ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

১৮ বছরে ৪৫০টি শোক সংবাদ প্রচার করেছেন মুছা

১৮ বছরে ৪৫০টি শোক সংবাদ প্রচার করেছেন মুছা

গ্রামগঞ্জে ভোর হতে সারাদিন ভর যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে এবং তা প্রচার করে নামাজে জানাজা সময়সূচি জানান দেওয়াটা অনেকটা রীতিতে পরিনত হয়েছে। আর এই প্রচারের কাজটি ১৮ বছর ধরে আন্তরিক ও নিরলস ভাবে করে যাচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর সদর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রিক্সাচালক মো. ছালে মুছা। সদর উপজেলায় ব্যাপক জনপ্রিয় ও সবার পরিচিত মুখ ৪২ বছর বয়সী ছালে মুছা শোক সংবাদ প্রচার করে যাচ্ছেন ২০০৬ সাল থেকে। বর্মানে তিনি আনুমানিক ৪ শত ৫০ জন মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করে বিরল ঘটনার সাক্ষী হয়ে গেছেন। ছালে মুছা বলেন, আমি কখনও মাইক নিয়ে রিকশায়, কখনও অটোরিকশা আবার কখনও সিএনজি করে মৃত্যু সংবাদ করে থাকি। মৃত ব্যক্তির শোকাহত পরিবারের কাছ থেকে শোক সংবাদ ও মৃত ব্যক্তির নাম পরিচয়, জানাযার স্থান- সময়সূচি প্রকাশের অনুরোধ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি যে অবস্থায়ই থাকি না কেন, তা প্রচারের জন্য ছুটে যাই। কেউ খুশি হয়ে কিছু দিলে নেই, না দিলে কোনো দাবি করি না। পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মোকবল হোসেন বলেন, মুছা অনেক ভালো মানুষ। এলাকার প্রায় সবার মোবাইলে তার নাম্বার টি সেইভ করা থাকে। কারণ, মৃত্যু তো আর বলে কয়ে আসে না। সে তার জীবনটা কাটিয়ে দিলো ‘একটি শোক সংবাদ’ প্রচার করতে করতে। এটাই তার স্বকীয়তা। ছালে মুছার প্রতিবেশী শিক্ষক ও যুবদল নেতা আবু কালাম জানান, ছালে মুছা ব্যক্তি জীবনে কখনও রিকশা চালনা, কখনও মঞ্চে উপস্থাপনা, কখনও নাটক, যাত্রাপালায় অভিনয় করে বহু কষ্টে জীবন যাপন করে। সুকণ্ঠী ও অল্প শিক্ষিত মানুষটি অনেক পরোপকারী’। মৃত্যু সংবাদ প্রচারক ছালে মুছা জানান, আমি মাইকে যখন মৃত্যু সংবাদ প্রকাশ করি, তখন আমার মধ্যে অন্যরকম বেদনাদায়ক অনুভূতি অনুভব করি। কষ্ট লাগে যখন মৃত ব্যক্তি যদি অল্প বয়সের বা দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। আমি আমার এই মৃত্যু সংবাদ প্রচার আজীবন চালিয়ে যেতে চাই। নিজে খুব একটা শিক্ষিত না হলেও তার ৪ ছেলে মেয়ের মধ্যে সবাইকে পড়াশুনা করাচ্ছেন। ২ মেয়ে ২ ছেলের মধ্যে বড় মেয়েকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। নিজের বলতে একটি ছোট টিনের ঘর ছাড়া আর কিছুই নেই এই শোক সংবাদ প্রকাশকারী ছালে মুছার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত