
নাটোরের গুরুদাসপুরে চলন্ত বিলের নাম অনুসারেই এটির নামকরণ করা হয় চলনবিল। নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ আর নওগাঁ জেলাজুড়ে এ বিলের বিস্তৃতি। চারটি জেলার বড় বড় নদীর সঙ্গে এ বিলের সখ্য বেশি। বর্ষা মৌসুমে অসংখ্য নদী-নালা খাল বিল দিয়ে এ বিলে পানি প্রবেশ করে। এ জলরাশি চলনবিল হয়ে বিভিন্ন নদীতে গিয়ে পতিত হয়।
চলনবিলের সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের ৮নং ও ৯নং সেতু এলাকায় মহাসড়কের দুই পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিল ও উপজেলার কুন্দইল এলাকায় বিলের মাঝে বয়ে যাওয়া ডুবো সড়কের সেতু দিয়ে ঈদ উপলক্ষে হাজার হাজার দর্শনাথীর ঢল।
অন্যদিকে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার বিশেষ অংশজুড়ে এ বিলের সৌন্দর্য উপভোগের উপযুক্ত স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। গুরুদাসপুর উপজেলায় কোনো বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় বর্ষাজুড়েই চলনবিলে থাকে দর্শনার্থীদের ভিড়। আর ঈদ-পূজাসহ বিভিন্ন উৎসবকে ঘিরে বিলশা পয়েন্টে নজর কাড়ে দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়। এ যেন মিনি কক্সবাজার।
এক সময় চলনবিল এলাকাটি ছিল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবহেলিত। তবে বর্তমানে চলনবিলের তাড়াশ ও গুরুদাসপুর উপজেলা দুটির সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। সাত কোটি তের লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত গুরুদাসপুর-তাড়াশ মা জননী সেতু গণমৈত্রী সড়ক ও মনোরম দুই লেনবিশিষ্ট সেতু এই এলাকাকে চলনবিলের দর্শনীয় স্থানের মর্যাদা দান করেছে।
জানা যায়, এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ এ বিলের প্রাণকেন্দ্র বিলশাকে বলা হয় চলনবিলের হৃদপি-। এটি পার্শ্ববর্তী তাড়াশ, সিংড়া এবং গুরুদাসপুর উপজেলার প্রায় জিরো পয়েন্টে অবস্থিত। বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের কাছিকাটা পয়েন্ট থেকে উল্লিখিত স্থানের দূরত্ব মাত্র ৮ এবং গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় থেকে ৫ কিলোমিটার মাত্র। এ বিলকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠা ‘চলনবিল যাদুঘর’ উল্লিখিত গ্রামগুলোর পাশেই অবস্থিত।
চলনবিলের এ পয়েন্টে এসে দর্শনার্থীরা বিল দর্শনের পাশাপাশি যাদুঘর দেখে এ বিলের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে অবগত হবার সুযোগ পাচ্ছেন। যে কারণে সব ঋতুতে সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন চলনবিলের বিলশা পয়েন্টে।
চলনবিলে ব্যক্তি উদ্যোগে বিলশা বাজার সংলগ্ন বিলের মাঝখানে গড়ে উঠেছে স্বর্ণদ্বীপ নামে একটি ক্ষুদ্র বিনোদন কেন্দ্র। পাশেই রয়েছে ঐতিহ্যবাহী চলনবিল জাদুঘর। যেখানে রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যের নানা দর্শন। উত্তর পাশে রয়েছে সিংড়া উপজেলার বিখ্যাত ঘাসি দেওয়ানের মাজার। পূর্বে রয়েছে তাড়াশের জমিদার বাড়ি এবং নওগাঁর শাহ শরিফ জিন্দানী (রহ.) মাজার শরিফ।
গুরুদাসপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও ফাহমিদা আফরোজ বলেন, দেশের নানা প্রান্ত থেকে বর্ষায় চলনবিলে নির্মল আনন্দ উপভোগ করতে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ। চলনবিল অধ্যুষিত এলাকার মানুষ অনেক আনন্দময় ও জনবান্ধব। বর্তমানে প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের আগমন ঘটে, চলনবিলের সৌন্দর্য আর উন্নত সব স্থাপনাকে এক পলক দেখার জন্য।