
জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আজ শুক্রবার আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি)।
তরুণদের রাজনৈতিক দলটির আহ্বায়ক পদে নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব পদে আখতার হোসেনের নাম চূড়ান্ত হয়েছে। এ ছাড়া নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে প্রধান সমন্বয়কারী, সামান্তা শারমিনকে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক, হাসনাত আবদুল্লাহকে দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক, সারজিস আলমকে উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক, আবদুল হান্নান মাসউদকে যুগ্ম সমন্বয়ক ও সালেহ উদ্দিন সিফাতকে দপ্তর সম্পাদক পদে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যৌথ বৈঠক হয়। সেখানে এসব সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে অংশ নেওয়া জাতীয় নাগরিক কমিটির দায়িত্বশীল চারজন নেতা দলের নাম ও যেসব পদে নেতৃত্ব চূড়ান্ত হয়েছে, সেগুলো নিশ্চিত করেছেন। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় এসব পদে নেতৃত্ব এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
আজ শুক্রবার জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করবে। ওইদিন বিকেল ৩টার রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে দলটির ঘোষণা দেয়া হবে।
এদিকে নতুন দলের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি চলছে। সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মানিক মিয়া এভিনিউতে বেরিকেটসহ স্টেজ নির্মাণের কাজ চলছে। পাশাপাশি ওয়াশরুম ও বিভিন্ন বুথ নির্মাণেরও কাজ চলছে। সন্ধ্যা থেকে কাজ পুরোদমে শুরু হবে বলেও জানা গেছে।
জানা গেছে, ছাত্রদের এই জমায়েতে মেডিকেল টিম, ওয়াশরুম, পুলিশ বুথ, পানির ব্যবস্থা থাকবে। একইসাথে ব্যাকস্টেজে মেয়েদের জন্য অন্য বুথের ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি ভিআইপিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। নতুন এই রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন জুলাই আন্দোলনে আহত ও নিহত পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও থাকবেন। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদেরও যোগ দেয়ার কথা রয়েছে।
পুনর্গঠিত হবে নাগরিক কমিটি : নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। শুক্রবার দলের আত্মপ্রকাশের পরও জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি থাকবে। নেতারা জানান, এই প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রম রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারের বর্তমান কার্যালয় থেকেই পরিচালিত হবে। নতুন দলের কার্যালয় হবে আলাদা স্থানে।
বাংলামোটরের কার্যালয়ে গত বুধবার নাগরিক কমিটির একটি বৈঠক হয়। সেখানে নাগরিক কমিটির ভবিষ্যৎ কার্যক্রম বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো হলো এক. আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক ব্যতীত জাতীয় নাগরিক কমিটির অবশিষ্ট অর্গানোগ্রাম, নির্বাহী কমিটি, সেল ও সার্চ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দলে যোগদানকারী সব কেন্দ্রীয় সদস্যের সদস্যপদ শুক্রবার দল ঘোষণার আগপর্যন্ত বহাল থাকবে। রাজনৈতিক দলে অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সদস্যের নাগরিক কমিটির সদস্যপদ বাতিল হিসেবে গণ্য হবে। দলে যোগ দিচ্ছেন না, এমন সদস্যদের সদস্যপদ বহাল থাকবে।
নেতারা জানান, এই প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রম রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারের বর্তমান কার্যালয় থেকেই পরিচালিত হবে। নতুন দলের কার্যালয় হবে আলাদা স্থানে।
দুই. আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখপাত্র ও মুখ্য সংগঠক ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী ১৫ দিন অনানুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের উদ্যোগে নাগরিক কমিটির তিনজনের আনুষ্ঠানিক ফোরাম পরবর্তী অর্গানোগ্রাম নির্ধারণ করবে।
তিন. ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন দল আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে নাগরিক কমিটির রাজনৈতিক দল গঠনের ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পন্ন হবে। দল গঠনের পর থেকে নাগরিক কমিটি ‘সিভিল-পলিটিক্যাল’ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে থেকে যাবে। আর কোনো দল গঠনের উদ্যোগ নেবে না।
নাগরিক কমিটি থেকে দলের বিভিন্ন পদের জন্য ১২০ জনের একটি তালিকা করা হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট একজন নেতা জানিয়েছেন। যাঁরা দলে যাবেন, তাঁদের বাইরে থাকা অন্যদের নিয়ে কমিটি পুনর্গঠিত হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এসব বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, কেউ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাইলে আমরা অবশ্যই তাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু ক্ষমতার ছত্রছায়ায় কিংবা ক্ষমতার প্রভাব বলয়ে থেকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা হলে জনগণ তা ভালো চোখে দেখবে না। কেউ নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাইলে ক্ষমতার বাইরে থেকে জনগণের মধ্য থেকে করা উচিত।
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান ক্বারি আবু তাহের নতুন দলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সমন্বয়ে নতুন দল বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী এবং গণতন্ত্রের জন্য কাজ করবে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও বৈষম্যের ঠাঁই যাতে বাংলাদেশে না হয়।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ স্বপ্ন দেখছে, তরুণরা তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কাজ করবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শাসনের প্রতিভূ শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। যে কোনো ঐতিহাসিক ঘটনার পর জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রকাশিত হয়। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের মনে সেরকম নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। রক্তের মধ্য দিয়ে গঠিত নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা সামনে নিয়ে এ দলটি কাজ করবে।