ঢাকা শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ভূরুঙ্গামারী-ধলডাঙ্গা সড়কের কাজ ৯৮ ভাগ সম্পন্ন

ভূরুঙ্গামারী-ধলডাঙ্গা সড়কের কাজ ৯৮ ভাগ সম্পন্ন

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বাস টার্মিনাল থেকে ধলডাঙ্গা বাজার পর্যন্ত পৌনে ৯ কিলোমিটার সড়ক মেরামত কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। এরইমধ্যে ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে পুরো কাজ সমাপ্ত হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। সম্প্রতি সড়কের ক্ষুদ্র একটি স্থানে কার্পেটিং উঠে যাওয়ার বিষয় নিয়ে যে গুজব ছড়িয়েছিল তার নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। মূলত: চলমান কাজটির সাব ঠিকাদারের সঙ্গে এক ব্যক্তির ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিল। সেই দ্বন্দ্বের জের ধরে অভিযুক্ত ব্যক্তি তার বাড়ির সামনের অংশের কার্পেটিং করা সড়কে শাবল দিয়ে আঘাত করে রাস্তার ক্ষুদ্র একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত করে। পরে এলাকার ছেলেরা হাত দিয়ে সে কার্পেটিং তুলে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেবার পর বিষয়টি নিয়ে তুমুল হইচইয়ের সৃষ্টি হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি ভাবে নবনির্মিত রাস্তা ভাঙার অভিযোগ এনে ভূরুঙ্গামারী থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছে ঠিকা প্রতিষ্ঠানটি।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট (এডিপি)’র অর্থায়নে গত ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বাস টার্মিনাল থেকে ধলডাঙ্গা বাজার পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং প্রস্তে ১৮ ফিট সড়ক মেরামতের কাজ শুরু হয়। সড়ক মেরামতের এই কাজ শেষ হবার কথা রয়েছে চলতি ২০২৫ সালের ৩০ জুন। রুরাল কানেক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (আরসিআইপি) প্রকল্পের আওতায় চলমান সড়ক মেরামত কাজের তদারকির দায়িত্বে রয়েছে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এল জিইডি)। এই কাজের প্রাক্কলিত মূল্য ছিল ২০ কোটি ৯ লাখ ৩০ হাজার ৮০৮ টাকা। যার চুক্তি মূল্য ১৭ কোটি ৭৭ লাখ ৫৫ হাজার ২২৮ টাকা। পরবর্তীতে সংশোধিত চুক্তি মূল্য নির্ধারণ হয় ১৭ কোটি ৭১ লাখ ৩৭ হাজার ৬৩ টাকা।

সূত্র আরো জানায়, মোট ৮ কিলোমিটার ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে মধ্যে ২৩৮৫ মিটার আরসিসি ঢালাই সড়ক এবং অবশিষ্ট সড়ক কার্পেটিং করার কথা রয়েছে। বর্ষা মৌসুমের কথা মাথায় রেখে সড়ক মেরামত কাজের গতি বাড়ানো হয়। এর ফলে নির্ধারিত সময়ের এক মাস আগেই সড়ক মেরামতের কাজ সম্পন্ন হবে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বাস টার্মিনাল থেকে জামতলা হয়ে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত এবং পাগলাহাট বাজার নামক এলাকায় আরসিসি ঢালাই রাস্তার কাজ অনেক আগেই সমাপ্ত হয়েছে। কার্পেটিং এর কাজ দ্রুত গতিতে সফলভাবে এগিয়ে চলছে। পুরো কাজের ৯৮ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যেই সুসম্পন্ন হয়েছে। আর মাত্র ৩০ মিটার অবশিষ্ট সড়ক কার্পেটিং-এর কাজ চলমান রয়েছে।

মোট পৌনে ৯ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ধলডাঙ্গা এলাকায় মাত্র দৈর্ঘ্যে ৩০ ফিট এবং প্রস্তে ১৮ ফিট সড়কের কার্পেটিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই কার্পেটিং ক্ষতিগ্রস্ত হবার মূল কারণ জানতে গিয়ে ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। গত ৪ মে রাস্তাটি কার্পেটিং হবার একদিন পর ৫ মে সকালে পূর্ব বিরোধের জের ধরে মিস্ত্রি বেলাল হোসেন নামের ব্যক্তি শাবল দিয়ে রাস্তার ক্ষুদ্র একটি অংশে আঘাত করে তা ক্ষত-বিক্ষত করে। এরপর সে পরিকল্পিত ভাবে প্রোপাগান্ডা ছড়ায় যে নিম্নমানের কার্পেটিং হওয়ায় কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। এমন খবর জানতে পেরে গত ৬ মে কুড়িগ্রামস্থ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট এক্সপার্টগন চলমান সড়কের কাজটি পরিদর্শনে যান। সড়কের বিভিন্ন স্থানে তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সড়কটিতে ইস্টিমেট অনুযায়ী মানসম্পন্ন কাজের প্রমাণ পান। এমনকি চলমান সড়কের কাজের তারা কোন ধরনের ক্রুটি বিচ্যুতি বা কোন অনিয়ম খুঁজে পাননি।

এদিকে সড়ক মেরামত কাজের ম্যানেজার মো. ফখরুল ইসলাম বাদী হয়ে ভুরুঙ্গামারী থানায় সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগ এনে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ ব্যাপারে সাব ঠিকাদার বেলাল হোসেন। তার সাক্ষাৎকারে সবার কাছে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, দেশের যে কোনো ইঞ্জিনিয়ার এসে রাস্তার কাজ দেখতে পারেন। রাস্তার কাজে এতটুকু ত্রুটি বা অনিয়ম হয়নি।

পূর্ব শত্রুতার জেরে পৌনে ৯ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে মাত্র ৩০ ফিট সড়কের কার্পেটিং শাবল দিয়ে খুড়ে খুড়ে তোলা হয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার দাবি করছি। এ সম্পর্কে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা প্রকৌশলী ইনছাফুল হক সরকার জানান, এসফল প্লান্টের মাধ্যমে যে কার্পেটিং তৈরি হয়, সেখানে নিম্ন মানের কার্পেটিং তৈরি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যেটুকু কার্পেটিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই ইচ্ছাকৃত ভাবে করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম ফেরদৌস বলেন, সাব ঠিকাদার যে অভিযোগ করেছে, সেই অভিযোগের সত্যতা পেলে ফৌজদারি আইনে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই প্রসঙ্গে কুড়িগ্রামস্থ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুজ্জামান জানিয়েছেন, আমি সরেজমিনে রাস্তাটির কাজ দেখেছি। কোথাও কোনো অনিয়ম বা ত্রুটি খুঁজে পাইনি। যেখানে কার্পেটিং উঠে গেছে।

সেখানে গিয়ে দেখেছি, যে কার্পেটিং গুলো তোলা হয়েছে, সেই কার্পেটিংগুলো জমাট বেঁধেছে। যদি নিম্নমানের কাজ হতো, তাহলে কার্পেটিংগুলো জামাট বাধতে পারতো না। আমার কাছে মনে হয়েছে পরিকল্পিতভাবে রাস্তার কার্পেটিং উঠানো হয়েছে। যা রীতিমতো ফৌজদারী অপরাধ। তিনি রাস্তার কাজটির ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, সড়কের কাজটি মানসম্পন্ন ভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত