ঢাকা রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নদীর পাড়ে বালুর ব্যবসা ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব কৃষক

নদীর পাড়ে বালুর ব্যবসা ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব কৃষক

বালু ব্যবসায়ীদের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের ডাকাতিয়া নদীর পাড়ের কৃষকরা। এরইমধ্যে নদীগর্ভে একরের পর একর কৃষি অনেক জমি বিলীন হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত ভাঙন অব্যাহত থাকায় ভিটে মাটিহীন হয়ে পড়ছেন নদী পাড়ের মানুষ। বিপন্ন হয়ে পড়ছে পরিবেশ-প্রকৃতি ও নদীর জলজ প্রাণী।

ডাকাতিয়া নদীর চর হিসেবে খ্যাত হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের এন্নাতলী কৃষি মাঠ। এক সময় নদীর দক্ষিণ পাড়ের এ চরে ফসলি জমিতে ইরি-বোরো ধানের পাশাপাশি ফলতো বাঙ্গি, শসা ও বিভিন্ন ফল জাতীয় ফসলসহ শাক-সবজি। অথচ এখন সেই মাঠে ইরি-বোরো ধানের চাষ ছাড়া অন্য কোনো চাষাবাদ নেই।

গত কয়েক বছর ধরে বালু ব্যবসার কারণে নদীর পাড়ে প্রায় সহস্রাধিক শতাংশ কৃষিজমি নদীর বুকে বিলীন হওয়ায় এন্নাতলীসহ নদী সংশ্লিষ্ট গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষক এরইমধ্যে কৃষিজমি হীন হয়ে পড়েছেন এবং পরিবর্তন হয়েছে, নদীর গতিপথ। ভাঙন অব্যাহত থাকায় কৃষি জমির পাশাপাশি অনেকের ভিটে-মাটি এখন অস্বিস্তের সংকটে। এছাড়াও বাতাসে বালু উড়ে মানুষের নাকে, মুখে, চোখে বালু ঢুকে। এতে মানুষ ফুসফুস রোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। নদীর উত্তর পাড়ে রয়েছে, উপজেলা ভূমি অফিস (সহকারী কমিশনারের কার্যালয়)। পুরোনো এই কার্যালয়টির ভবন এমনিতেই জরাজীর্ণ, তার উপর প্রতিনিয়ত নদীর ভাঙনে ভবনটিও হুমকির মুখে।

জানা গেছে, ডাকাতিয়া নদীর উত্তর পাড় হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৯নং ওয়ার্ড আলীগঞ্জ এলাকা এবং দক্ষিণ পাড় বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের এন্নাতলী গ্রাম। গত কয়েক বছর ধরে ডাকাতিয়া নদীর উত্তর পাড়, আলীগঞ্জ এলাকায় বেশ কয়েকটি বালু মহাল গড়ে উঠেছে। মহালগুলো থেকে বালু ট্রাকে করে চলে যাচ্ছে নিজ ও পার্শ্ববর্তী জেলার সর্বত্র।

নৌপথে ট্রলারযোগে বালু পরিবহন করে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু মহালে স্তূপ করে রাখা হয়। এর মধ্যে এন্নাতলী মাঠসংলগ্ন উপজেলা ভূমি অফিসের পূর্ব পাশে ডাকাতিয়া নদীর পূর্বপাড়ে তিনটি ড্রেজার রয়েছে। এখানে প্রতিনিয়ত বালু আনলোড করা হয় এবং লোড ও আনলোড ১৫ থেকে ২০টি ট্রলার নদীর পূর্বপাড়ে অবস্থান করে থাকে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু আনলোডে ট্রলারগুলো যখন ঘোরানো হয় এবং নদীর পূর্বপাড়ে ট্রলারগুলোর অবস্থানের কারণে বালুমহালের ট্রলার ও চলমান ট্রলারগুলো নদীর পশ্চিম অংশ দিয়ে চলাচল করতে হয়। এতে ট্রলারের ঘূর্ণীয়মান পাখায় নদীর তলদেশের মাটি ক্ষয় হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে একজন ওই গ্রামের বাসিন্দা তাজুল ইসলাম নামের এক শিক্ষক জানান, এন্নাতলির চর এক ফসলি মাঠ। এই এক ফসল দিয়েই গ্রামের অনেকের জীবন-জীবিকা। অথচ বালু ব্যবসার কারণে প্রায় এক হাজার শতাংশ জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে এবং নদীর ভাঙন অব্যাহত আছে। এতে অনেকেই জমি ও ভূমিহীন হয়েছেন।

এতে করে একদিকে কৃষিজমি হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়ছেন কৃষকরা, অপরদিকে বিপন্ন হয়ে পড়ছে পরিবেশ-প্রকৃতি ও নদীর জলজ প্রাণী।

সচেতনমহল জানান, কৃষিজমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে অসংখ্য পরিবার। বালু পড়ে এবং গভীরতা কম হওয়ায় ট্রলারের ঘূর্ণীয়মান পাখায় নদীর পানি ঘোলাটে হয়ে যায়। এতে সূর্যের আলো পানির তলদেশে পৌঁছাতে পারে না। ফলে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনচক্র ব্যাহত হয়। মাছের প্রজনন কমে যায় এবং নদীর জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়।

গত ৪ এপ্রিল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসহ এন্নাতলী গ্রামের কৃষকরা বালু ব্যবসায়ী কামাল হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তাকে ড্রেজার সরানোর অনুরোধ করেন এলাকাবাসী। তখন তিনি পরে বিষয়টি জানাবেন। কিন্তু গত তিন সপ্তাহ পার হলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বলে স্থানীয়রা জানান। তাই, বালু মহাল সরাতে গণস্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা।

এবিষয়ে কথা হয় বালু ব্যবসায়ী কামাল হোসেন এর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার জমিতে বালুমহাল স্থাপন ও ড্রেজার বসিয়ে বালু ব্যবসা করছি। তাছাড়া এখানে আমি একা না, অনেকেই ব্যবসা করছেন। কথা বললে সবার সঙ্গে বলতে হবে এবং কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সবার মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এখানে প্রায় ২০ কোটি টাকা ইনভেস্ট করে ব্যবসা করছি। বললেই-তো ব্যবসা সরিয়ে নেওয়া যায় না। যদি আমি একা ব্যবসা করতাম। তাহলে আমার বালু মহাল আমি সরিয়ে নিতাম।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত জাহান বলেন, বালু মহালকে ইজারা দেয়া হয়েছে। কিন্তু নদীতে ড্রেজার স্থাপন কিংবা ট্রলার রাখার বিষয়ে কোনো ইজারা বা বন্দোবস্ত দেয়া হয়নি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত