ঢাকা রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

উপকূলীয় নারীদের সংগ্রামী জীবন

উপকূলীয় নারীদের সংগ্রামী জীবন

সব কিছু হারিয়ে উপকূলের নারীরা নদীতে কুমিরের মুখের আহার হয়ে রাত দিন জাল টেনে মাছ ধরে। সেই মাছ বাজারে বিক্রি করে তুলে দেয় সন্তানের মুখে এক মুঠো খাবার। হাড়ভাঙা কষ্টের টাকায় তৈরি করে ঘর। সর্বনাশা আইলা, সিডর, আম্পান, ইয়াস ও জাওয়াদে ভাসিয়ে নিয়ে যায় কষ্টের টাকায় তৈরি ঘর। উপকূলের নারীদের জীবন সংগ্রাম এমনই। জীবন সংগ্রামী এক নারী জাহেদা (২০)। দরিদ্র পিতার ঘরে জন্ম হওয়ায় লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি। ১৫ বছর বয়সে পরিবার তাকে বিয়ে দেয়। সেখানে প্রতিনিয়ত স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে হতো। বিয়ের পরে তার কোলে এলো এক কন্যাসন্তান। স্বামীর নির্যাতন বেড়ে যায় দ্বিগুণ।

এক পর্যায়ে স্বামী তাকে ছেড়ে দিলে চলে আসেন উপজেলার পাতাখালী গ্রামে বাবার ভিটায়। সেখানে শুরু হয় জীবন সংগ্রাম। সন্তানকে মানুষের মত মানুষ করতে পাশেই কপোতাক্ষ নদে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। কষ্টের মধ্যেও চেষ্টা করেন কিছু সঞ্চয় করার। ভয় কি তিনি জানেন না। বাঁচতে হলে সংগ্রাম করতে হবে এটা তার বিশ্বাস। অপর সংগ্রামী এক নারী মরিয়ম (৪৫)। উপজেলার কপোতাক্ষ নদীর তীরে এক হতদরিদ্র্য পরিবারে জন্ম নিয়ে ঝুজতে শিখে কিশোর বয়সে নদীতে জাল টেনে বাবার সংসারে হাল ধরেন। বিয়ের পরে ভেবেছিল এ অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু বিয়ের বছর দশেকের মধ্যে তার সাজানো সংসার তছনছ হয়ে যায়।

কোনো সন্তান না থাকায় ঠাঁই হয় বাবার বাড়িতে। জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে আবারও শুরু করেন নদীতে জাল টানা। সংসারের খরচ জোগাড় করতে ?সুন্দরবনে গিয়ে স্বামীকে খেয়েছে বাঘে। মাথা গোজার ঠাঁইটুকু কেড়ে বিয়েছে কপোতাক্ষ নদ। এখন নদীতে জাল টেনে সংসার চালাতে হয়। স্বামী গেছে বাঘের পেটে আর আমি কুমিরের পেটে যাবো কি না জানি না। ভয় কি জিনিস জানি না। শুধু জানি, আল্লাহর উপর ভরসা করে চেষ্টা করে যেতে হবে। কথাগুলো বলছিলেন উপজেলার কুপট গ্রামের রাশিদা খাতুন। তিনি থাকেন এখন সরকারি জমিতে। বছর দশেক আগে তার নিজের ভিটাবাড়ি ছিল। ২০১২ সালে স্বামী জিন্নতুল্লাহ গোলপাতা কাটতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে মারা যায়। পরের বছর খোলপেটুয়া নদীর ভাঙনে তার ভিটাবাড়ি কেড়ে নেন। শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন। কপোতাক্ষ নদীতে রেণুর পোনা ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসারে খরচ ও দুই সন্তানের লেখা পড়ার খরচ চালান তিনি। কোনো সন্তান না থাকায় ঠাঁই হয় বাবার বাড়িতে। জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে আবারও শুরু করেন নদীতে জাল টানা। এভাবেই চলছে জীবন। রাশিদা খাতুনের প্রশ্ন কোনোদিন কি শেষ হবে জীবনের এ সংগ্রাম।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত