
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার হিসেবে শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই প্রশাসনিক কার্যক্রমে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক জটিলতা ও অস্থিরতা কাটিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় এখন নতুন পথে হাঁটছে।
২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় তার সূচনালগ্ন থেকেই নানা প্রশাসনিক জটিলতা ও বিতর্কের সম্মুখীন হয়েছে। পূর্বে কর্মকর্তা থেকে উঠে আসা রেজিস্ট্রারদের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ছিল চরমে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করত। তবে বর্তমানে এই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে।
জানা যায়, বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী এবং ২২০ জন শিক্ষক রয়েছেন, পাশাপাশি প্রায় ৪০০ জন কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এখন অনেক উন্নত। নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা এবং ফলাফল প্রকাশ নিশ্চিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল এবং শিক্ষার্থীবান্ধব।
জানা যায়, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার পদে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৮ সালে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করে বর্তমানে অধ্যাপক (গ্রেড-১) হিসেবে আছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, রেজিস্ট্রার হিসেবে ড. মো. মিজানুর রহমানের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতি বেড়েছে। একাডেমিক এবং প্রশাসনিক বিষয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় অনেক সহজ হয়েছে। এর ফলে ফাইল চালাচালির দীর্ঘসূত্রিতা কমেছে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও দ্রুত হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিভিন্ন জটিলতা দ্রুত নিরসন হচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুর রাজ্জাক জানান, আগে যেকোনো প্রশাসনিক কাজের জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হতো। এখন আমাদের আবেদনগুলো দ্রুততার সঙ্গে সমাধান হচ্ছে। কর্মকর্তারা আমাদেরকে প্রশাসনিক জটিলতায় ফেলে দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে ফেলে দেন।
কিন্তু শিক্ষকরা এ বিষয়ে নমনীয়। কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর ড. মাহবুবর রহমান বলেন, রেজিস্ট্রার স্যার যেহেতু নিজেই একজন শিক্ষাবিদ, তাই শিক্ষা সংশ্লিষ্ট নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তার গভীর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগছে। এখন আমাদের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক স্থবিরতার সমস্যা দ্রুত সমাধান হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি দপ্তরের কর্মকর্তা আলমগীর কবির জানান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে আমরা এখন আরও বেশি উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করতে পারছি। কারণ, আমাদের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে অযথা কোনো চাপ নাই।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই আমি একটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি আর তা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা। আমরা সব ধরনের দীর্ঘসূত্রিতা দূর করতে এবং ফাইল চালাচালির প্রক্রিয়াকে সহজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি মনে করি, শিক্ষার মান উন্নয়নই আমাদের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত এবং সেই লক্ষ্য পূরণে প্রশাসনিক সহযোগিতা অপরিহার্য।
জানা যায়, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বুটেক্স, জগন্নাথ, কুমিল্লা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের নামিদামি ১৫টি শীর্ষস্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রেজিস্ট্রার হিসেবে শিক্ষকরা দায়িত্ব পালন করছেন। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা হিসেবে রেজিস্ট্রারদের চেয়ে শিক্ষকরা ভালো করছেন বলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।