এবার ভোটার তালিকা হালনাগাদে ১৭ বছর বয়সি এবং ভোটারযোগ্য বাদপড়া মিলিয়ে প্রায় অর্ধ কোটি নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করেছে নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি বিদ্যমান তালিকা থেকে বাদ যাবেন- এমন ১৫ লাখের বেশি মৃত ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচিতে প্রায় ৫০ লাখ নতুন ভোটার যুক্ত হতে যাচ্ছেন। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। ইসি সচিব বলেন, এবারের হালনাগাদে ৪৯ লাখ ৭০ হাজার ৩৮৮ জন নতুন ভোটার যুক্ত হচ্ছেন। তবে নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য ছিল ৬১ লাখের কিছু বেশি। ভোটার তালিকা থেকে মৃত ভোটার বাদ পড়েছেন ১৫ লাখ ২৩ হাজার। শতকরা হিসাবে ১.৭৭ শতাংশ। নারী ভোটার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবার ১৬ লাখ নারী ভোটার হতে নিবন্ধন করেছেন। চলমান হালনাগাদ কর্মসূচিতে যারা বাদ পড়েছেন তাদেরও যুক্ত করা হবে তালিকায়। নিবন্ধন চলবে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। এছাড়া অনলাইন আর আঞ্চলিক কার্যালয়ে ভোটার হওয়ার যোগ্যরা নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে কোনো তথ্য-সংগ্রহকারী কোনো বাড়িতে না গেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে ১৭ বছরের কেউ ভোটার হয়েছে কি না এমন তথ্য নেই ইসির কাছে। তবে নির্দিষ্ট করে কেউ জানালে কমিশন বিষয়টি দেখবে বলেও জানান তিনি। ভোটার হালনাগাদে অর্ধ কোটি নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ তালিকা থেকে বাদ দেয়ার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে ১৫ লাখের বেশি মৃত ভোটারের তথ্য।
তিনি আরো বলেছেন, গত সোমবার পর্যন্ত বাদ পড়াদের (অতীতে যারা ভোটার হতে পারেননি) মধ্যে ভোটার বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ ও নতুন ভোটার (যারা আগামী বছর ১ জানুয়ারি আঠারো বছর বা ভোটারযোগ্য হবেন) বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। মোট ভোটার বৃদ্ধির হার ৪ শতাংশ। ইসির তথ্য অনুযায়ী, চলমান ভোটার হালনাগাদ কর্মসূচিতে ৪৯ লাখ ৭৬ হাজার ৮৪৫ জনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যদিও লক্ষ্য ছিল ৬১ লাখের ৮৯ হাজার ৩৭৫ জন।
বাদপড়া ভোটার : ৩১ লাখ ২৭ হাজার ৫১৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৪,৬৪,৩৮০ জন, নারী ১৬,৬২,৯৯২ জন এবং হিজড়া ১৪৭ জন।
নতুন ভোটার : ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯,৫৩,৩১২ জন; নারী ৮,৯৫,৭৭৬ জন এবং হিজড়া ২৩৮ জন।
মৃত ভোটার কর্তন : ১৫ লাখ ২৭ হাজার ৪২৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮,৭৩,৪২৯ জন; নারী ৬,৫৩,৪০৯ জন এবং হিজড়া ৫৮৮ জন।
গত ২০ জানুয়ারি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছিল নির্বাচন কমিশন। গত সোমবার তথ্য সংগ্রহ আজ বুধবার শুরু হচ্ছে ছবি তোলা, আঙুলে ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেয়ার কাজ, যা চলবে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। এসময়ের মধ্যে স্থানীয় নিবন্ধন কেন্দ্রে গিয়ে ভোটার হতে পারবেন বাদপড়ারা। ছবি তোলার কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে সরাসরি ফরমণ্ড২ পূরণ করে ছবি ও আঙুলের ছাপ দিয়ে ভোটার হওয়া যাবে। ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি অথবা তার আগে যাদের জন্ম, যারা বাদ পড়েছেন, তাদের ভোটার তালিকাভুক্তি ও মৃত ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ এবং আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণে স্থানান্তর করার তথ্য থাকবে হালনাগাদে।
ইসির এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীর বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হলেও কেউ বাদ পড়লে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে স্থানীয় নিবন্ধন কেন্দ্রে গিয়ে ভোটার হতে পারবেন। ২০২৪ সালের ২ মার্চ প্রকাশিত চূড়ান্ত তালিকায় ভোটার ছিলেন ১২ কোটি ১৮ লাখের বেশি। গত ২ জানুয়ারি গত বছরের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে ইসি। তাতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫২ জনের নাম।
তাতে ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২ জন। আগামী ২ মার্চ তাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে। এবার হালনাগাদে যারা যুক্ত হচ্ছেন, তাদের কাজ জুনের মধ্যে শেষ করতে চায় ইসি। সেক্ষেত্রে নতুনদের যোগ করে এবং মৃতদের বাদ দিয়ে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে চূড়ান্ত ভোটার সংখ্যা জানা যাবে। ডিসেম্বরে ভোট হলে তথ্য সংগ্রহ করা অনেকেই ভোটার তালিকাভুক্ত হতে পারবে না। আর ২ জানুয়ারির পরে ভোট হলে নতুন করে যাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তাদের সবাই তালিকাভুক্ত হতে পারবে।