
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক মোহনের জানাজা নামাজ শেষে দাফন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বাদ যোহর বিন্দুবাসিনী স্কুল মাঠে তার জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরআগে গত সোমবার বিকালে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার দেওলী এলাকায় নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য শেষ করে এলাসিনে আরেকটি প্রচারণায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে গাড়িতে তার হার্ট অ্যাট্যাক হয়। এ অবস্থায় টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডা. মাহমুদুল আলম জানান, গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হামিদুল হক মোহনকে নিয়ে এলে ইসিজি করার পর তারা দেখতে পান হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। দেলদুয়ার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এসএম ফেরদৌস জানান, হামিদুল হক মোহন এবার টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলেন। এ কারণে কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় জনসংযোগ করার জন্য সভা-সমাবেশ করছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার দেলদুয়ার উপজেলার দেওলী এলাকায় জনসভা শেষ করে এলাসিন এলাকায় অন্য একটি প্রচারণায় অংশ নিতে যাওয়ার পথে তার হার্ট অ্যাটাক হয়।
হামিদুল হক মোহন ১৯৫২ সালের ৮ আগষ্ট টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার মঙ্গলহোড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মরহুম আইনউদ্দিন আহমেদ ছিলেন পাথরাইল ইউনিয়ন পরিষদের দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যান ও সমাজসেবক। তার শিক্ষাজীবন শুরু টাঙ্গাইল শহরে। পরে বিন্দুবাসিনী বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও জামুর্কী নবাব স্যার আব্দুল গণি উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। এসএসসি, এইচএসসি ও স্নাতক (১৯৬৮) সম্পন্ন করেন সা’দত কলেজ থেকে।
মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে তিনি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশ নেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইল হাই কমান্ডের সদস্য হিসেবে সাহসিকতার পরিচয় দেন। স্বাধীনতার পর নির্বাচিত হন বিআরডিবি টাঙ্গাইল ও দেলদুয়ারের চেয়ারম্যান। তিনি শহিদ জিয়াউর রহমানের আমলে ‘দূতপুল’ -এর সদস্য হিসেবে উপমন্ত্রীর মর্যাদা লাভ করেন। তিনি টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে টানা ১৭ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নিজ গ্রাম মঙ্গলহোড়ে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সাত বার দায়িত্ব পালন করেছেন পাথরাইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে। একই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। তার তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠেছে ফাজিলহাটি তমিজ উদ্দিন গার্লস হাইস্কুল, বরুহা হাইস্কুল, আটিয়া শাহানশাহী গার্লস হাইস্কুল। তাছাড়া তিনি ছিলেন টাঙ্গাইল নাট্যমহলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সরগম’-এর অন্যতম চালিকাশক্তি। তিনি টাঙ্গাইল জেলা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি, টাঙ্গাইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রথম নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান এবং দীর্ঘদিন টাঙ্গাইল জেলা ফুটবল লীগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি ১৯৭১ সালে বিয়ে করেন ভাষাসৈনিক সৈয়দ আব্দুল মতিনের কনিষ্ঠ ভগ্নি নুরুন্নাহার পুটিকে। মৃত্যুকালে তিনি পাঁচ সন্তান রেখে গেছেন। তারা হচ্ছেন- নিপা হক, মিল্টন হক, হাছিনা আফরোজ দিনা, হামিদা আফরোজ ও নাজমুল হক বাবু।