
কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর তীরে এরইমধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালান হয়। এখন উচ্ছেদ হওয়া তীরের জমিতে নদী বন্দরের সীমানা নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ নিয়ে মুখোমুখি জমির মালিক দাবি করা বাসিন্দারা ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। এমতাবস্থায় গতকাল শনিবার দিনব্যাপী সড়ক অবরোধ, টায়ারে আগুন, এমনকি গাছ ফেলে বিক্ষোভ শুরু করেছেন বাসিন্দারা। এ সময় পরিবেশ উপদেষ্টার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বিআইডব্লিউটিএ সাড়ে ৪০০ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদী তীরের ৬৩ একর জমি দখলমুক্ত করে। এরপর উচ্ছেদ শেষে বিআইডব্লিউটিএ স্থায়ীভাবে দখলরোধে সীমানা চিহ্নিত করতে উদ্যোগী হয়েছে।
২০১৯ সালের যৌথ জরিপ ম্যাপ অনুযায়ী- তীর এলাকায় সীমানা পিলার স্থাপন, সাইনবোর্ড বসানো আর কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ ৩ ডিসেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে চায় বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই উত্তেজনা দেখা দিয়েছে বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায়। গতকাল সকাল থেকে জমির মালিক দাবি করা নারী-পুরুষ সড়ক অবরোধ, টায়ারে আগুন, এমনকি গাছ ফেলে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। তাদের অভিযোগ- বিআইডব্লিউটিএ তাদের ব্যক্তিগত জমিতে জোর করে সীমানা নির্ধারণ করতে চাইছে। তারা আদালতের আদেশও মানছেন না। বিক্ষোভ অংশ নেওয়া নারী পারুল বলেন, এখানে আমাদের জমি রয়েছে। নিজেদের জিমি থেকে কয়েকবার আমাদের উচ্ছেদও করা হয়েছে। আমরা আদালতের দারস্থ হয়েছি। এখানে কোনো ধরনের স্থাপনা বসানোর বিরুদ্ধে আদালতের আদেশও আছে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ কিভাবে এখানে কাঁটাতার-পিলার দেয়। এটা আমরা মানি না।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, তারা তো আদালতের আদেশ মানছেন না। কোনো কাগজপত্রও দেখছে না। নিজেদের মতো করে কাজ করছে। এটা তো দেখতে হবে। কক্সবাজার (কস্তুরাঘাট) নদী বন্দরের পোর্ট অফিসার আব্দুল ওয়াকিল বলেন, আজকের আন্দোলনে যারা অংশ নিচ্ছেন। রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে খুরুশকুলের রাস্তা অবরোধ করেছেন। তাদের মধ্যে কিছু নারী ও অল্পসংখ্যক পুরুষ আছেন। লক্ষ্য করেছি, তাদের বেশিরভাগই ভাসমান মানুষ। কারও কাছে বৈধ কাগজপত্র নেই। বোঝা যাচ্ছে, হয়তো কেউ তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে এখানে এনেছে। বিষয়টি গোয়েন্দারা যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত করবেন।
আব্দুল ওয়াকিল বলেন, আদালতের যে আদেশের কথা বলা হচ্ছে তা বন্দরের ওপর, বন্দরের জরিপ কাজের ওপর কিংবা বন্দরের সীমানার ওপর নেই। শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট দাগ নম্বরের জমির ওপর, যেখানে ব্যক্তিগত মালিকানা দাবি করা হয়েছে। এসবের ওপর আদালতের আদেশ আছে। সেটা ম্যাজিস্ট্রেট ও এসি ল্যান্ডের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা পরিহার করব এবং বাকি জমিতে কাজ করব। সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে যেন কোনো সহিংসতা না হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয়। পোর্ট অফিসার আব্দুল ওয়াকিল আরও বলেন, সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমরা কাউকে উচ্ছেদ করছি না। এই মুহূর্তে কোনো উচ্ছেদ অভিযানও পরিচালিত হচ্ছে না। আমরা শুধু ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে এলাকার সীমানা উদ্ধার করেছিলাম। সেই অংশে পিলার বসাব। কারণ আমারা উদ্বেগে রয়েছি, কারণ পিলার না বসালে, সীমা দৃশ্যমান না থাকলে, ২০২৩ সালের মতো কিছু ভূমি দখলদার আবার এসে জায়গা দখলের চেষ্টা করতে পারে।