ধুমধাম আয়োজনের মধ্য দিয়ে সুসম্পন্ন হলো অসহায় মেয়ে শুভার বিয়ের অনুষ্ঠান। গত শুক্রবার দুপুরে শুভার প্রতিবেশী দাদা লাল মিয়া শেখের বাড়িতে এ বিয়ের আয়োজন করা হয়। মেলান্দহ উপজেলার হরিপুর পাথলিয়া এলাকার মৃত আব্দুল খালেক মিয়ার ছেলে সোনা মিয়ার সঙ্গে হরিপুর ভাটিপাড়া এলাকার নিখোঁজ খোকা শেখের একমাত্র কন্যা শুভা আক্তারের বিয়ে হয়।
বিয়ের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সিরাজগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবী মামুন বিশ্বাস বলেন, আমি মেলান্দহের সেচ্ছাসেবক জাকিরুল ভাইয়ের কাছ থেকে শুভার খবর পেয়ে ফেসবুকে একটা মানবিক সহায়তা চেয়ে পোষ্ট করলে দেশী ও প্রবাসী বন্ধুদের নিকট থেকে প্রায় এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা সংগ্রহ করে অসহায় শুভা’র বিয়ের ব্যয় ব্যাবস্থা করি। শুভার বিয়েতে ২০০ লোকের খাবারের আয়োজনসহ উপঢৌকন হিসেবে আসবাবপত্র ও তৈজসপত্রের ব্যবস্থা করি। এবং নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা বর কনের হাতে তুলে দেই।
এ ব্যাপারে জাকিরুল ইসলাম বলেন, বিয়ের মধ্যস্থতাকারী জাহানারা বেগমের কাছ থেকে শুভা সম্পর্কে জেনে খোজ খবর নিয়ে মামুন বিশ্বাসের কাছে পাঠাই। তিনি তথ্যের সত্যতা যাচাই করে সকল ব্যবস্থা করেন। তিনি আরও বলেন, আমরা মানুষের সেবায় কাজ করি। শুভার মতো আরও কোনো বোনের সন্ধান পেলে আমরা তার পাশে দাড়াব।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, শুভাকে জন্ম দিয়ে একদিন পরেই শুভার মা মনোয়ারা বেগম মারা যায়। হতভাগী শুভার মায়ের আদর তো দূরের কথা, মায়ের বুকের একধার দুধও জুটেনি মুখে। শুভার বাবা কিছু দিন পর শুভার মায়ের মৃত্যুর শেষ কৃত্ত করে পাড়ি জমান ঢাকায়। সেখানেই দ্বিতীয় বিয়ে করে সংসার পাতেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ২০১৩ সালে ঢাকা থেকে নিখোঁজ হয় অভাগী শুভার বাবা খোকা শেখ। অনেক খোঁজা খুজির পরেও আজো সন্ধান মেলেনি শুভার বাবা খোকা শেখের। জন্মের পরে পৃথিবীর আলো চোখে পড়লেও দেখেনি মায়ের মুখ, পায়নি বাবা ডাকার সুযোগ। এর পর থেকেই শুভা বড় হতে থাকে তার দাদা দাদীর কাছে।
শুভার প্রতিবেশী দাদী মর্জিনা বেগম জানায় শুভার ছয় বছর বয়সে দাদাও মারা যায়। দাদার সামান্য জায়গা থাকলেও একটা ঘরের অভাবে শুভাকে নিয়ে নিরুপায় হয়ে পড়ে তার দাদী। অন্ন বস্ত্র শিক্ষা যেখানে আকাশ কুসুম কল্পনা।
খবর পেয়ে শুভার হতদরিদ্র চাচা শুভাকে ঢাকায় নিয়ে যায়। সেখানে শুভা চাচার আদর অনাদর দুইয়ের মাঝেই বড় হতে থাকে। শুভা বড় হয়ে গেলে ১৪ বছর বয়সে চাচী শুরু করে নানা অত্যাচার।
শুভাকে মিথ্যা অপবাদ দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। চাচীর অত্যাচার ও চাপের মুখে শুভার চাচা তাকে পুনরায় দাদীর কাছে ফিরিয়ে দিয়ে যায়। দুর্ভাগ্যবশত সে সময় শুভার দাদীও মারা যায়। দাদী মারার পরে তাকে অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে পাঠানো হয়।
এমতাবস্থায় শুভার প্রতিবেশী জাহানারা বেগম (দাদী) তার বিয়ের কথা ভাবতে থাকেন। যেই কথা সেই কাজ।
আত্মীয় অনাত্মীয় পাড়া প্রতিবেশী সবাইকে ডেকে বিয়ের বন্দোবস্ত করেন। জাহানারা বেগম আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, শুভার মতো মেয়ের বিয়ের ব্যাবস্থা করে দিতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে।
বিয়েতে বর কনে উভয়কেই ব্যাপক হাস্যজ্জ্বল দেখা গেছে। কনে শুভা আক্তার বলেন আমি প্রথম ভাবছিলাম আমার তিন কোলে কেউ নেই। আজ দেখি আমার সবাই আছে। এতো সুন্দর পরিবেশে আমার বিয়ে হবে এটা আমি ভাবতেও পারি নাই। বর সোনা মিয়া বলেন শুভাকে জীবন সাথী হিসেবে পেয়ে আমি ধন্য। সবাই দোয়া করবেন আমরা যেনো চিরসুখী হই।