কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের এক কলেজ শিক্ষার্থী চেষ্টা করছেন সবজি চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার। সহপাঠীরা যখন মোবাইল ও আড্ডায় ব্যস্ত তখন ওই শিক্ষার্থী স্বপ্ন দেখেন সম্পূর্ণ বিষমুক্ত নিরাপদ ফসল উৎপাদনের। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের সবজি ক্ষেতে নিজেই করেন সব কাজ। আধুনিক মালচিং পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদনে হয়েছেন সফল। উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের পাটানন্দী গ্রামের আতর ইসলামের সন্তান ও চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. ইউনুস প্রথমে শখের বশে বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষ করে লাভবান হন। তারপর সিদ্ধান্ত নেন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার। ইউনুস জানায়, শুরুতে গ্রামের সবাই আমাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করতো, পাগল বলতো, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতো। ২০২৩ সালে প্রথম ১৩ শতক জমিতে ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে মালচিং পদ্ধতিতে শশা চাষ করে দ্বিগুণেরও বেশি লাভ হয়। চলতি মৌসুমে খালার কাছ থেকে ধারে ৫০ হাজার টাকা এনে বর্গা নিয়েছি ৩টি জমি। মালচিং পদ্ধতিতে ২৪ শতকে শশা, ১২ শতকে মরিচ, ১১ শতকে বেগুন ও টমেটো চাষ করেছি। ফলনও হয়েছে বাম্পার। রমজানের আগ থেকে এখন পর্যন্ত প্রতি মণ ৮০০-১০০০ টাকায় ৬১ মণ শশা বিক্রি করেছি। একই দামে মরিচ বিক্রি করেছি ২০ মণ। উৎপাদন বেশি সত্ত্বেও দাম কম হওয়ায় লাভ কম হবে বলে জানান তিনি। সরেজমিন দেখা যায়- পলিথিনে ঢাকা সারি সারি বেডে নির্দিষ্ট দূরত্বে পলিথিন ফুটো করে লাগানো গাছে ঝুলছে শশা, মরিচ, টমেটো ও বেগুন। মরিচ গাছের ফাঁকে ফাঁকে লাগানো পেঁপে গাছে এসেছে ফুল। ইউনুস বলেন, ইউটিউব দেখার সময় প্রথম মালচিং পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা পাই। এক মালচিং পেপারে ৪/৫ বার সবজি লাগানো যায় বিধায় খরচও কমে আসে। ছত্রাক বা পোকামাকড়ের আক্রমণ হয় না বললেই চলে। জাত ভেদে ব্যবহার করছি ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ ফাঁদ। ইউনুস জানায়, মালচিং পদ্ধতিতে চাষ, সার, সেচ ও শ্রম কম লাগে। এতে কম খরচে সহজে সবজি উৎপাদন সম্ভব।
ইউনুস আরো জানায়, রাসায়নিক সারে মাটির উর্বরতা কমে। এর বিকল্প ট্রাইকো কম্পোস্ট সার। মালচিং পদ্ধতিতে ট্রাইকো কম্পোস্ট সার ব্যবহারেই সম্ভব নিরাপদ সবজি উৎপাদন। কিন্তু ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যে টাকা লাগবে সেই টাকা আমার কাছে নেই। ইউনুসের বাবা আতর ইসলাম বলেন, প্রথমে ছেলের এসব দেখে মনে হতো পাগলামি। কবরের মতো মাটি উঁচু করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়। এসব দেখে তাকে অনেক বকাঝকা করতাম। একসময় দেখলাম সে ভালো ফসল উৎপাদন করছে। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে আয়ও করছে। এখন ওর কাজে সহযোগিতা করি। ইউনুসের প্রতিবেশী আব্দুল হান্নান বলেন, প্রথম প্রথম ইউনুসের সবজি চাষ নিয়ে গ্রামের সবাই হাসিঠাট্টা করতো। ওর আধুনিক বিষমুক্ত সবজি চাষে সফলতা দেখে এখন অন্যরাও আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে এবং ওর কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছে। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোবায়ের আহমেদ বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার আরো কয়েকজন কৃষক মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছেন। কম খরচে বিষমুক্ত অধিক ফসল উৎপাদনে মালচিং পদ্ধতি খুবই কার্যকর। ‘ট্রাইকো কম্পোস্ট’ নিয়ে বলেন, এটি রাসায়নিক সারের বিকল্প নিরাপদ জৈব সার, যা বাড়ির আঙ্গিনায় কম খরচে সহজে প্রস্তুত করা যায়। বর্তমানে এর উৎপাদন প্রদর্শনী কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে আমরা ওই শিক্ষার্থীকে কৃষি বিষয়ক সব সহযোগিতা করবো।