এসেছে। তবে অন্য বছরের তুলনায় মুকুলের পরিমাণ কম। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে বলে অনুমান করছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত