ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

চলনবিলে মাছ ধরার উপকরণ বিক্রি জমে উঠেছে

চলনবিলে মাছ ধরার উপকরণ বিক্রি জমে উঠেছে

পাবনার চাটমোহর সর্ববৃহৎ অমৃতকুন্ডা হাটে মাছ ধরার উপকরণ খৈলশুনি কেনাবেচা জমে উঠেছে। চলনবিলাঞ্চল থেকে বর্ষার পানি নামতে শুরু করেছে। এ সময় মাছ ধরার নানা উপকরণ দিয়ে মাছ শিকারে মেতে ওঠেন এ অঞ্চলের মানুষ। এ অঞ্চলের মাছ ধরার অন্যতম উপকরণ খৈলশুনি। চাটমোহরসহ চলনবিল অঞ্চলের মাছ ঘরার অন্যতম উপকরণ খৈলশুনির (কোথাও নাম ছাই) হাট গুলো জমে উঠেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, রেলওয়ে খেলার মাঠে বসা খৈলশুনির হাটে কেনা-বেচা বেশ ভালই চলছে। সপ্তাহের প্রতি রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ হাটে খৈলশুনি কেনাবেচা হয়।

এছাড়া, তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ হাট, গুল্টা হাট, রায়গঞ্জের নিমগাছীর হাট, সলঙ্গা হাট, চাটমোহরের ছাইকোলা হাট, মির্জাপুর হাট, গুরুদাসপুরের চাচকৈড় হাটসহ চলনবিল অঞ্চলের অন্যান্য হাটেও খৈলশুনি পাইকারি ও খুচরা বেচা-কেনা হয়। পাবনা নাটোর সিরাজগঞ্জসহ দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে পাইকাররা এসব হাটে এসে খৈলশুনী কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করেন। তবে খৈলশুনি পরিবহনের সময় আঞ্চলিক সড়ক-মহাসড়কে বিভিন্ন সংগঠনের নামে চাঁদা দিতে হয় বলে জানান একাধিক ব্যবসায়ী ও পরিবহন মালিক। বর্ষায় খেতে কাজ না থাকায় চলনবিল অঞ্চলের অভাবী হাজার হাজার মানুষ জীবন-জীবিকার জন্য মাছ ধরার কাজে সম্পৃক্ত হন। তাই বর্ষায় খৈলশুনির কদরও বেড়ে যায়। মাছ ধরার এ উপকরণ তৈরির কাজ সারা বছর চললেও প্রতি বছর এ সময় খৈলশুনী তৈরির কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। জৈষ্ঠের শেষ থেকে এর পূর্ণ মৌসুম শুরু হয়ে যায়। বাঁশ, তালের আঁশ আর লই দিয়ে তৈরি মাছ ধরার যন্ত্র খৈলশুনী তৈরি করে এখন স্বাচ্ছন্দে জীবন কাটাচ্ছেন চলনবিল এলাকার চাটমোহর, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, তাড়াশ, সিংড়াসহ এর আশপাশ এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। আর এ যন্ত্র দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ ধরে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করছেন মৎস্যজীবীরা।চলনবিল এলাকায় বংশানুক্রমে খৈলশুনি তৈরির কাজের সঙ্গে জড়িত সবাই। চাটমোহরের ধরইল মৎস্যজীবি পাড়ার রফিক জানান, খৈলশুনী তৈরি তার পৈত্রিক পেশা। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সপ্তাহে তিনি ছয়-সাতটি খৈলশুনি তৈরি করতে পারেন। তার পাড়ার ৪০০ পরিবারের মধ্যে প্রায় ৩৫০ পরিবার এ পেশায় সম্পৃক্ত।

তিনি আরও জানান, নিজের জমাজমি নাই। খৈলশুনি তৈরি করে দিনাতিপাত করছি। অন্যের বাড়িতে কাজে যেতে হচ্ছে না। আকার ভেদে খৈলশুনীর দামে রয়েছে অনেক তারতম্য। ৪০০ থেকে ২ হাজার টাকা জোড়া পর্যন্ত বিক্রি হয় খৈলশুনী। প্রতি জোড়ায় তাদের ১ থেকে ২০০ টাকার মতো লাভ থাকে। বড়াইগ্রামের শহিদুল ইসলাম জানান, প্রথমে বাঁশ চিরে খিল তোলা হয়। সেগুলো শুকিয়ে নেওয়া হয় হালকা রোদে। পঁচানো তালের ডাগুরের আঁশ দিয়ে বাঁশের খিল বান দেওয়া হয়। এসব কাজে গৃহবধূ থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীরাও পরিবারকে সহায়তা করে থাকে।

চলনবিলাঞ্চলের ধারাবারিষা, উদবাড়িয়া, সিথুলী, তালবাড়িয়া, সিরামপুর, দারিকুশি, চন্ডিপুর, সোনাবাজুসহ বিভিন্ন গ্রামে এখন দিন-রাত চলছে খৈলশুনী তৈরির কাজ। তিনি আরও জানান, গত ১৫ বছর যাবত এ পেশায় সম্পৃক্ত আছেন। প্রতি জোড়া খৈলশুনী চার থেকে পাঁচ’শ টাকায় বিক্রি হয়। পাবনার বিভিন্ন এলাকাসহ সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও ঢাকার ব্যাপারীরা কিনে নিয়ে যান এগুলো। সব মিলিয়ে এতে আমাদের সংসার চলে যায়। বাঁশনির্ভর এ শিল্পে সম্পৃক্ত হয়ে উৎপাদনকারী, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা, ব্যবহারকারীরাসহ সাধারণ মানুষ প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছেন। ছোট মাছের চাহিদার একটা বিরাট অংশ মেটাচ্ছে এ শিল্প। তবে ক্রেতারা অভিযোগ করেন চাটমোহরের অমৃতকুন্ডা হাটসহ অধিকাংশ হাটে প্রতিটি খৈলশুনির জন্য অতিরিক্ত খাজনা আদায় করেন ইজারাদার, যা অত্যন্ত অযৌক্তিক। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে নিয়মমাফিক খাজনা আদায় করার দাবি জানিয়েছেন ক্রেতারা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত