ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পড়াশোনা শেষ করে সফল উদ্যোক্তা মাকসুদুর রায়হান

পড়াশোনা শেষ করে সফল উদ্যোক্তা মাকসুদুর রায়হান

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার পত্যন্ত গ্রাম আটগ্রাম। ছোট যমুনা নদীর তীরে গড়ে উঠা এ গ্রামে ৫০০ পরিবারে অন্তত ২ হাজার মানুষেরবসবাস। বর্ষায় নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার তাদের একমাত্র ভরসা। এ গ্রামের অধিকাংশ পরিবারই দরিদ্র এবংশিক্ষার হারও কম। জীবন-জীবিকার জন্য কৃষি কাজসহ বিভিন্ন পেশার সঙ্গে জড়িত। আবার দারিদ্র বিমোচনে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয় এ গ্রামের মানুষদের।

জেলা শহর থেকে দক্ষিণে প্রায় ৩০ কিলোমিটার এবং আত্রাই উপজেলা থেকে পশ্চিমে ৮ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত এ আটগ্রাম। আত্রাইউপজেলার আটগ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান মাকসুদুর রায়হান জেড। বাবা বেলায়েত হোসেনের ৩ বিঘা ফসলি জমি। যেখানে একটি মাত্রফসল ইরি বোরো আবাদ হতো। যেবার বন্যা হতো ফসল আর ঘরে উঠতো না। বলা যায় দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত এ পরিবার এবং এ গ্রামের বাসীন্দাদের। তবে এখন তাদের সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। উদ্যোক্তার ৮ বছরে সফলতা ধরা দিয়ে তার জীবনে। দুই ভাইবোনের মধ্যে মাকসুদুর রায়হান জেড ছোট। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। ২০১৯ সালে ইংরেজিতে অর্নাস শেষ করেন জেড। ছাত্র জীবন থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখন পুরোদমে কৃষিতে মনোনিবেশ করেছেন। এ গ্রামে দারিদ্র বিমোচনে কাজ করার চেষ্টা করছেন তিনি। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে চাকরির পেছনে না ছুটে হয়েছেন উদ্যোক্তা। টিউশনির ৪৬ হাজার টাকা দিয়ে গত ৮ বছর আগে একটিগাভী দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে তার খামারে শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান ও ক্রস জাতের ১২টি গরু আছে। এছাড়া উন্নত জাতের ৪টি ছাগল রয়েছে। যেখানে বিক্রির উপযোগী শাহীওয়াল ষাঁড়সহ চারটি গরু আছে। সবমিলিয়ে প্রায় ১২-১৪ লাখ টাকার গরু-ছাগল আছে খামারে। গবাদিপশুকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে লালন-পালন করা হয়েছে। এছাড়া গাভী থেকে প্রতিদিন ১২-১৪ লিটার দুধ পাওয়া যায়। যা দিয়েপরিবারসহ স্থানীয়দের চাহিদা পুরণ করা যাচ্ছে।

গরু রাখার জন্য বাঁশের বেড়া ও কাঠ দিয়ে শেড করা হয়েছে। আর ছাউনিতে ব্যবহার করা হয়েছে টিন। ঘাসের চাহিদা মেটাতে সামান্য জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করা হয়েছে। জমিতে উৎপাদিত ধানের খড় থেকে বছরে কয়েকমাস চাহিদা পূরণ করা হয়। তবে বাকি সময়ের জন্য বিভিন্নএলাকা থেকে খড় কিনতে হয়। তার দেখে গ্রামের অনেকেই এখন উন্নত জাতের গরু পালন শুরু করেছে। গরু-ছাগলকে নিয়মিত চিকিৎসা দেয়াহচ্ছে। উদ্যোক্তা মাকসুদুর রায়হান জেড বলেন- অভাবকে কাঁধে নিয়ে বড় হয়েছি। সামান্য জমিতে চাষাবাদ করতে গিয়ে বাবা ঋণগ্রস্থ হয়েপড়েছিলেন। তখন চিন্তা করতাম কিভাবে অভাবকে জয় করা সম্ভব। ২০১৯ সালে ইংরেজিতে অর্নাস পড়াশুনা শেষ করেছি। এরপর চাকরির পেছনে আর হন্য হয়ে না ঘুরে কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ নিয়ে কাজ শুরু করলাম। সেখান থেকে সফলতা আসা শুরু হয়।

তিনি বলেন- অনেক খামারি পরিকল্পনা করে সুন্দর করে কংক্রিট দিয়ে খামার তৈরি করেন। এতে খামার তৈরিতে বড় একটি অর্থের যোগানদিয়ে থাকে। এতে অনেক অর্থের অপচয় হয় বলে মনেকরি। প্রান্তিক খামারিরা টিকতে না পেরে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। সেখানে স্বল্প খরচে বাঁশের বেড়া ও টিনের ছাউনি দিয়ে শেড করেছি। পাশাপাশি প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে স্বল্প খরচে গবাদিপশু লালন-পালন করা হচ্ছে। এতেখরচ কম পড়ছে এবং লাভবান হওয়া সম্ভব। আমি মনে করি কোনো পরিবার যদি ঋণমুক্ত থাকে তাহলে দারিদ্র বিমোচনে প্রথম ধাপ হিসেবে

গণনা করা যায়। সেক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা হবে গবাদিপশু লালন-পালন করা। এখন একটাই স্বপ্ন দারিদ্র বিমোচনে এ গ্রামের মানুষকে আত্মনির্ভরশীল করা। মাকসুদুর রায়হান জেড এর বাবা বেলায়েত হোসেন বলেন- একসময় সংসারে খুবই অভাব ছিল। দুই সন্তানকে পড়াশুনা করাতে গিয়ে হাপিয়ে উঠেছিলাম। ব্যাংক এবং এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলাম। ছেলে পড়াশোনা শেষ করে সংসারের হাল ধরার পর এখন সচ্ছলতা ফিরেছে। ইচ্ছা আছে গরুর খামার বড় হলে হতদরিদ্র মানুষকে বিনামূল্যে গাভী দিয়ে সহযোগীতা করবো। এরইমধ্যে দুইটি গাভীদিয়েছি। যাতে করে তাদের সংসারে কিছুটা হলেও সচ্ছলতা ফিরে আসে। প্রতিবেশী আব্দুস সালাম বলেন, আগে আমার বাড়িতে ২-৩টি দেশি গরু লালন-পালন করতাম। কিন্তু মাকসুদুর রায়হান জেড এর দেখে উন্নতজাতের গরু পালন শুরু করি। এখন আমার খামারে ৬টি গরু আছে। গরুকে নিয়মিত চিকিৎসা প্রদানসহ তার কাছ থেকে সবধরনের পরামর্শ নিয়ে থাকি। নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহফুজার রহমান বলেন, ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্পসুদে অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ব্যাংক ও বিমার সঙ্গে সমন্বয় করে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। খুব শিগগিরই প্রাণিসম্পদ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হবে বলে উদ্যোগ নেয়ার বিষয় জেনেছি। এতে উপকৃত হবেন উদ্যোক্তারা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত