হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে অভিযান করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে তারা বিভিন্ন অনিয়ম ও সমস্যা দেখতে পান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হবিগঞ্জ শাখার মুখপাত্র রাশেদা বেগম এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন- হাসপাতালের জরুরি বিভাগে স্লিপ কাটার সময় ৫ টাকার জায়গায় ১০ টাকা এবং ভর্তির ক্ষেত্রে স্লিপসহ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১৫ টাকার স্থলে ২০ টাকা রাখা। ব্লাড টেস্ট করার সময় অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া রিপোর্ট প্রদান করা হয়। তাছাড়া টেস্ট কার্যক্রম যেখানে আড়াইটা পর্যন্ত চলার কথা সেখানে দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যেই টেস্ট কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। হাসপাতালের কাউন্টারে প্রায় ৩০-৩৫টি ওষুধের নামের তালিকা থাকলেও প্রতিদিন ওই তালিকা অনুযায়ী কয়টা ওষুধ আছে বা নাই সেগুলা চার্টে থাকে না।
এখানে কয়েকটি ওষুধ যেমন গ্যাস্টিকের, প্যারাসিটাল, ক্যালসিয়াম জাতীয় কয়েকটা ছাড়া বাকি ওষুধ বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে আনতে বলা হয়। গাইনী ওয়ার্ডে একজন মায়ের সন্তান হওয়ার পর মিষ্টি খাওয়ার নাম করে বা বকশিসের কথা বলে নার্স এবং আয়ারা মায়েদের কাছ থেকে ১ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত টাকা নেয়। মাঝে মধ্যে আয়া বা ঝাড়ুদারদের দিয়ে রোগীদের ইনজেকশনের কাজ চালিয়ে নেওয়া অভিযোগ রয়েছে। নবজাতক শিশু ওয়ার্ডে বাচ্চাদের বিশেষ কোনো কেয়ার সার্ভিসসহ স্টেন ভিত্তিক কোনো সিট নেই। মাসহ সব নবজাতক শিশুদের মেঝেতে বেড দিয়ে রাখা। সেখানকার পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা। কিছু কিছু রুমে পর্যাপ্ত সিটের তুলনায় রোগীর সংখ্যা দ্বীগুণ দেখা যায়। যেমন গাইনী ওয়ার্ডে স্টেন্ডিং সিট ১৭টি এবং মেঝেসহ মোট ৩০-৩৫টি সিট রয়েছে। এখানে রোগীর সংখ্যা ছিল ৬৬ জন। রোগীর সঙ্গে ২-৩ জন করে আত্মীয় স্বজন তো আছেনই। যার ফলে রোগীরা সুস্থ হওয়ার চাইতে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়- পর্যাপ্ত পরিমাণে ডাক্তার এবং স্টাফ নেই সদর হাসপাতালে। যেখানে ডাক্তার থাকার কথা ৫৭ জন সেখানে বর্তমানে মাত্র ২০ জন ডাক্তার আছেন। বেশিরভাগ ডাক্তারই ১২টার আগে হাসপাতালে আসেন না। সদর হাসপাতালে দালালদের আখড়া রয়েছে। প্রতিনিয়ত রোগীদের গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যেমন মোবাইল, টাকা চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটছে। ফলে রোগীরা অনেক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। রোগীদের তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ সরবরাহ এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট নেই। রোগীদের কাটা-ছেড়ার কাজ আউট লোকদের দিয়ে করানো হয়, যাদের ডাক্তারির কোন সার্টিফিকেট নেই। রোগীদের থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা আদায় করা হয়। প্রত্যেকটি বিষয় তারা অবগত হন এবং হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আমিনুল হক সরকার এর সঙ্গে কথা বলেন। তিনি সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন এই সব অনিয়ম এর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন।